মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুযোগটা নিন by আতাউস সামাদ

ইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং খাদ্যবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোজ্যপণ্য পরিস্থিতি দেশের সব মানুষকেই চিন্তিত করে রেখেছে। মারাত্মক অপরাধ, যথা-খুন, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি দৃশ্যতই বেড়ে চলেছে। এক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে এ কারণে যে পেশাদার খুনি, ছিনতাইকারী আর ডাকাতদের পাশাপাশি শিক্ষিত তরুণদের একটি অংশ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগ ও যুবলীগের প্রভাবশালী গোষ্ঠী হিসেবে প্রকাশ্যে নানারকম জঘন্য অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। তদুপরি মন্ত্রী পদমর্যাদায় নিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীর কোনো কোনো উপদেষ্টার, বিভিন্ন মন্ত্রীর আত্মীয়দের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য ও তাদের সন্তানদের অপরাধ-প্রীতি বা অপরাধ-সংশ্লিষ্টতা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার কঠিন কাজটিকে জটিল ও কঠিনতর করে ফেলেছে।

কিছুদিন ধরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সন্ত্রাসীরা জনগণকে কোথাও ছিন্ন মস্তক আবার কোথাও কবন্ধ দেহ উপহার দিয়ে আসছিল। যেসব এলাকায় এগুলো রেখে এসেছে হত্যাকারীরা, সেসব অঞ্চলের মানুষের শিরদাঁড়া দিয়ে ভয়ে শৈত্যপ্রবাহ ঘটেছে। এখন তারা নির্ঘুম রজনী যাপন করছে। টেলিভিশনের পর্দায় ও খবরের কাগজের পাতায় দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন মাথা ও মস্তকহীন দেহের ছবি দেখে দূরের আমরাও শিউরে উঠেছি। অবশ্য এসব ঘটনা আমাদের একইসঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছে রাজধানী ঢাকায় কয়েক মাস ধরে প্রায় প্রতিদিন সন্ত্রাসীরা গুলি করে মানুষ হত্যা করছে। তারা এসব অপরাধ করেছে দিনে এবং রাতে, অলিতে-গলিতে, সড়কে, বাজারে এবং ব্যবসায়িক কার্যালয়ে। তাদের শিকারে পরিণত হচ্ছেন শিল্পপতি থেকে দোকানের সাধারণ কর্মচারী। অতিসম্প্রতি পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে একটি পুরো হিন্দু পরিবারকে অপহরণ করে আওয়ামী লীগ সমর্থক কয়েক যুবক। সন্দেহ করা হচ্ছে, ওই পরিবারের বসতবাটিটি জবরদখল করার জন্য অপহৃত ব্যক্তিদের পরপারে পাঠিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল অপরাধী যুবকদের। ওই ঘটনায় এলাকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মন যে আতঙ্কে ছেয়ে যায় তা দূর করতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিজে সেখানে গিয়ে তাদের আশ্বস্ত করে আসেন। ভাগ্যিস পুলিশ সেদিন তৎপর হয়ে দিনের মধ্যেই অপহৃতদের উদ্ধার করতে পেরেছিল। না হলে প্রতিমন্ত্রীর সেখানে যাওয়ার সুযোগটাও হয়তো হতো না। এদিকে গত ২৭ আগষ্ট রাজবাড়ী জেলার উড়াকান্দা বাজারে একটি ক্লাবে বসে ইফতার করার সময় বড়াট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম মোল্লাসহ তিনজনকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছে, ২০-২২ জনের একদল সন্ত্রাসী নদীপথে ট্রলারে করে এসে ব্রাশ ফায়ারে এদের হত্যা করে চলে যায়। এই হত্যাকান্ডের জন্য ওই এলাকার বাম চরমপন্হীদের সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে এও সন্দেহ করা হচ্ছে, নিহত আওয়ামী লীগ নেতা একসময় চরমপন্হীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন কিন্তু ইদানীং তাদের চাঁদাবাজিতে বাধা দিচ্ছিলেন। তার পরিবার অবশ্য জনাব সালামের সন্ত্রাসী-সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে। জনাব সালামকে খুন করার জন্য আক্রমণ করার ধরন (ষ্টাইল) চারদলীয় জোট আমলে টঙ্গীতে জনপ্রিয় এবং দলে ও বাইরে শ্রদ্ধাভাজন আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাষ্টারকে খুনের কথা মনে করিয়ে দেয়। দুই ঘটনাতেই সামাজিক একটি অনুষ্ঠানের মাঝে বা শেষে আততায়ীরা দলবেঁধে অতর্কিতে হাজির হয়েছে ও নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। তার মানে কি আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে যে, অতীতে যেমন ঘটেছে, বর্তমানে তেমনই ঘটছে এবং ভবিষ্যতেও তা-ই হবে? এদিকে সম্প্রতি অপরাধের নতুন মাত্রা যোগ হতে দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে আমাদের একেবারে হতভম্ব করে দিয়েছে গত ২৪ আগষ্ট ঢাকায় আবদুল গণি রোডে সরকারের খাদ্য অধিদফতরের অফিস 'খাদ্য ভবন'-এর সামনে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকদের মধ্যে মারামারি। ঘটনাটি যেখানে ঘটে, তার একদিকে বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয় এবং অদূরে জাতীয় প্রেসক্লাব। সচিবালয়ের জন্য অনেক পুলিশর্-যাব সদস্য আশপাশে ছিলেন। খাদ্য ভবনে সেদিন গুদাম মেরামতের কাজের জন্য টেন্ডার জমা দেয়ার তারিখ ছিল বলে 'টেন্ডারবাজি' ঠেকাতে আলাদা পুলিশও ছিল। তবু সকাল থেকে ছাত্রলীগের একদল 'সক্রিয়তাবাদী' দফতরের প্রবেশপথ দখলে রেখে তাদের পছন্দের লোকদের টেন্ডার জমা দিতে দেয় আর অন্যদের তাড়িয়ে দেয়। দুপুরের দিকে যুবলীগ সমর্থিত ঠিকাদাররা 'যুবদের' পাহারায় টেন্ডার জমা দিতে এলে একই দলের অনুগত দু'পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। খানিকক্ষণ পর সম্ভবত সমঝোতার মাধ্যমে পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়, তবে দুই 'লীগের' টেন্ডার-সৈনিকরা যেভাবে রাস্তায় দাপাদাপি করে যানবাহনের ওপর লাফিয়ে উঠে নিচে দাঁড়ানো প্রতিপক্ষকে লাঠি ও লাথি মেরে ঘায়েল করতে চায়, তার যেসব ছবি সাংবাদিকরা তুলেছেন ও যার কিছু কিছু খবরের কাগজে ছাপা হয়েছে, সেগুলো দেখলে বড়ই দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় এই ভেবে যে, ওরকম সুরক্ষিত এলাকায় পুলিশের নজরদারিতে থেকেও যদি লোকজনকে এভাবে হামলা করতে পারে কেউ, তবে অমন শক্তিধররা আম-জনতাকে আমলে নেবে কেন অথবা তাদের শান্তিতে থাকতে দেবে কেন? টেন্ডার জমা দেয়া নিয়ে ছাত্রলীগ অথবা যুবলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী উপদলের দ্বন্দ্ব ঘটছে প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও। দু-এক জায়গায় তাদের প্রতিপক্ষও দাঁড়িয়েছে। এদের সংঘাত দেশটাকে যেন এক ধরনের যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে। রাজবাড়ীতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহতদের মাটিতে পড়ে থাকা রক্তাক্ত লাশ ও খাদ্য ভবনের সামনে নির্লজ্জ মারামারির পর অন্য যে ঘটনার ছবি দেখে আমরা স্তম্ভিত হয়েছি, সেটি হলো- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ। গত ২৭ আগষ্ট যুগান্তর পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত এ ঘটনার ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কয়েকটি ছেলে আরেকটি ছেলেকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে আর আহত ছেলেটি রক্তাক্ত দেহে মাটিতে পড়ে আছে। আমাদের তরুণরা এক সময় নিজেদের আদর্শবাদী বলে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তারা এখন অবৈধ চাঁদা আদায়ের জন্য অন্যদের তো বটেই, নিজেরাও একে অপরকে আহত করছে, এমনকি হত্যাও করছে। মুক্তিযুদ্ধের দলটির নেতারা এই অবক্ষয় মেনে নিচ্ছেন এটা বড়ই বেমানান। দেশের জন্য বিপজ্জনকও বটে। ১৯৮২ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করে দেশে সামরিক আইনের শাসন জারি করার সময় তার বিভিন্ন কারণের মধ্যে একটি বলেছিলেন, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি। তার উদাহরণস্বরূপ তিনি দেখিয়েছিলেন যে, এক প্রতিমন্ত্রীর বাড়ি থেকে হত্যার আসামি এক সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে এই একই লে. জে. (অব.) এরশাদ সাহেবের আমলে আওয়ামী লীগ নেতা জনাব ময়েজউদ্দীনের হত্যামামলার রায়ের দিন ঢাকা জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে বোমা পড়েছিল এবং কয়েক বছর পর ওই হত্যাকান্ডের জন্য সাজাপ্রাপ্ত প্রধান আসামিকে রাষ্ট্রপতি এরশাদ মুক্তি দেন এবং একটি জনসভায় 'আমার ভাই' বলে পরিচয় করিয়ে দেন। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কয়েকজন সাংবাদিক অনুরোধ করেছিলেন শিক্ষাঙ্গনে সহিংসতা বন্ধ করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ ও ব্যবস্থা নিতে। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, "কোনো শিক্ষাঙ্গনে শান্তি আনার জন্য পুলিশ গুলি চালালে আপনারা বলবেন-'খালেদা জিয়ার পুলিশ' ছাত্র হত্যা করেছে।" তিনি সে সময় কড়া ব্যবস্থা না নিয়ে জাতীয় সংসদে একটি কমিটি করেছিলেন ছাত্র-সহিংসতা বন্ধ করতে। সে কমিটি কোনো ফল দেখাতে পারেনি। আর ধীরে ধীরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হয়ে উঠেছিল কসাইখানা। তখন সেখানে ভিন্ন ভিন্ন ছাত্রসংগঠনের মধ্যে লড়াইয়ে যেমন ছাত্ররা মরেছে, তেমনি ছাত্রদলের অন্তর্কলহে খুন হয়েছে বেশ কয়েকজন এবং ছাত্রলীগের অন্তর্দ্বন্দ্বে নিহত হয় অন্তত দু'জন। এর মধ্যে একজন খুন হয় শেখ হাসিনা যখন ছাত্রলীগের সম্মেলনে কেবল বক্তৃতা শেষ করেছেন তারপরই-সম্মেলনের জায়গা থেকে অল্পকিছু দূরে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার কিছুদিনের ভেতর বিভিন্ন জায়গায় দলের কয়েকজন নেতা ও কিছু স্থানীয় বা আঞ্চলিক নেতা নিজেদের 'গডফাদার' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। এদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চারদিকে সমালোচিত হতে থাকলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেই বসেন 'নটিবয়দের' তার প্রয়োজন আছে। এসব 'খ্যাতিমানদের' যন্ত্রণায় যখন দেশের নানা জায়গা আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে, কয়েকজন সাংবাদিক খুন হওয়ায় গণমাধ্যম কাজ করছে ভয়ের মধ্যে, সে সময় শুরু হলো একের পর এক বোমা হামলা। সে সময় এর জন্য দোষ চাপানো হচ্ছিল বিরোধী দল বিএনপির অথবা গোপন বাম চরমপন্হীদের ওপর। এখন প্রকাশ পাচ্ছে, জঙ্গি ইসলামী সংগঠন এর অনেকের জন্য দায়ী ছিল। অপশাসন ও দুঃশাসনের সমালোচনা কাঁধে নিয়ে আওয়ামী লীগ ২০০১-এর সংসদ নির্বাচনে হেরে গেল। জয়ী হলো বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। এদের ২০০১-০৬ শাসনামল আইন-শৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতির জন্য চিহ্নিত থাকবে। ওই আমলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলা ও এতে আইভি রহমানসহ ২৬ জন নিহত হওয়া, গ্রেনেড আক্রমণ করে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াকে খুন করা, তদানীন্তন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হজরত শাহ জালালের দরগায় প্রবেশপথে গ্রেনেড হামলা, দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা গুপ্তহত্যার শিকার হওয়া, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বাংলাভাই নাম নিয়ে সিদ্দিকুর রহমান নামে এক মুসলিম জঙ্গির ত্রাসের রাজত্ব কায়েম, জেএমবির দেশজুড়ে একই সময়ে বোমা ফাটানো ও পরে বিভিন্ন জায়গায় তাদের জঙ্গিদের দ্বারা আদালতে বোমা হামলা, বিচারক হত্যা, সাম্পান বোঝাই সামরিক অসত্র ও ট্রাকভর্তি রাইফেলের গুলি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া-সব মিলিয়ে আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে দেশে একটা অন্ধকার সময় এনে দেয়। ওই আমলেই জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমানসহ আরও কয়েকজন এবং হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ধরা পড়ে। কিন্তু বেশ কয়েকটি তদন্তের ক্ষেত্রে টালবাহানা ও ব্যর্থতার দরুন জোট সরকার তাদের দুর্নাম কাটিয়ে উঠতে পারেনি। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা অবনতির ক্ষেত্রে এরশাদ আমল যদি কলিযুগের বিকাল হয়ে থাকে, তাহলে আমরা পরবর্তী সময়ে কলিযুগের সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতে এসে পৌঁছেছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মহাজোট তথা আওয়ামী লীগ সরকার প্রথমেই ধাক্কা খেয়েছে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে, যাতে ৫৬ জন সেনা কর্মকর্তাকে অসহায়ভাবে মৃত্যুবরণ করতে হলো। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে ওই অত বড় অঘটনের পরও যে নির্বাচিত সরকারটি ক্ষমতায় আছে তা যেমন কিছুটা বিস্ময়কর তেমনি শ্লাঘার। সরকারের উচিত এই সুযোগটি আইন-শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যবহার করে নির্বাচিত সরকারের ওপর আস্থা সুদৃঢ় করা। প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার যদি এই কর্তব্য পালন করেন, তাহলে দেশবাসী তাদের সুনজরে দেখবে। আর দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাব। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করার একটি সুবিধাও আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ও তার সরকারের। তা হলো, এখন যারা দেশে আইন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে, তাদের বেশিরভাগই সরাসরি আওয়ামী লীগের লোক। অবশিষ্টদের মধ্যে একটি বড় অংশ দলীয় প্রভাবশালীদের সমর্থনপুষ্ট। কাজেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও দলের প্রভাবশালী নেতারা যদি পরিষ্কার চিত্তে, দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে এসব অপরাধীর প্রতি কঠোর হন, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অবস্থার উন্নতি হবে। এমনকি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি যাতে একেবারে লাগামহীন না হয়ে পড়ে, সেজন্যও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি অবশ্যই প্রয়োজনীয়। খাদ্যমন্ত্রী প্রায় চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন, পথে পথে চাঁদা দিতে হয় বলে মালবোঝাই ট্রাকের ভাড়া বেড়ে যায় অস্বাভাবিকভাবে। আমার দেশ পত্রিকায় গত শুক্রবার (২৮.৮.০৯) প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, মফস্বল থেকে মাছ ও সবজি নিয়ে আসার সময় একেকটি ট্রাক থেকে ২০টি জায়গায় চাঁদা আদায় করে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা। সরকারি গোয়েন্দারাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই মর্মে একটি রিপোর্ট দিয়েছেন, আমার দেশ প্রতিবেদক জানাচ্ছেন। এ ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ করার ক্ষমতা তো সরকারের হাতে। এছাড়াও দেশে মজুতদারি ও কালোবাজারির শাস্তি বিধান করার আইন আছে। সঠিক ক্ষেত্রে সরকার ওই আইন প্রয়োগ করার অধিকার রাখে অবশ্যই। মুক্তবাজার মানে ব্যবসায়ীদের মুনাফা করার আর জনগণের প্রতারিত হওয়ার স্বাধীনতা নয়। মুক্তবাজার অর্থনীতিকেও যে আইন মেনে চলতে হয়, সে উদাহরণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই আছে। কারণ মুক্তবাজার অর্থনীতি হচ্ছে, ব্যবসায় প্রতিযোগিতা করার স্বাধীনতা আর সব প্রতিযোগিতারই আইন-কানুন আছে। আইন প্রয়োগ করবে সরকার, বিচার করবে আদালত। এদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দুর্ভোগ সহ্য করতে না পেরে এক নারী টেলিভিশনের সামনে বললেন, 'আমি আওয়ামী লীগের কর্মী কিন্তু আমাদের কোথায় নিয়ে চলেছে আওয়ামী লীগ সরকার, আমি এর প্রতিবাদ জানাই।' আরেক মাওলানা সাহেব টেলিভিশনে সাহরির অনুষ্ঠান শেষে তার মোনাজাতে দেশের ও দশের জন্য আল্লাহর করুণা ভিক্ষা করার সময় বললেন, 'ইয়া আল্লাহ আপনি দ্রব্যমূল্যকে ঈমানদারদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে এনে দেন যাতে মোমেনগণ সহজে রোজা রাখতে পারেন।' অতঃপর জনমত সম্পর্কে আর কিছু বলার আছে কি? লেখক : সম্পাদক, সাপ্তাহিক এখন

No comments

Powered by Blogger.