আলোচনা- ঘুষ ও লুটপাট উভয়ের বিরুদ্ধে একই সাথে লড়তে হবে by মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ক্ষেত্র কোন্টি, সম্প্রতি তা নিয়ে আবার বেশ জোরালো তর্ক উঠেছে। দিন দশেক আগে দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করে একটি জরিপ রিপোর্ট প্রচার মাধ্যমে বেশ ফলাও করে প্রকাশ ও প্রচারিত হয়েছে। রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে যে_ পুলিশ, জনপ্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও বিচার বিভাগে দুর্নীতি হলো সবচেয়ে প্রবল। তার মধ্যে আবার সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত হলো পুলিশ বিভাগ।
সত্যিই কি এসব ক্ষেত্রেই আমাদের দেশে দুর্নীতির মাত্রা সবচেয়ে বেশি এবং পুলিশ বিভাগ সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত স্থান? আমি মনে করি যে, পুলিশ বিভাগসহ উলিস্নখিত ক্ষেত্রগুলোতে দুর্নীতি যে খুবই প্রকট ও জনগণের জন্য প্রবল যন্ত্রণাদায়ক তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি যেখানে প্রচলিত তা এসব ক্ষেত্র নয়। পুলিশ, জনপ্রশাসন, রাজনৈতিক দল অথবা বিচার বিভাগের চেয়ে হাজারগুণ বেশি 'দুর্নীতি' চলে অন্যত্র। আমাদের দেশে দুর্নীতির সবচেয়ে বড় ক্ষেত্রটি তাহলে কোন্টি?
বৃটিশ আমল থেকেই এদেশে দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা চলে আসছে। প্রায় সবসময়ই এটা হয়ে থেকেছে মানুষের মাঝে আলোচনার একটি প্রধান বিষয়। দুর্নীতিকে ইসু্য করে 'পলিটিক্স' করা হয়েছে বিস্তর। কিন্তু দুর্নীতির উৎসমূল ও তার মহামারী-স্বরূপ ক্রমাগত বিস্তারের কারণ নিয়ে উপলব্ধির চেষ্টা ও সে সম্পর্কে গভীরতাসম্পন্ন আলোচনা হয়েছে কম। আর দেশকে দুর্নীতির করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করার জন্য মৌলিক ধরনের বাস্তব প্রয়াস কখনই তেমনভাবে গ্রহণ করা হয়নি বললেই চলে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি উঁচু মর্যাদা ধারণকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সেই ভিত্তিতে সেসব দেশে দুর্নীতির মাত্রা সম্পর্কে একটি ধারণা সূচক প্রকাশ করে থাকে। সেই সূচক অনুসারে, ২০০০ সালে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়। পরবর্তী পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশ শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে বহাল থেকেছে। তখন থেকেই দেশবাসীর মাঝে দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা একটি নতুন মাত্রিকতা লাভ করে। সকলের মনেই জানার আগ্রহ_ এ বছর পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ কোন্্্্্টি, বাংলাদেশ পুনর্বার শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের স্থান পেল না তো? দুর্নীতির সূচকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবছর কিছু উন্নতি প্রদর্শন করতে পারলো কি? ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাৎসরিক রিপোর্টকে কেন্দ্র করে এসব বিচলিত হওয়ার মতো প্রশ্ন নিয়েই দেশবাসী প্রতিবছর আলোড়িত হয়ে থাকে।
দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে আমরা পৃথিবীর সব দেশের মধ্যে কয় নম্বরে আছি, সেটি যেমন একটি প্রশ্ন তেমনি দেশবাসীকে বিচলিত করার মতো আরেকটি প্রশ্ন হলো, দেশে কোন্্্্ ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রা কতোটা এবং সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ক্ষেত্র কোন্্টি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ শাখা এ বিষয়ে মাঝে মাঝে রিপোর্ট পেশ করার চেষ্টা করে থাকে। সে নিয়েও তর্ক-বিতর্ক ও আলোচনার ঝড় উঠে থাকে। এ বছর টিআইবি এ বিষয়ে গৃহীত আন্তর্জাতিক প্রয়াসের অংশ হিসাবে একটি বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। জনগণের অভিমত ও অভিজ্ঞতাকে অবলম্বন করে তারা 'গেস্নাবাল করাপশন ব্যারোমিটার' (বিশ্বমাত্রিক দুর্নীতি পরিমাপক) নামে দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত সম্পর্কে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। পরিসংখ্যান বিজ্ঞানের পদ্ধতি অনুসরণ করে তারা ৬৪টি জেলার শহর ও পলস্নী অঞ্চল থেকে ১ হাজার ৪৯ জন উত্তরদাতার মতামত সংগ্রহ করেছে। মূলত নিম্নোক্ত ৩টি বিষয়ে উত্তরদাতাদের কাছ থেকে তথ্য গ্রহণ করা হয়। (ক) ঘুষ প্রদান, (খ) জনপ্রতিষ্ঠানে (ঢ়ঁনষরপ রহংঃরঃঁঃরড়হ) দুর্নীতি সম্পর্কে জনধারণা, (গ) দুর্নীতি প্রতিরোধে জনগণের আস্থা কোন্ প্রতিষ্ঠানের ওপর কতটুকু। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৪৬ শতাংশের মতে_ গত তিন বছরে দেশে দুর্নীতি বেড়েছে। ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতা পুলিশকে ঘুষ গ্রহীতা হিসেবে উলেস্নখ করেছেন। ৬৪ শতাংশ বিচার বিভাগকে, ৪৮ শতাংশ ভূমি সেবা খাতকে, ৪৮ শতাংশ রেজিস্ট্রেশন ও পারমিট সেবা খাতকে, ৩৪ শতাংশ বিদু্যৎ-টেলিফোন-পানি পরিসেবা খাতকে ঘুষ প্রদান করেছে বলে জানিয়েছেন। এ ধরনের আরো অনেক তথ্য জরিপ থেকে বের হয়ে এসেছে।
জনপ্রশাসনে ঘুষ লেনদেনের প্রকোপ নিয়ে তেমন প্রশ্ন নেই। এটা গা সওয়া একটি ওপেন-সিক্রেট হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। বর্তমানেও তার ক্রমবিস্তার ঘটে চলেছে। নতুন পে-কমিশন কার্যকর করায় উচ্চতম স্তর থেকে শুরু করে সর্বত্র বেতন-ভাতা বৃদ্ধি পাওয়াতে ঘুষের প্রবণতা কমবে বলে যে ধারণা দেয়া হয়েছিল তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। প্রকৃত সত্য হলো এই যে, নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে সকলের আয় টাকার পরিমাণে বাড়লেও কিছুসংখ্যক উপরতলার কর্মকর্তা ছাড়া প্রায় অন্য সকল অংশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা (প্রকৃত আয়) বস্তুত পূর্ববৎই রয়ে গেছে অথবা এমনকি কারো কারো ক্ষেত্রে তা কমে যেতে শুরু করেছে। অবস্থা যদি এমনই হয় তাহলে, ঘুষ নেয়ার অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতার বাস্তবতা পরিবর্তন হবে কিভাবে? অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী কিছু সময়কালের জন্য সবাই মিলে কষ্টকর জীবনযাপন করতে হলেও ঘুষ নেয়া থেকে বিরত থাকব_ এরূপ সামাজিক বাস্তবতা, মনস্তত্ত্ব, চেতনা, আদর্শ ইত্যাদি বিকশিত করার প্রয়াসইবা কোথায়? চোখের সামনে কেউ কেউ রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। চলছে বেপরোয়া লুটপাট। ভোগবাদ, প্রদর্শনবাদ ইত্যাদির প্রলুব্ধকারী হাতছানি মানুষের মধ্যকার দানবীয় প্রবণতাকে জাগিয়ে তুলছে। এসবের মাঝে তাই বেড়ে চলেছে ঘুষের রাজত্ব। তবে, এসব বিষয় হলো ক্ষুদে ঘুষ-দুর্নীতির (ঢ়বঃু নৎরনবৎু) ব্যাপার। দেশের আসল দুর্নীতি কিন্তু চলছে অন্য জায়গায়, অন্য ক্ষেত্রে।
টিআইবি-র রিপোর্ট প্রকাশের প্রায় মাসখানেক আগে দেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি স্বয়ং বিচার বিভাগে বিরাজমান দুর্নীতির কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, 'আমার কাছে ইনফরমেশন আছে, আপনাদের (বিচারকদের) অনেকে নাজিরের সঙ্গে টাকা-পয়সা লেনদেন করেন।' বিচারকদের বাইরে বিচার বিভাগ সংশিস্নষ্ট বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহণের ঘটনার তো ইয়ত্তাই নেই। কিন্তু সেসবও হলো তুলনামূলক বিচারে ঢ়বঃু নৎরনবৎু।
রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঘুষের সংস্কৃতির ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। দ্বি-মেরুকরণভিত্তিক রাজনীতিতে বড় দল বলে কথিতরাই চলতি ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতির নির্ধারক হয়ে বসেছে। সেখানে দুর্নীতি পাকা আসন গেড়ে বসেছে। মনোনয়ন পেতে হলে, কমিটিতে স্থান পেতে হলে, কোনো কাজের তদবির করতে হলে টাকা-পয়সার লেনদেনকে সাধারণ রেওয়াজে পরিণত করা হয়েছে। অবশ্য একথাও ঠিক যে, আদর্শবাদী ও সৎ-ত্যাগী রাজনৈতিক দলও দেশে আছে। এক সময় এদেশে তারা দৃশ্যমান বড় শক্তি হলেও এখন তাদের অবস্থান অনেকটাই প্রান্তস্থিত। মূল স্রোত হয়ে ওঠার মতো শক্তি অর্জন করা এখনো তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। পুলিশকে শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের আইজি প্রতিবাদ করেছেন। এধরনের রিপোর্ট প্রদানের সাথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম ব্যাহত করার যোগসূত্র থাকতে পারে বলে তারা ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন। পুলিশ বিভাগে ঘুষের দৌরাত্ম্যের বিষয়টির সাথেও যদি এভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইসু্য যুক্ত করা হয়, তাহলে তার দ্বারা যে উল্টা সেই ইসু্যর নৈতিক অবস্থানকেই দুর্বল করা হচ্ছে, সে কথাটি তারা কি বোঝেন না? পুলিশ বিভাগে ঘুষের বিষয়টি দেশবাসীর একটি তিক্ত অভিজ্ঞতার বিষয়। তবে একথাও ঠিক নয় যে, পুলিশ বিভাগের সবাই ঘুষখোর, সেখানে কোনো সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই এবং ঘুষ-দুর্নীতি প্রবণতা থেকে এই বিভাগকে মুক্ত করার কোনো প্রচেষ্টা নেই। কিন্তু সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে চিহ্নিত পুলিশ বিভাগের এসব দুর্নীতিও প্রধানত ঢ়বঃু নৎরনবৎু-র প্রকারভুক্ত।
এসব যদি প্রধানত ঢ়বঃু নৎরনবৎু-র পর্যায়ে পড়ে, তাহলে দেশের আসল দুর্নীতির ব্যাপারগুলো চলছে কোথায়?
মনে রাখতে হবে যে, ঘুষ এবং দুর্নীতি হুবহু এক ব্যাপার নয়। ঘুষ হলো দুর্নীতির একটি প্রকার মাত্র। ব্যক্তিগত কোনো বৈষয়িক প্রাপ্তির বিনিময়ে যখন রাষ্ট্রীয় বা প্রশাসনিক ক্ষমতা অপব্যবহার করে অনুরাগ বা বিরাগবশত কোন কাজ করা হয় সেটাই হয়ে ওঠে ঘুষের কারবার। 'ঘুষের' সাথে ক্ষমতার (রাষ্ট্রীয়, প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক) প্রসঙ্গটি সরাসরি ও আবশ্যিকভাবে জড়িত। কিন্তু 'দুর্নীতির' সাথে ব্যক্তিগত প্রাপ্তির বিনিময়ে রাষ্ট্রীয়-প্রশাসনিক ক্ষমতার ওপর প্রভাবকে অবৈধভাবে কাজে লাগানো ছাড়াও অনেক রকম অন্যায় কাজই জড়িত। সেখানে রাষ্ট্রীয়-প্রশাসনিক ক্ষমতার ওপর প্রভাব-শক্তিই একমাত্র প্রাসঙ্গিক বিষয় নয়। ঘুষ গ্রহণের সাথে বৈধতা-অবৈধতা কিংবা আইনি-বেআইনি কাজ করার প্রশ্ন সম্পর্কিত। কিন্তু 'দুর্নীতি' হলো নীতি, ন্যায়নিষ্ঠতা ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়। এর সাথে জড়িত হলো ন্যায়-অন্যায়ের প্রশ্ন। আর ন্যায়-অন্যায়ের বিষয়টি মোটেও বৈধ-অবৈধের প্রশ্নের সাথে একাকার কোনো বিষয় নয়। একটি কাজ বৈধ ও আইনসম্মতভাবে করা হলেই তাকে ন্যায়সম্মত ও নীতিসম্মত কাজ বলে স্বতঃসিদ্ধভাবে ধরে নেয়া যেতে পারে না। ঘুষের ব্যাপার জড়িত না থাকলেও অনেক কাজই দুর্নীতিমূলক কাজ। যেমন চোরাচালানি, কর খেলাপি, মজুতদারী, ভূমি দসু্যতা, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, তদবিরবাজি, টেন্ডারবাজি, ঋণ খেলাপি ইত্যাদি। কিংবা বলা যায়, দরিদ্রদের সাহায্যের জন্য দেশি-বিদেশি সূত্র থেকে আনা টাকা বিতরণের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয়ের নামে তার একটি বড় অংশ কর্মকর্তাদের দ্বারা পকেটস্থ করা (অধ্যাপক রেহমান সোবহানের জরিপ মতে যে সিস্টেম লসের পরিমাণ ৭৫%)। এসব কাজে কোনো ঘুষের কারবার ঘটে না। কিন্তু এধরনের সব কাজই যে নীতি-নৈতিকতা গর্হিত দুর্নীতিমূলক কাজ তা কি কেউ অস্বীকার করবে। কোন্ কাজকে 'দুর্নীতি' বলে আখ্যায়িত করা উচিত সেটা অবশ্য নির্ভর করে নীতি-নৈতিকতা সম্পর্কে একজন মানুষের ধারণার ওপর। একথা প্রায় সকলেই স্বীকার করে থাকেন যে, যে কোনো পন্থায় 'অনুপার্জিত আয়' (ঁহবধৎহবফ রহপড়সব) পকেটস্থ করাটা 'দুর্নীতি'। বাংলাদেশের গোটা অর্থনীতি পরিচালিত হচ্ছে বাজার অর্থনীতির দর্শন ও ব্যবস্থার ভিত্তিতে। ব্যক্তিমালিকানা নির্ভর বাজারকে কেন্দ্র করে যে দুর্নীতি চলে তার সীমা নেই। মুনাফাখোর বাজার-সিন্ডিকেটের কারসাজি, ভেজাল, হরেক প্রকারের কারচুপি, বাজারের এসব কায়-কারবার সবই হচ্ছে 'দুর্নীতিমূলক' কাজ। যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি দিয়ে একথাও প্রমাণ করা যায় যে, ব্যক্তিগত পুঁজির দ্বারা মালিক যে মুনাফা পকেটস্থ করে থাকে তা প্রকৃতভাবে শ্রমিকের শ্রম-শক্তির দ্বারা সৃষ্ট উদ্বৃত্ত মূল্যের অন্যায় আত্মসাৎ। এই প্রক্রিয়ার মর্মকথা হলো শোষণ। তাই ব্যক্তিগত মুনাফা পকেটস্থ করার ব্যাপারটাই হলো সবচেয়ে বড় 'দুর্নীতি'।
একথা ঠিক যে, সবগুলো বিষয়ে হয়তো সকলে একমত হবেন না, কিন্তু কেউ অস্বীকার করতে পারেন না যে রাষ্ট্র, প্রশাসন, রাজনীতির বাইরে বিভিন্ন প্রকারের ছোটখাটো শুধু নয়, বিশাল-বিশাল লুটপাটের কারবার চলছে। সরকারকেন্দ্রিক পরিমণ্ডলে চলে ঘুষের মাধ্যমে বিশাল পরিমাণের 'দুর্নীতি'। সরকার বহিভর্ূত বেসরকারি খাতে ঘুষের কারবার ব্যতিরেকেই চলে অবাধ লুটপাটের ধারায় তারচেয়ে কয়েকশ' গুণ বড় পরিমাণের 'দুর্নীতি'। বাংলাদেশের সচেয়ে 'দুর্নীতিগ্রস্ত' খাত হলো এই বেসরকারি লুটপাটের খাত। বেসরকারি খাতের লুটপাট আড়াল করার জন্যই সচেতন অথবা অসচেতনভাবে দুর্নীতির হিসাবের সমগ্র বিষয়টি সীমাবদ্ধ করে রাখা হয় কেবল ঘুষের কারবারের মধ্যে। রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতি সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান দুর্নীতির মধ্যে 'দুর্নীতি' সম্পর্কে জনগণের মনোযোগ আবদ্ধ করে ফেলার চেষ্টা করা হয়। সমাজে এর বাইরের অংশটিকে সিভিল সোসাইটি (পরারষ ংড়পরবঃু), সুশীল সমাজ, নাগরিক সমাজ ইত্যাদি নাম দিয়ে তাকে 'দুর্নীতির' হিসাবের বাইরে রাখার চেষ্টা করা হয়। এমন একটি দুরভিসন্ধিমূলক ধারণা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় যেন এই সুশীল সমাজে বেসরকারিভাবে প্রচলিত ক্রমবর্ধমান হিমালয়সম লুটপাটের প্রক্রিয়া 'দুর্নীতি' নয়। 'দুর্নীতি' হলো কেবল রাষ্ট্র, সরকার, রাজনীতি সম্পৃক্ত ঘুষের কারবার। এর বাইরের 'সিভিল সোসাইটি' যেন কিনা ধোয়া তুলসিপাতা (!) অথচ সবচেয়ে বেশি লুটপাট চলে সেখানেই। সেটাই হলো 'দুর্নীতির' হেডকোয়ার্টার।
ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম জোরদার করতে হবে। সেইসাথে আরো তীব্রতার সাথে তথাকথিত 'সিভিল সোসাইটিতে' যে লুটপাটের মহাযজ্ঞ চলছে, তার বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে গণসংগ্রামের জোয়ার। তবেই সফল হবে 'দুর্নীতি'মুক্ত দেশ গড়ার প্রয়াস।
==============================
সুনীতি ও সুশাসন  আমি কেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পক্ষে  শ্রমিক অসন্তোষ বর্তমান প্রেক্ষিত  জীবন ব্যাকরণঃ দর্জির মুক্তিযুদ্ধ  তথ্যের অধিকার ও জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ  শালীন ও সংযত কথাবার্তা কি শুধু একতরফা হতে হবে?  একটি অসমাপ্ত গল্প  মুসলিম বিশ্বে সেক্যুলারিজমের বর্তমান ও ভবিষ্যত  চীন দেশের কথা  হিকমতে হুজ্জতেদের কথা  মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে বিশ্বসভায়  ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো  বধ্যভূমিতে গেয়ে গেল যাঁরা জীবনের জয়গান  ভিক্ষাবৃত্তির মুখোশ  লন্ডন ভ্রমণ এবং সুখ-দুঃখের দু'টি কথা  শিক্ষার মানোন্নয়নে চাই যথার্থ মনিটরিং  পান্থজনঃ কী পাই নি তারি হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজী  বাঙালির বৌদ্ধিক ঐতিহ্য  ৭২-এর সংবিধানের আলোকে কি রূপকল্প বদল করা উচিত নয়?  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ :নতুন যুগের বার্তাবাহক  প্রশাসনে জনগণের আস্থা অর্জন জরুরি  পরিবেশ সুরক্ষায় তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা  রাত যায় দিন আসে  শিক্ষা ছাড়া অর্থনৈতিক মুক্তি অসম্ভব  ভালবাসা নিভিয়ে দেয় হিংসার আগুন  মহান মুক্তিযুদ্ধঃ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি  রহস্যের পর্দা সরিয়ে দ্যুতিময় এমিলি ডিকিনসন  বেগম রোকেয়াঃ নারী জাগরণের বিস্ময়কর প্রতিভা  শিক্ষারমান ও সমকালীন প্রেক্ষাপট  বিজয় দিবসঃ অর্জন ও সম্ভাবনা  একটি ট্রেন জার্নির ছবি ও মাইকেলের জীবন দর্শন  ডক্টর ইউনূসকে নিয়ে বিতর্ক  উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনা  বাংলাদেশ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন  ক্ষুদ্রঋণ ও বাংলাদেশের দারিদ্র্য  শেয়ারবাজারে লঙ্কাকাণ্ড  মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার  শক্ত ভিত ছাড়া উঁচু ভবন হয় না  ট্রেন টু বেনাপোল  বনের নাম দুধপুকুরিয়া  নথি প্রকাশ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার অ্যাসাঞ্জের


দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্যে
লেখকঃ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.