নভেম্বর থেকে দেশি চিনিকলে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে by আবুল হাসনাত

লতি ২০১১-১২ আখ মাড়াই মৌসুমে দেশের ১৫টি চিনিকলে এক লাখ ৩৫ হাজার ৩৭৫ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। আগামী ১১ নভেম্বর উত্তরবঙ্গের তিনটি চিনিকলে একযোগে আখ মাড়াই উদ্বোধনের মাধ্যমে এবারের মৌসুমের চিনি উৎপাদন শুরু হতে পারে বলে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) সূত্রে জানা গেছে। তবে এবারে চিনি উৎপাদনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা গত মৌসুমের প্রকৃত উৎপাদনের চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি।

গত আখ মাড়াই মৌসুমে ১৫ লাখ ৮১ হাজার টন আখ থেকে এক লাখ ১৮ হাজার ৯২৫ টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন। কিন্তু চিনি উৎপাদিত হয় এক লাখ ৯৬২ টন। চিনিকলগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ও ব্যবস্থাপনাগত দিকের যথেষ্ট উন্নতি না ঘটিয়ে উচ্চহারে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করায় এবারও তা অর্জিত হবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। করপোরেশনের একজন কর্মকর্তার মতে, চিনিকলগুলো আধুনিকায়ন না করা এবং কাঙ্ক্ষিত আখ না পাওয়ায় বার্ষিক চিনি উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেকও অর্জিত হয় না।
করপোরেশন সূত্র জানায়, আসন্ন মাড়াই মৌসুমে চিনিকলগুলোতে আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ লাখ ৯৫ হাজার টন। অর্থাৎ এই আখ থেকেই কাঙ্ক্ষিত চিনি উৎপাদন করা হবে। এ ক্ষেত্রে চিনি রিকভারি হার (আখ থেকে চিনি আহরণের হার) নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
করপোরেশন সূত্র জানায়, দেশের ১৫টি চিনিকল এলাকায় এক লাখ ৬৯ হাজার একরে আখ চাষ করা হয়েছে। সেখানে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টন আখ উৎপাদন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বীজ ও চিবিয়ে খাওয়া আখ বাদ দেওয়ার পরও ৩০ লাখ টন আখ থাকবে। সেখান থেকে ১৭ লাখ ৯৫ হাজার টন মাড়াইযোগ্য আখ মিলবে—এমন আশা করছে করপোরেশন।
চাষিরা যেন আখ চাষে উৎসাহিত হন, সে লক্ষ্যে এ বছর আখের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। নতুন দর অনুযায়ী, মিলগেটে প্রতি কুইন্টাল (১০০ কেজি) ২৫০ টাকা এবং আখ ক্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রতি কুইন্টাল আখ কেনা হবে ২৪৪ টাকায়। অর্থাৎ মণপ্রতি আখের দাম দাঁড়ায় ৯৩ টাকা, যা আগের মৌসুমের চেয়ে ১০ টাকা বেশি।
দেশে বার্ষিক চিনির চাহিদা ১৪ থেকে ১৫ লাখ টন। ১৫টি সরকারি চিনিকলের বার্ষিক চিনি উৎপাদনক্ষমতা দুই লাখ ১০ হাজার টন। তবে উৎপাদন হয় গড়ে এক লাখ টন। বাকি চিনির চাহিদা মেটায় ছয়টি বড় বেসরকারি মিল। এরা মূলত অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে তা শোধন করে বাজারজাত করে।
চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার পেছনে বরাবরই চাহিদা অনুযায়ী আখ না পাওয়াকে দায়ী করে করপোরেশন। কিন্তু গত মৌসুমে মাড়াইযোগ্য আখ সংগ্রহ হয়েছিল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি—১৫ লাখ ৮১ হাজার ৯০৭ টন। তার পরও চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। কারণ, গত বছর আখ থেকে চিনি আহরণে বিপর্যয় ঘটেছিল। করপোরেশন যেখানে এই হার সাড়ে সাত শতাংশ নির্ধারণ করেছিল, সেখানে বাস্তবে হয়েছিল ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
তবে আহরণের হারে বিপর্যয়ের জন্য আখের গুণগত মানকে চিহ্নিত করছে করপোরেশন। এর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দেশে এখন আর ভালো জাতের আখ হয় না। এটা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার একটি বড় কারণ।
আবার চিনিকল-সংলগ্ন এলাকায় গুড় তৈরির প্রবণতা বৃদ্ধি আখের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় বলে করপোরেশনের ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।
করপোরেশন সূত্র জানায়, ১৯৫৩ সালের গুড় নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চিনিকল এলাকার চাষিরা গুড় ব্যবসায়ীদের কাছে আখ বিক্রি করতে পারবেন না। তার পরও বেশি দাম পাওয়ায় তাঁরা প্রতিবছরই গুড় ব্যবসায়ীদের কাছে আখ বিক্রি করে থাকেন। গুড় প্রস্তুতকারীরা চিনিকলগুলোর চেয়ে বেশি দামে আখ কেনেন এবং এ জন্য চাষিদের অগ্রিম টাকাও দেন।
এরই মধ্যে রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরে গুড় তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ওই সব এলাকায় ১২০ টাকা মণ দরে চাষিদের কাছ থেকে আখ কেনা হচ্ছে। তাই সরকারি চিনিকলের মিলগেটে ৯৩ টাকায় চাষিরা আখ বিক্রি করবেন কি না, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে।
চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন করপোরেশনের সচিব ফেরদৌস বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আখের অভাবেই চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়। কারণ, চিনিকলগুলোতে আখ দেওয়ার চেয়ে আখচাষিরা গুড় ব্যবসায়ীদের কাছেই আখ দিতে পছন্দ করে। সে জন্য পর্যাপ্ত আখ পাওয়া যায় না।

No comments

Powered by Blogger.