জুতার ফ্যাশনে পাথরের কারুকাজ by দিলরুবা সুমী

ছোট ছোট সাদা পাথর দিয়ে ফিতা ও ওপরের অংশে কারুকাজ করা মাঝারি হিলের জুতা ও ফ্লাট স্যান্ডেলই এবার ঈদ ফ্যাশনে মেয়েদের পায়ে বেশি দেখা যাবে। সাদার পরই চলবে সোনালি ও বহুরঙা পাথরের কাজ করা জুতা। আর শুধু চামড়া ও রেক্সিনের মাঝারি সোলের ফ্লাট স্যান্ডেল ও স্যান্ডেল সু থাকবে ছেলেদের পায়ে। কারণ, এ ধরনের জুতাই এবার ঈদ উপলক্ষে শপিংমল ও বুটিক হাউসগুলোয় আনা হয়েছে। গত দু'বছর জনপ্রিয়তা পাওয়া কাচ, পাথর ও কাঠের পুঁতি, প্লাষ্টিকের মোতি, কুন্দন, জরি, চুমকি দিয়ে কাজ করা চাইনিজ নাগরার কালেকশন এবার খুবই কম।

তবে শিশু ও কিশোরীদের নাগরা কিছু চলবে। হাইহিল ও পেন্সিল হিলের ফ্যাশনও এবার উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে থাকবে ঈদে।অ্যান্টিক, বিডস, গ্লাস, চুমকি, পুতি ইত্যাদি নানা উপকরণের ব্যবহার ও এমব্রয়ডারি এবার জুতার ফ্যাশনে নেই বললেই চলে। মেয়েদের জুতার ওপরের দিকটার সঙ্গে সঙ্গে সোলে ও হিলে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করা হয়েছে। কাঠের সোলের চেয়ে এবার বিভিন্ন ধরনের মেটাল ও ট্রান্সপারেন্ট হিলের জুতাই বেশি।বাড়তি কোনো নকশার পরিবর্তে মূল হিলের ডিজাইনটাতেই আনা হয়েছে পরিবর্তন। প্লেন বা সমান হিলের চেয়ে জিকজ্যাক, কুচির মতো নানা ধরনের হিলের প্রাধান্য দেখা গেছে জুতাতে। মাঝারি আকারের প্লেন হিলে মেটালের ফুল, পাথর ইত্যাদি বসানো হয়েছে। আর পেন্সিল হিলের জুতাগুলোর হিলটাই সরু, মোটা, গোল ইত্যাদি বিভিন্ন আকৃতির সংমিশ্রণে করা হয়েছে। হিলের রঙেও আছে বৈচিত্র্য। ছেলেমেয়ে সবার জন্যই চাইনিজ নানারঙের সু'র মতো কাপড়ের জুতা এসেছে কিছু। এছাড়া থাইল্যান্ড থেকে আনা ফুলেল প্রিন্টের বহুরঙা ফ্লাট স্যান্ডেলগুলো ঈদে পরতে পারেন কেউ কেউ। জুতার ফিতাতেও আনা হয়েছে ভিন্নতা। স্বাভাবিক দুই ফিতার সঙ্গে সঙ্গে বাঁকানো একটি, বেল্ট আকৃতির, গোলাকৃতির, ঝালরের মতো কয়েকটি করে ফিতার জুতাই বেশি। অল্প কিছু জুতার ফিতা পায়ের পাতা থেকে গোড়ালি পর্যন্ত উঠে এসেছে। ফিতার ওপরে পাথর দিয়ে ছোট, বড় নানা ধরনের ফুলের নকশা করা হয়েছে। কিছু জুতায় ফিতার ওপর থেকে পাথর বসানো কয়েকটি চেন ঝুলিয়ে বাড়তি অলংকরণ করা হয়েছে। আবার ফিতার মাঝে লম্বালম্বি, গোল, ত্রিকোণ, চার আকৃতিরসহ নানা ধরনের ছোট-বড় নকশা করে গুঁড়ো পাথর বসিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে সেই নকশার অংশটা পাথরের ঝলকানিতে চিক চিক করছে। কালোর পাশাপাশি সাদা ও সোনালি রঙের জুতাই বেশি। তবে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পরার জন্য বাদামি, ধূসর, মেরুন, নীল, লাল ইত্যাদি নানারঙের জুতাও আছে। দেশি জুতার মধ্যে ফ্ল্যাট দুই ফিতার স্যান্ডেলই বেশি। এই স্যান্ডেলগুলোতেও পাথরের কম বেশি ব্যবহার আছে। আরও ব্যবহার করা হয়েছে জরি, পুঁতি আর কুন্দনের নকশা। মাঝারি সোলের স্যান্ডেল ও স্যান্ডেল সু ছেলেদের জন্য আনা হয়েছে। তবে স্যান্ডেলের ওপরের অংশের নকশায় সামান্য ভিন্নতা চোখে পড়বে।র্ যাক্সিনের পাশাপাশি চামড়ার স্যান্ডেলগুলোও এবার চলবে। এছাড়া সামনে গোল শেপের কালো সু এবার বেশি। তবে গোল শেপটা সরু ধরনের। কালো, বাদামি, ছাই, চকোলেট রং এবার ছেলেদের জুতায় প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। মেয়ে শিশুদের জুতাতেও বসানো হয়েছে পাথর, পুঁতি, চুমকি। ফ্লাট জুতার পাশপাশি আধা বা এক ইঞ্চি হিলের কিছু স্যান্ডেল সু রয়েছে তাদের জন্য। ছেলে শিশুদের জন্য গতবারের মতো এবারো স্যান্ডেল সু থাকবে শীর্ষে। আর অল্প কিছু আছে সু। আর ছেলেমেয়ে সব শিশুর জন্যই আছে দুই ফিতার ফ্লাট স্যান্ডেল। বাচ্চাদের জুতা, স্যান্ডেলগুলোর নকশায় রয়েছে ফুল, কার্টুনের ছাপ, লেইস। এক থেকে দুই বছরের শিশুদের জন্য রয়েছে হাঁটার সময় পায়ে চাপ লেগে পেছনে লাল, হলুদ, কমলা, সবুজ রঙের লাইট জ্বলে ও নানারকম মিউজিক বেজে ওঠে এমন জুতাগুলো। তবে ছেলে শিশুদের জন্য মোটা সোলের চামড়ার প্লেন স্যান্ডেল সু এবারও থাকবে। ছেলে শিশুদের জুতায় প্রাধান্য পেয়েছে কালো ও বাদামি রঙ। আর সাদা, কালো, লাল, নীল, গোলাপি, আকাশি ইত্যাদি বহু রঙের জুতা আছে মেয়ে শিশুদের জন্য। বেল্ট লাগানো শিশুদের জুতা বা স্যান্ডেল সহজে খোলা ও পরার জন্য পুশ ব্যবহার করা হয়েছে বেশি। মার্কেটগুলোতে আনা বেশির ভাগ জুতাই চায়না থেকে আমদানি করা। এছাড়াও থাইল্যান্ড, হংকং, পাকিস্তান, ইটালি থেকে জুতা আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। ফ্যাশন হাউসগুলোও ঈদে নানা ধরনের জুতা নিয়ে আসে। আড়ং, মায়াসির, বিবিয়ানা, কাভা কাভা, ফেরিওয়ালা, যাত্রা, দেশাল ইত্যাদি ফ্যাশন হাউসগুলোর স্যান্ডেলে প্রাধান্য পেয়েছে কোলাপুরি ডিজাইন। এসব প্রতিষ্ঠানের ষ্ট্র্যাপ বেইজ স্যান্ডেলও নজড় কাড়বে অনেকের। বাটা, লিবার্টি, পেগাসাস, এপেক্স গ্যালারি, আর্টিষ্টি, রাদু, কারটিয়ার সুজ, এক্সেল প্লাস ইত্যাদি দেশি ব্র্যান্ডের জুতাগুলোতেও ঈদ উপলক্ষে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.