স্মরণ- 'একজন বিস্মৃতপ্রায় বুদ্ধিজীবী' by আহমাদ মাযহার

আবদুল হকের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আমি চর্চা করছি ১৯৯৭ সালে তাঁর মৃতু্যর পর থেকে। ততদিনে তিনি প্রায় বিস্মৃতিতে চলে গেছেন।

মৃতু্যর কিছুদিন আগে দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকায় সৈয়দ আজিজুল হকের নেয়া সাক্ষাৎকার ও একটি সংক্ষিপ্ত লেখা থেকে জেনেছিলাম যে, তিনি বেঁচে আছেন। কিন্তু আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গনে তাঁর সম্পর্কে তেমন কৌতূহল ছিল না। তাঁর থেকে অনেক বেশি মানুষ নাম জানে বামপন্থী রাজনীতিক আবদুল হক সম্পর্কে।
অথচ প্রাবন্ধিক আবদুল হকের (১৯১৮-১৯৯৭) অবদান বিশ শতকের বাংলাদেশের সাহিত্যে উলেস্নখযোগ্য। সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত 'সমকাল' পত্রিকায় পাকিস্তান আমলে বেশকিছু চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী প্রবন্ধ লিখেছিলেন ছদ্মনামে। স্বাধীনতা-উত্তরকালে সেসব রচনা বই হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। বাংলা একাডেমী পুরস্কারও তিনি পেয়েছিলেন স্বাধীনতা-উত্তরকালেই। বুদ্ধিজীবী হিসাবে তিনি একেবারে কম পরিচিত ছিলেন এমন বলা যাবে না, অথচ নব্বইয়ের দশকে তিনি জীবিত থাকলেও তাঁর অস্তিত্ব সম্পর্কে সাহিত্যিক মহলে সাড়া লক্ষ্য করিনি। অথচ যথার্থ অর্থেই তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একজন অগ্রণী বুদ্ধিজীবী।
আবদুল হকের বুদ্ধিজীবী সত্তার পরিচয় তুলে ধরতে হলে তাঁর মানসগঠন-এর পটভূমি কী ছিল তা স্পষ্ট করে নিলে ভালো হয়। প্রসঙ্গত উনিশ শতকী বাংলার নবজাগরণকে একটু ছুঁয়ে গেলে সুবিধাজনক হবে। উনিশ শতকে বাঙ্গালির যে জাগরণ হয়েছিল তা ঘটেছিল প্রধানত বাঙ্গালি হিন্দুদের মধ্যে; সে জাগরণ বাঙ্গালি মুসলমানদের মধ্যে প্রবল হয়ে উঠতে গত শতাব্দীর বিশের দশক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাদের। বিশ শতকের বিশের দশকে (১৯২৬) 'মুসলিম সাহিত্য সমাজ' নামে ঢাকা শহরে একটি সংগঠন গড়ে উঠেছিল কতিপয় মুসলিম তরুণ ব্যক্তির দ্বারা। তাঁরা যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তা 'বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন' নামে পরিচিত। এই আন্দোলনের সাংগঠনিক তীব্রতা দীর্ঘস্থায়ী হতে না পারলেও এর অভিঘাত কম দীর্ঘস্থায়ী ছিল না। প্রাবন্ধিক হিসাবে সমধিক পরিচিত আবদুল হক ছিলেন সেই 'মুসলিম সাহিত্য সমাজ'-এর প্রধান নায়কদের সুস্পষ্ট অধমর্ণ। বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিত্ব কাজী আবদুল ওদুদের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সানি্নধ্যও তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। আগেই বলা হয়েছে যে, সেই আলোকপ্রাপ্ত ব্যক্তিই বুদ্ধিজীবী যিনি নিজে আলোকপ্রাপ্ত এবং তাঁর স্ব-সমাজকেও সেই আলোকায়নের আওতায় আনতে চান। আবদুল হক আলোকপ্রাপ্ত হয়েছিলেন বাংলাভাষার প্রধান সৃষ্টিশীল ও মননশীল লেখকদের লেখা পাঠ করে।
ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন বলে ইংরেজি ভাষার সাহিত্য পাঠের মধ্য দিয়ে উন্নত রুচিও তিনি অর্জন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর 'আলোকপ্রাপ্ত সত্তা' সর্বদা স্ব-সমাজ-এর পরিপাশ্বর্ে জাগ্রত ছিল বলে তিনি 'উন্নাসিক' হয়ে না উঠে 'বেদনাবান' হয়ে উঠেছিলেন। সে কারণে তাঁর স্ব-সমাজের অনেক অকিঞ্চিৎকর জাগরণসূত্রের গুরুত্বও তিনি অনুকম্পার সঙ্গে বিবেচনা করেছিলেন। উন্নাসিকতা করে সীমাবদ্ধ বলে তিরস্কার করে পাশে সরিয়ে না রেখে আমাদের সমাজের সীমিত অর্জনকে তার সমস্ত সীমাবদ্ধতা নিয়েই সনাক্ত করেছিলেন। সে কারণেই বাঙ্গালি মুসলমান ভাবুক ও স্রষ্টাগণ আলোচিত হয়েছেন তাঁর লেখনীর মাধ্যমে। তিনি আলোচনা করেছেন রেয়াজ-আল-দীন আহমদ মাশহাদী, মোহম্মদ নজিবর রহমান, আবুল হুসেন, কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী মোতাহার হোসেন, বেগম রোকেয়া, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, মোহাম্মদ বরকতুলস্নাহ, আবুল হাশিম, আকরম খাঁ, মুহম্মদ শহীদুলস্নাহ, মুহাম্মদ এনামুল হক, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, সা'দত আলী আখন্দ, সিকান্দার আবু জাফর, ফররুখ আহমদ, আহসান হাবীব, আবদুল কাদির, সুফী মোতাহার হোসেন, অথচ তাঁর সমকালীন এবং দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে আধুনিক কোনো কোনো বুদ্ধিজীবীকে বলতে দেখা গেছে বাংলাদেশের এই স্তরের লেখকগণ আলোচনারও অযোগ্য। এখানেই 'উন্নাসিক' ও 'বেদনাবান'- এর পার্থক্য। উন্নাসিক 'নিকৃষ্ট' বলে উপেক্ষা করেন আর বেদনাবান সীমাবদ্ধতার কারণ অনুসন্ধান করে উন্নতির পথ প্রদর্শন করেন। উপেক্ষা বুদ্ধিজীবীর করণীয় হতে পারে না। সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, আবদুল হক তাঁর পূর্বসূরি এবং সমকালীন উভয়েরই যেমন উজ্জ্বলতাকে শনাক্ত করেছেন তেমনি চিহ্নিত করেছেন সীমাবদ্ধতাকেও। আর তাই বাঙ্গালি মুসলমান লেখক তাঁর আলোচনার উপজীব্য। এখানে একটা ব্যাপার পরিষ্কার করে নেয়া জরুরি যে, বাঙ্গালি মুসলমান লেখক-ভাবুকগণ তাঁর আলোচ্য হলেও কখনো আবদুল হকের দৃষ্টিভঙ্গিতে সাম্প্রদায়িকতার লেশমাত্রও নেই। বাঙ্গালি মুসলমানের বাঙ্গালিত্বই ছিল তাঁর লক্ষ্যবস্তু। অর্থাৎ বলা চলে তিনি বাঙ্গালি মুসলমানদের 'মুক্তি'কে শনাক্ত করতে চেয়েছেন কেবল 'মুসলমানিত্ব'কে নয়। তাই বলে তিনি 'মুসলমানিত্ব' বর্জিত হয়ে যাক_এই কামনাও করেননি। তিনি বাঙ্গালি মুসলমানের মুসলমানিত্বের সন্ধান করেছেন সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিকে নয়। এই মনুষত্বে উপনীত হবার জন্য বাঙ্গালি মুসলমানকে তিনি বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন যে, তাঁরা নিজেরা মুসলমান এই কথা যতটা স্মরণে থাকে ততটাই তাঁদের স্মরণে রাখতে হবে যে তাঁরা বাঙ্গালি। সে কারণেই তাঁর প্রবন্ধসমূহের অন্যতম প্রধান উপজীব্য বিষয় বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ।
আবদুল হকের মননশীল রচনার আর এক প্রবল অনুষঙ্গ বাংলার রাজনীতি। তাঁর জাতীয়তাবাদের চেতনা যতটাই সাংস্কৃতিক, ততটাই রাজনৈতিকও। রাজনীতির অবস্থান তাঁর চিন্তার কেন্দে থাকলেও তিনি রাজনীতিক ছিলেন না, ছিলেন রাজনীতি-ভাবুক বা রাজনীতি-তাত্তি্বক বা রাজনীতি-বিশেস্নষক। এখানে আরো একটা কথা প্রণিধানযোগ্য যে, আমাদের দেশে আজকাল যাঁরা বুদ্ধিজীবী হিসাবে সাধারণভাবে পরিচিত তাঁরা অনেকেই এই দুই সত্তার পার্থক্য যথার্থভাবে অনুভব করতে পারেন না। ফলে তাঁরা দলীয় রাজনীতির ছত্রছায়ায় চলে আসেন। তারই ফলে তাঁদের উপলব্ধিসমূহও এভাবে প্রকাশিত হয়। দল যেটুকু অনুমোদন করে ততটুকুই তাঁরা প্রকাশ করতে পারেন, অন্যথা হলে তিনি পথভ্রষ্ট বলে অভিহিত হন। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি যতদিন ঐ সব বুদ্ধিজীবীর ভাবনাকে অধিকার করে রাখবে বা ঐ সব বুদ্ধিজীবী যতদিন তাঁদের উপলব্ধির ততটুকুই প্রকাশ করবেন যতটুকু দলের অনুকূলে যায়, ততদিন তিনি থাকবেন নানা প্রলোভন ও প্রাপ্তির আওতায়। কিন্তু যখনই তাঁদের উপলব্ধি সত্য দলের দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে যাবে তখনই তিনি হবেন পতিত। এইভাবে যাঁদের উপলব্ধির উত্থান-পতন ঘটে তাঁরা কী করে যথার্থ বুদ্ধিজীবী বলে বিবেচিত হবেন?
আবদুল হকের সত্তা ছিল খুবই সচেতন। ফলে তিনি স্পষ্টভাবে অনুভব করতেন যে তিনি রাজনীতিক নন, রাজনীতির ভাবুক। সে কারণে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কেউ কেউ দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত থাকা সত্ত্বেও এবং আপাতদৃষ্টিতে দলবিশেষের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে ঐক্য থাকলেও কখনো তিনি দলীয় রাজনীতিতে অংশ নেননি। বাংলাদেশের রাজনীতি ক্ষেত্রে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এতটা প্রবলভাবে অনুকূল হওয়া সত্ত্বেও একটি দলের এমন তীব্র সাফল্যের সময়েও তাঁর মতো এতটা রাজনীতি-নিমজ্জিত মানুষ দলীয় রাজনীতিতে অংশ নেননি। এমন দৃষ্টান্ত বিরল। সুতরাং বলা চলে তিনি রাজনীতি বিষয়ের যথার্থ একজন ভাবুক-বুদ্ধিজীবী। আমাদের দেশের তথাকথিত বিভিন্ন পন্থী বুদ্ধিজীবীর মতো নন।
এতক্ষণ যেসব বৈশিষ্ট্যের আলোকে আবদুল হককে যথার্থ বুদ্ধিজীবী হিসাবে চিহ্নিত করা হল শুধুমাত্র সেটুকুই একজন যথার্থ বুদ্ধিজীবীর প্রতিকৃতি অঙ্কনের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আবদুল হকের ব্যক্তিগত জীবনাচরণের এমন কিছু দৃষ্টান্তও রয়ে গেছে যে সে সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত না করলে তাঁর বুদ্ধিজীবী সত্তার পরিচয় সম্পন্ন হবে না। তাঁর জীবনের বেশ কটি ঘটনার কথাই প্রসঙ্গত উলেস্নখ করার মতো। কিন্তু এই রচনাকে দীর্ঘায়িত না করার অভিপ্রায়ে এর থেকে মাত্র কয়েকটি উলিস্নখিত হবে।
বুদ্ধিজীবী সত্তাকে নির্মোহ হতে হয়। তা না হলে তাঁর উপলব্ধির সততা লুণ্ঠিত হতে পারে। আবদুল হকের নির্মোহ সত্তার পরিচয় পাওয়া যায় দাউদ পুরস্কারপ্রাপ্তির সময়ে দিনলিপির পাতায় লিখিত তাঁর মন্তব্য থেকে। ১৯৬৯ সালের দিনলিপিতে তিনি লিখছেন :
সাহিত্য ঐতিহ্য মূল্যবোধ [আবদুল হকের দ্বিতীয় প্রবন্ধগ্রন্থ_ লেখক] দাউদ পুরস্কার পাওয়ায় ষোল আনা খুশি হব কিনা স্থির করতে পারছি না। খুশি হওয়ার কারণ এই যে, সাহিত্যিক মহলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আমার চিরদিনই কম, আমি প্রায় নিঃসঙ্গ এবং ব্যক্তিগতভাবে কারো ওপরেই আমার কোনো প্রভাব নেই, তা সত্ত্বেও বইটা পুরস্কার পেয়েছে। অতএব ধরা যাক, সম্পূর্ণ নিজস্ব মূল্যেই পেয়েছে। এর আগে অনেকেই পুরস্কার পেয়েছেন, বিচার সব সময় ঠিক হয়েছে এবং পুরস্কার উপযুক্ত পাত্রে অর্পিত হয়েছে তা নয়। এ সম্বন্ধে অনেক কথা কানে এসেছে এবং মন জেগেছে; ভেবেছি পুরস্কার যদি কখনো পাই তবে যেন দূরে থেকে, বিচ্ছিন্ন থেকে, নিঃসঙ্গ থেকেই একান্ত নিজস্ব মূল্যেই পাই। সেটা যেন আমার কৃতিত্বের নিরাসক্ত স্বীকৃতি হিসাবেই আসে।
১৯৭৫ সালে আবদুল হক বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান প্রবন্ধ ও গবেষণায় কৃতিত্বের জন্য। পুরস্কার ঘোষণার কয়েকদিন আগে মহাপরিচালক তাঁকে ঐ পুরস্কারপ্রাপ্তি সম্পর্কে আগাম আভাস দিলে তিনি মহাপরিচালককে ঐ পুরস্কার থেকে তাঁর নাম বাতিলের অনুরোধ করেন। তিনি নিজে বাংলা একাডেমীর পদস্থ কর্মকর্তা হয়ে এই প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত পুরস্কার গ্রহণ করলে তা তাঁর নৈতিকতাবোধকে আহত করে এই কারণে তিনি ঐ অনুরোধ করেছিলেন। অবশ্য কর্তৃপক্ষ তাঁর অনুরোধ অগ্রাহ্য করেছিলেন।
একইভাবে ঐ ঘটনার পনের বছর পর বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষ তাঁকে 'সাদত আলী আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার' দিতে চাইলে সেটা তিনি গ্রহণই করেননি। ঐ পুরস্কারের মূল্যমান ছিল দশ হাজার টাকা। এর আগে ১৯৮৮ সালে তাঁকে 'আবুল হাসনাত পুরস্কার' দেয়া হলে তিনি সেটা গ্রহণ করেছিলেন কোনও প্রতিষ্ঠিত সংস্থার পক্ষ থেকে নয়, একজন সম্মানিত ব্যক্তির পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে ঐ প্রয়াত সাহিত্যিকের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদানের অভিপ্রায়ে আর একজন যথার্থ সাহিত্যিককে সম্মানিত করা হয়েছে বলে। একই রকম আরেকটি দৃষ্টান্ত রয়েছে 'বিসিসি ফাউন্ডেশন' নামের একটি সংস্থা তাঁকে নিয়মিত বৃত্তি দিতে চাইলে তা প্রত্যাখ্যান করার মধ্যে। ঐ প্রতিষ্ঠানটি যে ভাষায় উক্ত বৃত্তি প্রদানের কথা তাঁকে অবগত করেছিল তা যথেষ্ট সম্মানজনক ছিল না বলে তিনি সেই নিয়মিত বৃত্তি প্রত্যাখ্যান করেন। ঐ বৃত্তির মাসিক অর্থের পরিমাণ ছিল তিন হাজার টাকা করে। পরে অবশ্য ঐ বৃত্তি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের উপদেষ্টা অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ-এর হস্তক্ষেপের ফলে উক্ত বৃত্তি প্রদান পত্রের ভাষা সম্মানজনক করা হলে তা গ্রহণে তিনি সম্মত হন। যে দেশে বুদ্ধিজীবীদের যেনতেন প্রকারে পুরস্কার পাওয়ার জন্য তৎপরতা চালাতে দেখা যায় সেখানে এ দৃষ্টান্ত অদৃষ্টপূর্ব তো বটেই অভবিষ্যপ্রাপ্তব্য বলেও মনে হয়।
আবদুল হকের দিনলিপির পাতায় যেসব অনতিক্ষুদ্র লেখার সন্ধান পাওয়া যায় তাতে আমরা এক সৎ বুদ্ধিজীবীর পরিচয় খুঁজে পাই। বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখের আগের ও পরের দিনগুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণের মধ্যে তাঁর যে নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় আছে এবং একই সময় সমকালীন প্রধান বুদ্ধিজীবীদের বিভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির যে পরিচয় পাওয়া যায় তাতে তাঁর যথার্থ বুদ্ধিজীবী সত্তা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ঘটনার ঝঞ্ঝার মধ্যে বসেও যিনি নির্মোহ ও নিরাসক্তভাবে ঘটনাকে বিচার ও বিশেস্নষণ করতে পারেন তিনিই তো যথার্থ বুদ্ধিজীবী। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বুদ্ধিবৃত্তির জগতে যে অবিবেচনা, ভারসাম্যহীনতা, অবিচার ও উৎকেন্দি কতা চলছে সেই পরিপ্রেক্ষিতে আবদুল হকদের মতো মননশীল মানুষের জীবন ও কর্ম বিষয়ে ব্যাপক চর্চায় তরুণ আলোকপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা একান্ত জরুরি।
আমার এবং অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হকের প্রচেষ্টায় গত একযুগ ধরে আবদুল হক সম্পর্কে কিছু লেখা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, কয়েকটি বইও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর অপ্রকাশিত রচনা নিয়ে। অন্তত একটি পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন হয়েছে এবং অভিসন্দর্ভটি [আবদুল হক : জীবন ও সাহিত্য, মাহবুব বোরহান] বই আকারে বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিতও হয়েছে। তরুণ সাহিত্যিকদের মধ্যে এ নিয়ে যে কিছুটা আগ্রহের সঞ্চার ঘটেছে তার পরিচয়ও আমরা পাচ্ছি। তা সত্ত্বেও তাঁর বিস্মৃতি কাটছে না। আবদুল হকের মতো বুদ্ধিজীবীদের জীবন ও কর্ম নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণের স্বার্থেই চচর্া করতে হবে।
=============================
গল্প- 'অলৌকিক উপাখ্যান' by হাসান মোস্তাফিজুর রহমান  গল্প- 'জয়মন্টপের জায়াজননী' by জামাল উদ্দীন  আলোচনা- 'তুর্গিয়েনেফ প্রসাদাৎ' by হায়াৎ মামুদ  গল্প- 'একটাই জীবন' by হাজেরা নজরুল  ফিচার- 'এটি একটি সংখ্যামাত্র' by রণজিৎ বিশ্বাস  গল্প- 'সোনালি চিল' by সৈয়দ মোফাজ্জেল হোসেন  গল্প- 'বোবা ইশারা' by মণীশ রায়  গল্প- 'চিরদিনের' by মঈনুল আহসান সাবের  স্মরণ- 'আবদুল মান্নান সৈয়দ সাহিত্যের এক সর্বসত্তা  আলোচনা- 'বাংলা চর্চা পরিচর্যা ও ইংরেজি শেখা'  আলোচনা- 'আমার ছেলেবেলার ঈদ আর বুড়োবেলার ঈদ'  আলোচনা- 'নৈতিক চেতনা : ধর্ম ও মতাদর্শ' by আবুল কাসেম ফজলুল হক খবর- গণতান্ত্রিক সব শক্তির সঙ্গে কাজ করতে চাই: সু চি  ফিচার- ‘নিজের কথা : বেঁচে আছি' by হুমায়ূন আহমেদ  কবিতা- সাম্প্রতিক সময়ের কিছু কবিতা  আলোচনা- 'মোস্লেম ভারত' পত্রিকায় চর্চিত মুসলিম ধর্ম- দর্শনের স্বরূপ  ইতিহাস- 'চারশ' বছরের ঢাকা লোক ঐতিহ্যের দশ-দিগন্ত' by আনিস আহমেদ  গল্পালোচনা- 'মৃত্যুর মুশায়রা' by সেলিনা হোসেন  গল্প- 'বৃষ্টি নেমেছিল' by ইমদাদুল হক মিলন  গল্প- 'সড়ক নভেল' by হাসনাত আবদুল হাই  গল্প- 'জানালার বাইরে' by অরহ্যান পামুক  স্মৃতি ও গল্প- 'কবির অভিষেক' by মহাদেব সাহা  ইতিহাস- 'ভাওয়ালগড়ের ষড়যন্ত্র' by তারিক হাসান


দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্য
লেখকঃ আহমাদ মাযহার


এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.