ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান থেকে সরে গেলেও মার্কিন বাহিনী থাকবে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ন্যাটো বাহিনী ২০১৪ সালের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সরে এলেও মার্কিন বাহিনী আফগান সরকারের সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকবে। সেখানে তারা আফগান সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেবে। ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে গতকাল শুক্রবার পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে একটি সংবাদমাধ্যমকে ওবামা এ কথা বলেন। আফগান সরকারের হাতে ২০১৪ সালের মধ্যে নিরাপত্তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে গতকাল লিসবনে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ন্যাটো সম্মেলন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ ন্যাটোভুক্ত ২৮টি দেশের নেতারা এসে পৌঁছেছেন। ন্যাটোর সদস্যদেশের বাইরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেবসহ ২০টি দেশের প্রতিনিধিরাও এতে যোগ দিচ্ছেন।ন্যাটো গঠনের পর গত ৬১ বছরের মধ্যে এ সম্মেলনকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০১৪ সালের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো সব সেনা সরিয়ে নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্মেলন শুরুর আগে গতকাল বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ন্যাটোর মহাসচিব আন্দ্রেস ফো রাসমুসেন বলেন, ২০১৪ সালের মধ্যে আফগানিস্তানের হাতে ন্যাটোর নিরাপত্তার দায়িত্ব হস্তান্তর করাকে তিনি বাস্তবমুখী বলে মনে করেন। তবে এ সময়ের মধ্যে তাঁরা যে আফগানিস্তান থেকে সরে আসবেনই, ব্যাপারটি এমন নয়। তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত তাঁরা মনে করবেন সেখানে ন্যাটোর উপস্থিতি জরুরি, তত দিন তাঁরা সেখানে থাকতে অঙ্গীকারবদ্ধ। আফগান যুদ্ধে এ পর্যন্ত দুই হাজার দুই শর বেশি ন্যাটো সেনা গেরিলা হামলায় নিহত হয়েছে। গতকালও আফগানিস্তানে রাস্তার পাশে পেতে রাখা বোমার বিস্ফোরণে ন্যাটোর একজন সেনা নিহত হন। সব মিলিয়ে এ বছর সেখানে নিহত ন্যাটো সেনার সংখ্যা ৬৫৪ জনে পৌঁছেছে।আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই অভিযোগ করেন, ন্যাটো বাহিনীর সদস্যরা বেসামরিক আফগান নাগরিকদের বাড়িতে ঢুকে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছেন বলে তাঁদের কাছে তথ্য রয়েছে। তিনি এসব তৎপরতা থেকে তাঁদের বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। সম্মেলনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, লিসবন সম্মেলনে আফগান পরিস্থিতিকেই মূলত প্রাধান্য দেওয়া হবে। সম্মেলনে আরও যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে, সেগুলো হলো—ইউরোপের আকাশকে ন্যাটো বাহিনীর জন্য নিরাপদ করতে সেখানে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধক ব্যবস্থা গড়ে তোলা, ন্যাটোর প্রশাসন ব্যবস্থায় সংস্কার আনা ইত্যাদি। ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধক ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়ে রাশিয়া শুরু থেকে বিরোধিতা করে আসছিল। তাদের অভিযোগ, এর মাধ্যমে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো রাশিয়ার পরমাণু স্থাপনাগুলোকে হুমকির মুখে নিয়ে যাবে। রাশিয়াকে এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা দিতে ন্যাটো তার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ কার্যক্রমে দেশটিকে অন্তর্ভুক্ত করতে রাজি হয়েছে। এ কারণে প্রেসিডেন্ট মেদভেদেভকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল লিসবনের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের বলেন, ন্যাটোর ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কার্যক্রম শুধু ইরানকে উদ্দেশ্য করে পরিচালনা করা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, শুধু একটি দেশকে কোণঠাসা করার লক্ষ্য নিয়ে এ ধরনের কার্যক্রম শুরু হলে তাতে তাঁদের সমর্থন থাকবে না।

No comments

Powered by Blogger.