মাদক বেচছে পুলিশঃ তদন্ত কমিটি গঠন, এক কনস্টেবল প্রত্যাহার

'আদালতের মালখানায় মাদক বেচছে পুলিশ' শিরোনামে গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠে প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদনে হৈচৈ পড়ে গেছে পুলিশসহ সব মহলে। আদালতের মালখানায় আলামত হিসেবে জব্দ রাখা ফেনসিডিল বিক্রির ঘটনায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া গত সোমবার মালখানায় দায়িত্ব পালন করা কনস্টেবল শামীমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি প্রচারের পর ঘটনাটি তাদের নজরে আসে। প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে বের করার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন_অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন ও সহকারী পুলিশ সুপার নাসির আহমেদ সিকদার। প্রতিবেদনে যা প্রকাশ করা হয়েছে, সেটা সত্য প্রমাণিত হলে ঘটনাটি আসলেই দুঃখজনক। প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আদালত সূত্র জানায়, গতকাল সকাল থেকেই আদালত এলাকায় বিচারক, আইনজীবী থেকে শুরু করে সবারই আলোচনার বিষয় ছিল এই প্রতিবেদন। আদালতের অন্য মালখানা কর্তৃপক্ষও তাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে এবং সবাইকে সতর্ক করে দেয়।
পুলিশের এক সূত্র জানায়, ঢাকা জেলা আদালতের মালখানায় ফেনসিডিল বিক্রির প্রতিবেদনটি প্রকাশ পাওয়ার আগের দিন বুধবার প্রতিবেদক আদালত এলাকায় গিয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরপরই পুলিশের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিনই তাঁরা পরিদর্শক রবীন্দ্র নারায়ণ সাহার কক্ষে বৈঠক করেন। বৈঠকে কনস্টেবল আসাদুজ্জামানকে কিভাবে বাঁচানো যায়, সে ব্যাপারে তাঁরা আলোচনা করেন। কারণ এ ঘটনায় আসাদ ফেঁসে গেলে রবীন্দ্র নারায়ণসহ সংশ্লিষ্ট আরো অনেকেই ফেঁসে যাবেন। ওই আলোচনার সিদ্ধান্তমতো রবীন্দ্র নারায়ণ ওই দিনই একটি প্রতিবেদন তৈরি করে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর দাখিল করেন। পরে সেই আদালত থেকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য গতকাল সেটা জেলা পুলিশ সুপার বরাবর পাঠানো হয়।
সূত্র জানায়, প্রতিবেদনে পরিদর্শক রবীন্দ্র নারায়ণ উল্লেখ করেছেন, গত রবিবার আশুলিয়া থানা উদ্ধার করা কিছু ফেনসিডিল মালখানায় পাঠায়। আসাদ ওই মালখানায় বসে কনস্টেবল শামীমকে নিয়ে সেগুলো হিসাব করে দেখছিলেন। এ সময় একজন মুহরি সেখানে ঢুকে ফেনসিডিল কিনতে চান এবং আসাদকে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় আসাদের সঙ্গে ওই ব্যক্তির উচ্চবাচ্য হয় এবং তাঁকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ কারণেই ওই ব্যক্তি ঘটনাটি ধারণ করে সংবাদমাধ্যমে সরবরাহ করেছে।
সূত্র আরো জানায়, রবীন্দ্র নিজেকে রক্ষার জন্য এই প্রতিবেদন দাখিল করলেও সেটা নিয়েও আদালতের সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। কারণ, থানা থেকে যে আলামত আদালতে পাঠানো হয়, সেটা সিলগালা করা অবস্থায় থাকে। মালখানায় সেটা গণনার কোনো অবকাশ নেই। আর কনস্টেবল আসাদ ১৪ মাস আগেই চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। এরপরও তাঁর ওই চেয়ারে বসে দায়িত্ব পালনের পেছনের কোনো বৈধ যুক্তি নেই। বরং এ প্রতিবেদন দাখিল করে নিজেই ফাঁদে আটকা পড়েছেন। আরেকটি সূত্র জানায়, পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহল চেষ্টা করছে, এ ঘটনায় শুধু আসাদকে ফাঁসিয়ে সংশ্লিষ্ট আর সবাইকে বাঁচাতে।

No comments

Powered by Blogger.