আগামী অর্থবছর সহজ নয়: অর্থমন্ত্রী

দেশের উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে গেলে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো দ্রব্যমূল্য, ব্যাংকের উচ্চ সুদের হার ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার। আগামী অর্থবছরটা তাই সহজ নয়, বরং বিপৎসংকুল হবে। তবে সতর্ক থাকতে হবে যে অর্থনীতির গতিটা যাতে সুপথে থাকে।
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভির যৌথ আয়োজনে ‘কেমন বাজেট চাই ২০১১-১২’ শীর্ষক আলোচনায় গত রোববার রাতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এসব কথা বলেছেন।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি এ বছরও আছে, আগামী দিনেও থাকবে। কারণ এখনো জানি না জ্বালানি তেলের দাম কত দূর যাবে। আর সুদের হার ও বিনিময় হার বাড়ার কারণে সংগত কারণেই বাড়বে আমদানি খরচ।’
রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এই বাজেট আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ ফারুক খান, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী ওসমান ফারুক, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা তপন চৌধুরী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও ওপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান সিনহা অংশ নেন।
সরাসরি সম্প্রচার করা এ আলোচনায় চট্টগ্রাম থেকে অংশ নেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) সভাপতি মোর্শেদ মুরাদ ইব্রাহীম ও বিশিষ্ট খাদ্যপণ্য আমদানিকারক আবুল বশর চৌধুরী। আর নাটোর থেকে কয়েকজন ধান, পাট ও আলুচাষি অংশ নেন। গোটা অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ বলছেন, ‘ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট চলছে। ব্যাপারটি মোটেও তা নয়। কিছু ব্যাংকের তারল্য সংকট থাকতে পারে। তবে গোটা ব্যাংক খাতে কোনো সংকট নেই।’
আমদানি ব্যয় জাতীয় আয়ের ৩০ শতাংশ হতে পারে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটি তেমন কোনো সমস্যা তৈরি করবে না। কারণ, প্রবাসী-আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয় মিলে এর চেয়েও বেশি হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান বলেন, ‘বিশ্বের ২০০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমরা আলাদা কোনো গ্রহে বসবাস করছি না। সব দেশেই পণ্যমূল্য বেড়েছে, বাংলাদেশেও বেড়েছে। নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে বরং বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পণ্যমূল্য কম বেড়েছে।’
তবে বাণিজ্যমন্ত্রী এ-ও বলেন, ‘আমি বলছি না যে, যে দাম আছে তা ঠিক আছে। বাংলাদেশে অনেক গরিব মানুষ। তাদের জন্য কম দামে খাদ্যপণ্য কেনার ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, টাকার মান কমেছে। শঙ্কা হলো, আগামী দিনে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ঘটবে। সরকারের দিক থেকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো আশ্বাসও পাওয়া যাচ্ছে না।
ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে কম ঋণ গ্রহণ, টাকার অতি দরপতন ঠেকানো এবং বিনিয়োগকে আঘাত না করার পরামর্শ দিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে যে বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতিতে নতুন ধরনের উৎকণ্ঠা শুরু হয়েছে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শেয়ারবাজারের কারণে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। মুদ্রাবাজারেও মারাত্মক সংকট চলছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে অন্য একটি খেলাপি সংস্কৃতি শুরু হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, কেতাবি অর্থনীতিবিদেরা প্রায়ই ভর্তুকি উঠিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁদের মাটিতে পা নেই। ভর্তুকি যেসব খাতে দেওয়া হয়, সেগুলো অনুৎপাদনশীল খাত নয়।
তপন চৌধুরী বলেন, নতুন করদাতার সন্ধান করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলো, যাঁরা কর দেন, তাঁদেরই আরও বেশি চাপ দেওয়া হয়।
আনিসুর রহমান সিনহা বলেন, কয়লানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় প্রকল্প হাতে নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.