প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাওয়া হার্নান্দেজ

গত গ্রীষ্মের প্রাক-মৌসুম অনুশীলনে একের পর এক শট নিচ্ছেন সদ্যই ক্লাবে যোগ দেওয়া এক মেক্সিকান তরুণ। আর গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে কাঁপিয়ে দিচ্ছেন জাল। দৃশ্যগুলো দেখে মুগ্ধ পল স্কোলস গুরু অ্যালেক্স ফার্গুসনের কাছে গিয়ে করে বসলেন এক ভবিষ্যদ্বাণী। বদলি হিসেবেই এই ছেলে ২০ গোল করবে!
ক্যারিয়ারের পুরোটাই ম্যানইউতে কাটিয়ে দেওয়া স্কোলসের চোখ দুটি যে জহুরি চিনতে ভুল করেনি, ফার্গুসন আজ বুঝতে পারছেন। সত্যি সত্যিই হাভিয়ের হার্নান্দেজের নামের পাশে ২০ গোল!
প্রথম মৌসুমেই তাঁকে নিয়ে ফার্গুসনের ভাবনা ও পরিকল্পনাকে ছাড়িয়ে গেছেন এই তরুণ। গত বিশ্বকাপের পরই মেক্সিকান ক্লাব গুয়াদালহারা থেকে তরুণ হার্নান্দেজকে ম্যানইউতে নিয়ে আসেন ফার্গুসন। তরুণ হিসেবে হার্নান্দেজকে নিয়ে প্রথম বছরেই ফার্গুসনের প্রত্যাশার সীমাটা এত বড় ছিল না। পরিকল্পনা ছিল আস্তে-ধীরে তাঁকে গড়ে তুলবেন।
কিন্তু বাস্তবে যে হার্নান্দেজকে পেলেন তাতে ফার্গুসন নিজেই বিস্মিত। পরিচয়, মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারস্যাপার দূরে সরিয়ে প্রথম বছরেই ম্যানইউতে হার্নান্দেজ প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। চলতি জুনেই ২৩-এ পা দিতে যাওয়া এই মেক্সিকান এখন ম্যানইউর মূল খেলোয়াড়দের একজন। মাত্র ৭০ লাখ পাউন্ড চুক্তির এই খেলোয়াড়ের কারণেই এখন ৩ কোটি পাউন্ডের দিমিতার বারবেতভকে সাইড বেঞ্চে বসিয়ে রাখছেন ফার্গুসন।
লিগ জয়ের উৎসব এরই মধ্যে করে ফেলেছে ম্যানইউ। এখন দৃষ্টিসীমায় তাদের আরেকটি শিরোপা—চ্যাম্পিয়নস লিগ। সব বাধা টপকে ফাইনালে উঠেছে তারা। আর এই সাফল্যের অন্যতম রূপকার হার্নান্দেজ। চেলসির বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারণী হিসেবে বিবেচিত হওয়া ম্যাচে ৩৭ সেকেন্ডেই গোল করে চেলসিকে পেছনে ঠেলে দেন! শুধু এটাই নয়, মৌসুমজুড়েই ম্যানইউর কঠিন দিনগুলোয় ত্রাতার ভূমিকায় দেখা দিয়েছেন হার্নান্দেজ। প্রথমে বদলি হিসেবে মাঠে নামলেও এখন হার্নান্দেজকে ছাড়া ম্যানইউর প্রথম একাদশ যেন ভাবাই যায় না!
মেক্সিকো জাতীয় দলের তরুণ এই স্ট্রাইকারের ক্ষিপ্রতা দেখে কদিন আগে কিংবদন্তি পেলে পর্যন্ত তাঁকে ডেকেছেন ‘নতুন মেসি’ বলে। ম্যানইউ শিবিরে তো হার্নান্দেজ-প্রশংসার জোয়ার বইছে। মুগ্ধ ফার্গুসন বলছেন, ‘ও এসেই এমন করবে, এতটা প্রত্যাশা আমাদের ছিল না। আমরা ভেবেছিলাম, একটা বছর তাকে ক্লাবের সঙ্গে পরিচিত করিয়ে ইংলিশ ফুটবলের সঙ্গে ধাতস্থ করে আরও শক্তিশালী করে তুলব। ও এরই মধ্যে সবকিছু করে ফেলেছে। ও প্রতিদিনই নয়টায় আসে এবং সবার শেষে যায়। ছেলেটি খুবই নিবেদিতপ্রাণ।’
১২টি লিগ জেতা অভিজ্ঞ সতীর্থ রায়ান গিগস হার্নান্দেজের পারফরম্যান্স দেখে বিস্মিত, ‘প্রথম মৌসুমেই ২০ গোল করাটা অবিশ্বাস্য। হাভিয়েরের মতো গোল স্কোরার থাকলে সব সময়ই আপনার সুযোগ আসবে। মাঠ এবং মাঠের বাইরে ওর প্রভাবটা অসাধারণ। চেলসির বিপক্ষে গোলটিই ওর এই মৌসুম সম্পর্কে সবকিছু বলে দেয়।’
হার্নান্দেজের এখন নীরবে বসে প্রশংসা শুনে যাওয়ারই দিন!

No comments

Powered by Blogger.