মোহামেডানে পালাবদল

বড় কোনো শিরোপা জয়ের পরও মোহামেডান ক্লাব চত্বরে এত ভিড় দেখা যায়নি অনেক দিন।
ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি যেন নতুন যাত্রা শুরু করল গতকাল। ক্লাব আঙিনায় অচেনা অনেক সমর্থকের পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল। অনেক দিন ক্লাবের খোঁজখবর না রাখা সাদা-কালো অন্তঃপ্রাণ সমর্থকও হাজির। সংবাদমাধ্যমের গিজগিজে উপস্থিতিতে মোহামেডানের কালকের বিকেলটা সত্যিই অন্যরকম হয়ে উঠেছিল।
উপলক্ষ্য—১৭ বছর পর ক্লাবের শীর্ষ পদ থেকে ১২ আগস্ট মোসাদ্দেক আলীর (ফালু) পদত্যাগের পর নতুন আহ্বায়ক বেছে নেওয়া। কাল ক্লাবের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সভায় নতুন আহ্বায়ক মনোনীত হলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব, মোহামেডানের সাবেক সহসভাপতি, অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি এবং ক্লাবের বিতর্কিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্য কুতুবউদ্দিন আহমেদ। এই পদে তাঁর মেয়াদ তিন মাস, এরপর নির্বাচন হওয়ার কথা।
বেশ কিছুদিন ধরে মোহামেডানের সাংগঠনিক অবস্থা ভঙ্গুর। এ অবস্থায় নতুন আহ্বায়ক তিনটি প্রধান কাজ ঠিক করে ফেলেছেন—ক্লাবকে আর্থিকভাবে সচ্ছল ও আর্থিক স্বচ্ছতা রাখা, গতবারের সব ফুটবলার দল ছেড়ে যাওয়ায় এখন যতটা সম্ভব ‘ভালো’ ফুটবল দল গঠন এবং ক্লাবকে লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত করা।
নতুন আহ্বায়ক মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্বের আভাস ছিল, যা ফুটে ওঠে আগের সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্যসচিব লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার একটা অভিযোগে। কুতুবউদ্দিনের বিরোধিতা না করা এবং ক্লাবের ফুটবল কোচ হিসেবে শফিকুল ইসলামকে (মানিক) নিয়োগ দেওয়ার জন্য মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে দাবি করে মতিঝিল থানায় জিডি করেন লোকমান।
কালকের সভা সূত্রের খবর, কুতুবউদ্দিনের আহ্বায়ক পদে মনোনয়ন চাননি কেউ কেউ। উচ্চকিত ছিলেন সাবেক ব্যাডমিন্টন তারকা কামরুন্নাহার ডানা ও তাঁর ব্যাডমিন্টন তারকা স্বামী আবুল হাশেম। নতুন আহ্বায়ক হিসেবে ডানা প্রস্তাব করেন ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহতাবউদ্দিন আহমেদের নাম। কিন্তু মাহতাব তাতে রাজি হননি।
কেউ কেউ পদত্যাগী আহ্বায়ককে ফিরিয়ে আনার দাবি তোলেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য সেটি নাকচ করে দিলেও মোসাদ্দেক আলীর অবদানকে স্বীকৃতি দিয়েছেন সবাই। ক্লাব ভবনের বর্তমান জমি স্থায়ীকরণ, গাজীপুরে স্টেডিয়াম করার জন্য সরকার থেকে জমি পাওয়া মোসাদ্দেক আলী যুগের ফসল।
কুতুবউদ্দিনের নামটা একক প্রার্থীই ছিল শেষ পর্যন্ত। লুৎফর রহমান বাদলের প্রস্তাব সমর্থন করেন বাদল রায়, মিজানুর রহমান, মাহবুবুল আনাম, সালাম মুর্শেদী, আনোয়ারুল হক (হেলাল), মোস্তাকুর রহমান প্রমুখ। ছিল লোকমান হোসেনের সমর্থনও। ৪৮ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির দু-তিনজন ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন এই সভায়। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক।
মোহামেডানকে লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত করার উদ্যোগের পরই বিরোধ শুরু ক্লাবে। মোসাদ্দেক আলীর পদত্যাগপত্রে সেটার ইঙ্গিত ছিল। কিছু সদস্যের অসহযোগিতা, ক্লাব আঙিনার পৌনে ৫ বিঘা জায়গায় বহুতল ভবন করতে কমিশন-বাণিজ্য, ভবন নির্মাণে পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ প্রভৃতি নিয়ে অনেকেই তৎপর ছিলেন বলে অভিযোগ তাঁর।
গত বছরের ৬ জুন ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় গৃহীত হয়েছিল মোহামেডানকে লিমিটেড করার প্রস্তাব। তখন নির্বাহী কমিটি বিলুপ্ত করে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির আহ্বায়ক হন মোসাদ্দেক আলী। লিমিটেড কোম্পানি করার অন্যতম শর্ত ঢাকা রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধন করতে গিয়েই সমস্যা বাধে। গত ২৯ ডিসেম্বর নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হয়। এ নিয়ে হাইকোর্টে মামলা হলে ব্যাপারটা থমকে যায়। আহ্বায়ক কমিটির আবেদনে হাইকোর্ট জয়েন্ট স্টক কোম্পানিকে শোকজ করে জানতে চেয়েছেন—কেন মোহামেডানকে নিবন্ধন দেওয়া হবে না।
গেরো খুলতে এবং ক্লাবের ভিত্তি শক্তিশালী করতে কুতুবউদ্দিনকে আনা হলো শীর্ষ পদে। বাদল রায় যেমন বললেন, ‘যোগ্য লোক দায়িত্ব নিয়েছেন। সাংগঠনিক কাজে এখন গতি আসবে।’ খোন্দকার জামিলউদ্দিনের কথা, ‘খুব ভালো একটা কাজ হয়েছে।’ সাবেক ফুটবলার সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বিরও খুশি, ‘যোগ্য লোকের হাতে দায়িত্ব পড়েছে।’
এর আগে মোহামেডানের সভাপতি ছিলেন খাজা আজমল, গুল মোহাম্মদ আদমজী, মইনুল ইসলাম, মহিউদ্দিন আহমেদ খান, আবদুল মোনেম, মোসাদ্দেক আলী। ‘নতুন নেতা’ কুতুবউদ্দিন আহমেদ কতটা এগিয়ে নিতে পারেন ক্লাবকে, সেটিই দেখার।

No comments

Powered by Blogger.