রিমান্ডে শিল্পপতি আজাদকে নির্যাতনের অভিযোগঃ পুলিশ জনগণের বন্ধু হবে কবে

 আজাদ প্রোডাক্টস ও গ্র্যান্ড আজাদ হোটেলের স্বত্বাধিকারী বিশিষ্ট শিল্পপতি আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়ার ঘটনাটি চায়ের কাপে তুফান না তুললেও ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। সিআইডির এক ইন্সপেক্টরকে মারধর ও হত্যাচেষ্টা মামলায় বৃহসপতিবার মধ্যরাতে গ্র্যান্ড আজাদ হোটেল থেকে আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতার করা হয়। মিডিয়ায় যেভাবে ঘটনাটি এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, মামলার বাদী সিআইডি ইন্সপেক্টর জনাব আজাদের পূর্বপরিচিত। তিনি তার ভাইেয়র জন্য একটা চাকরির তদবিরে গ্র্যান্ড আজাদ হোটেলে গিয়েছিলেন।

সেখানে পূর্বানুমতি ছাড়া তিনি আবুল কালাম আজাদের কক্ষে ঢুকে পড়লে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। এরই জের ধরে মামলাটি হয়েছে। ফৌজদারি মামলার বাংলাদেশী দস্তুর অনুযায়ী এ মামলায়ও যতরকম সম্ভব অভিযোগ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। পরদিন শুক্রবার আবুল কালাম আজাদকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হয় এবং আদালতের নির্দেশক্রমে একদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ডে 'জিজ্ঞাসাবাদকালে অসুস্থ' হয়ে পড়লে তাকে সন্ধ্যায় চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরদিন শনিবার আজাদ সাহেবের ছেলে ও মেয়ে যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকে অভিযোগ করেছেন যে, রিমান্ডে নিয়ে তাদের বাবার ওপর অকথ্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। রিমান্ডে নেয়া হবে অথচ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হবে না-একথা বাংলাদেশী বাস্তবতায় বিশ্বাস করা কঠিন। বিশেষ করে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকালে জনাব আজাদ যখন এমন অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়; তখন কারো বুঝতে কষ্ট হয় না, জিজ্ঞাসাবাদের ধরন কেমন ছিল। আজাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আদালত সাব্যস্ত করবেন তিনি দোষী না নির্দোষ। আমরা শুধু কয়েকটি বিষয়ে আমাদের বক্তব্য সীমিত রাখব। বাদীর বরাত দিয়ে মিডিয়ায় এসেছে যে, তিনি তার ভাইয়ের চাকরির ব্যাপারে খোঁজ নিতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। আবার মিডিয়ায় এ খবরও এসেছে যে, রিমান্ড চাওয়ার সময় পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে বলা হয়েছে, আবুল কালাম আজাদ জাল ডলারের ব্যবসা করেন; সে ব্যাপারে তদন্ত করতে বাদী ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। এখন কোনটা সত্য? আরও কথা আছে, থানায় করা বাদীর এজাহারের বরাত দিয়ে মিডিয়ায় এসেছে, ঘটনার সময় বাদীর কাছ থেকে দামি ঘড়ি, দামি আংটি, মোটা অংকের টাকা ইত্যাদি কেড়ে নেয়া হয়েছে। এ কথা সত্য হলে প্রশ্ন জাগে, সিআইডির একজন ইন্সপেক্টর যে এভাবে নগদ টাকা আর দামি সামগ্রী মিলিয়ে লাখ দুয়েক টাকার সম্পদ নিয়ে ঘুরে বেড়ান, তা কি তার দৃশ্যমান আয়ের সঙ্গে মানানসই? রিমান্ডের আবেদন জানানোর সময় আদালতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তির পিলখানায় সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে। অভিযোগটি গুরুতর। এতদিন এ ব্যাপারে পুলিশ চুপ ছিল কেন? পুলিশের সঙ্গে আবুল কালাম আজাদের ঠোকাঠুকি লেগে গেল, আর সঙ্গে সঙ্গে সিআইডির দৃষ্টিতে আজাদ জাল ডলার ব্যবসায়ী এবং বিডিআর বিদ্রোহের ষড়যন্ত্রকারী হয়ে গেলেন, এ কেমন কথা! সব মিলিয়ে আমাদের মনে হচ্ছে, আজাদ সাহেব প্রথমে পুলিশকে টাকার গরম দেখিয়েছেন, এখন পুলিশ আজাদ সাহেবকে পুলিশি বিক্রম দেখাচ্ছে। কোনোটাই সুস্থতার লক্ষণ নয়।

No comments

Powered by Blogger.