ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ ও মর্যাদাহানির পরিণাম কখনই শুভ হয় না

ণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা আমাদের আরাধ্য শুধু নহে, ইহা লইয়া আমরা গর্বও করিয়া থাকি। গর্ব করার যৌক্তিক কারণও রহিয়াছে। মানবসভ্যতার বিকাশের ধারায় অদ্যাবধি আমরা যতো প্রকার শাসন ব্যবস্থা দেখিয়াছি তন্মধ্যে গণতন্ত্রকে উত্তম বা অধিকতর গ্রহণযোগ্য বলিয়া বিবেচনা করা হয়। গণতন্ত্র সরাসরি মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের মতো মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করে না, তথাপি গণতন্ত্রের প্রতি এতোটা পক্ষপাত কেন_সেই প্রশ্ন উঠিতেই পারে।
ইহার উত্তরে সংক্ষেপে এইটুকু বলাই যথেষ্ট যে যাবতীয় বস্তুগত চাহিদার বাহিরেও দেশকালনির্বিশেষে মানুষের চিরায়ত কিছু আকাঙ্ক্ষা রহিয়াছে_যাহা অনেকাংশে প্রতিফলিত হইয়াছে ইংরেজি 'লিবার্টি' (ষরনবৎঃু) শব্দটির মধ্যে। ইহার উপযুক্ত প্রতিশব্দ খুঁজিয়া পাওয়া মুুশকিল। তবে সংসদ অভিধানে শব্দটির দুইটি অর্থ পাওয়া যায়। প্রথমত, '(বন্ধনাদি হইতে) মুক্তি' এবং দ্বিতীয়ত, '(স্বেচ্ছামত চলাফেরার বা কাজকর্ম করার) স্বাধীনতা'। মোদ্দাকথা হইল, মানুষ মাথা উঁচু করিয়া স্বাধীনভাবে বাঁচিতে চাহে এবং নির্ভয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করিতে চাহে। ইহা বলিলে অতু্যক্তি হইবে না যে একমাত্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই ব্যক্তি-মানুষের স্বাধীনতার এই আকাঙ্ক্ষাকে সঠিকভাবে ধারণ করিতে সক্ষম হইয়াছে। নিশ্চয়তা প্রদান করিয়াছে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ ও ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের সম-অধিকার ও মর্যাদার। ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের মতো ব্যক্তি-স্বাধীনতার এই অকুণ্ঠ স্বীকৃতিও গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান ভিত্তি হিসাবে বিবেচিত হইয়া থাকে।
মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র শুধু নহে, এ যাবৎ বিশ্বের দেশে দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অনুকূলে যতো সংবিধান ও নীতিমালা গৃহীত হইয়াছে প্রায় সর্বত্রই ব্যক্তির অধিকার ও মর্যাদা তথা স্বাধীনতার বাণীই প্রতিফলিত হইয়াছে নানাভাবে। আমাদের সংবিধানও ইহার ব্যতিক্রম নহে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তরকালে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত প্রায় সকল দেশের ক্ষেত্রেই এই কথা প্রযোজ্য। বস্তুত ব্যক্তি-অধিকার ও স্বাধীনতার চেতনাই দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনের নাগপাশ ছিন্ন করিতে ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল পরাধীন জাতিগুলিকে। কিন্তু তৎপরবর্তী অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নহে। দেশগুলি স্বাধীনতা পাইয়াছে সত্য, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে জনগণ সেই স্বাধীনতার স্বাদ পায় নাই। এখনও যেইসব দেশ স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে নিষ্পিষ্ট হইতেছে তাহাদের কথা ভিন্ন। ব্যক্তি-মানুষের মর্যাদা ও স্বাধীনতাকে বাস্তব-রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক দেশগুলির রেকর্ডও খুব আশাপ্রদ বলা যাইবে না। বিশ্বের দেশে দেশে ছলে-বলে-কৌশলে প্রতিনিয়ত ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে পদদলিত করা হইতেছে। গণতন্ত্রের পুরোধা বলিয়া কথিত উন্নত দেশগুলির অভিজ্ঞতাও খুব একটা ভিন্ন নহে।
পরিপূর্ণ ব্যক্তি-স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র অর্থহীন শুধু নহে, অকার্যকরও বটে। সন্দেহ নাই যে বর্তমান বিশ্বে উন্নত-অনুন্নত নির্বিশেষে সকল গণতান্ত্রিক দেশের জন্যই ইহা এক গুরুতর চ্যালেঞ্জ। তবে বাংলাদেশের মতো দারিদ্র্যসহ নানা সমস্যা-কণ্টকিত নাজুক গণতন্ত্রের দেশগুলির জন্য ইহার ভয়াবহতা যে বহুগুণ বেশি তাহা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ যতো সদিচ্ছাই থাকুক, কোনো সরকারের পক্ষেই জনগণকে রাতারাতি দারিদ্র্যের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করা কিংবা তাহাদের মৌলিক অধিকারসমূহের নিশ্চয়তাবিধান করা সম্ভব নহে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জনগণ তাহা আশাও করে না। সর্বোপরি, জনগণের সুখ-সুবিধা নিশ্চিত করার চাইতে তাহারা যে ক্ষমতার লড়াইয়ে অধিক মনোযোগী তাহাও কাহারও অবিদিত নহে। কিন্তু এই অজুহাতে ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ ও মর্যাদাহানির বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। ন্যায়বিচার ও অধিকারহীনতা শুধু যে মানুষকে ভাঙ্গিয়া চুরমার করিয়া দেয় তাহাই নহে, একই সাথে মারাত্মক ক্রোধেরও জন্ম দেয় তাহাদের মধ্যে_ যাহার পরিণাম কখনই শুভ হয় না। হইতে পারে না। সরকার বা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গকে অবশ্যই এই বাস্তবতাটি যথাযথভাবে অনুধাবন করিতে হইবে। কারণ দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের লিবার্টি বা স্বাধীনতা নিশ্চিত করা তাহাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসাবে বিচার বিভাগ জনস্বার্থে তাহার যথোচিত ভূমিকা গ্রহণে কুণ্ঠিত হইবে না_ ইহাই প্রত্যাশিত।
=============================
ঘুষ ও লুটপাট উভয়ের বিরুদ্ধে একই সাথে লড়তে হবে  সুনীতি ও সুশাসন  আমি কেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পক্ষে  শ্রমিক অসন্তোষ বর্তমান প্রেক্ষিত  জীবন ব্যাকরণঃ দর্জির মুক্তিযুদ্ধ  তথ্যের অধিকার ও জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ  শালীন ও সংযত কথাবার্তা কি শুধু একতরফা হতে হবে?  একটি অসমাপ্ত গল্প  মুসলিম বিশ্বে সেক্যুলারিজমের বর্তমান ও ভবিষ্যত  চীন দেশের কথা  হিকমতে হুজ্জতেদের কথা  মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে বিশ্বসভায়  ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো  বধ্যভূমিতে গেয়ে গেল যাঁরা জীবনের জয়গান  ভিক্ষাবৃত্তির মুখোশ  লন্ডন ভ্রমণ এবং সুখ-দুঃখের দু'টি কথা  শিক্ষার মানোন্নয়নে চাই যথার্থ মনিটরিং  পান্থজনঃ কী পাই নি তারি হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজী  বাঙালির বৌদ্ধিক ঐতিহ্য  ৭২-এর সংবিধানের আলোকে কি রূপকল্প বদল করা উচিত নয়?  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ :নতুন যুগের বার্তাবাহক  প্রশাসনে জনগণের আস্থা অর্জন জরুরি  পরিবেশ সুরক্ষায় তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা  রাত যায় দিন আসে  শিক্ষা ছাড়া অর্থনৈতিক মুক্তি অসম্ভব  ভালবাসা নিভিয়ে দেয় হিংসার আগুন  মহান মুক্তিযুদ্ধঃ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি  রহস্যের পর্দা সরিয়ে দ্যুতিময় এমিলি ডিকিনসন  বেগম রোকেয়াঃ নারী জাগরণের বিস্ময়কর প্রতিভা  শিক্ষারমান ও সমকালীন প্রেক্ষাপট  বিজয় দিবসঃ অর্জন ও সম্ভাবনা  একটি ট্রেন জার্নির ছবি ও মাইকেলের জীবন দর্শন  ডক্টর ইউনূসকে নিয়ে বিতর্ক  উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনা  বাংলাদেশ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন  ক্ষুদ্রঋণ ও বাংলাদেশের দারিদ্র্য  শেয়ারবাজারে লঙ্কাকাণ্ড  মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার  শক্ত ভিত ছাড়া উঁচু ভবন হয় না  ট্রেন টু বেনাপোল  বনের নাম দুধপুকুরিয়া


দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্যে
দৈনিক ইত্তেফাক এর সম্পাদকীয়


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.