প্রাচীন মন্দির গুঁড়িয়ে দিয়েছে থাই সেনারা

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় গতকাল সোমবার চতুর্থ দিনের মতো দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়েছে। কম্বোডিয়া অভিযোগ করেছে, সংঘাতপূর্ণ এলাকায় ঐতিহ্যবাহী পুরোনো ওই দুটি মন্দির গুঁড়িয়ে দিয়েছে থাইল্যান্ডের সেনারা। এ ব্যাপারে থাইল্যান্ড কোনো মন্তব্য করেনি। দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গত চার দিনের লড়াইয়ে এ পর্যন্ত ১২ সেনা নিহত হয়েছেন।
গত শুক্রবার ভোরে থাইল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুরিন প্রদেশের বিতর্কিত সীমান্তে তা মোয়ান ও তা ক্রাবেই মন্দিরসংলগ্ন জঙ্গল এলাকায় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয়। গতকাল পর্যন্ত দুই পক্ষের সংঘর্ষে কম্বোডিয়ার সাত সেনা ও থাইল্যান্ডের পাঁচ সেনা নিহত হন। কম্বোডিয়ার এক সেনা নিখোঁজ রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর গতকাল বিকেলে আবার দুই পক্ষের সেনাদের মধ্যে কামানের গোলা বিনিময় হয়। দুই দেশই প্রথম হামলা চালানোর জন্য পরস্পরকে দায়ী করে আসছে। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গতকাল থাই সেনাদের ছোড়া গোলার আঘাতে তাদের মন্দির দুটি ধ্বংস হয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ছাম সোচিত বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এ অভিযোগের ব্যাপারে থাইল্যান্ডের প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া দুই দেশের এই সীমান্তের সংঘর্ষে থাইল্যান্ডের অন্তত ২০ হাজার গ্রামবাসীকে ১৬টি অস্থায়ী উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কম্বোডিয়ার অন্তত ১৭ হাজার গ্রামবাসীকেও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়।
তা ক্রাবেই এলাকার প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ৯০০ বছরের পুরোনো প্রিয়া বিহার মন্দির অবস্থিত। গত ফেব্রুয়ারিতে সেখানে দুই দেশের সেনাদের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন নিহত হন। এরপর এবারই বড় ধরনের সংঘর্ষ চলছে।
দুই পক্ষের সমঝোতার ব্যাপারে আলোচনার জন্য ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) চেয়ারম্যান মারতি নাতালেগাওয়ার গতকাল থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ায় সফর করার কথা ছিল। কিন্তু তাঁর এ সফর বাতিল করা হয়েছে। থাই সরকারের মুখপাত্র পানিতান ওয়াতানাওয়াগরন বলেন, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া এখন পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার পর্যবেক্ষকদের দেওয়া শর্তের ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। তাই মারতির এ সফর বাতিল করা হয়েছে।
থাইল্যান্ডের দাবি, ১৯৪৭ সালের মানচিত্র অনুযায়ী প্রিয়া বিহার, তা মোয়ান ও তা ক্রাবেই মন্দির তাদের সুরিন প্রদেশে পড়েছে। এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে কম্বোডিয়া পাল্টা দাবি করছে, মন্দিরগুলো তাদের ওদার মিনশেই প্রদেশে অবস্থিত। ২০০৮ সালে থাইল্যান্ড অভিযোগ করে, কম্বোডিয়া ওই মন্দিরগুলোকে সেনাঘাঁটিতে পরিণত করছে।

No comments

Powered by Blogger.