ডিএসইর বাজার মূলধন তিন লাখ কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়াল

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার হিসেবে পরিচিত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন বা তালিকাভুক্ত সব শেয়ারের সম্মিলিত বাজার মূলধন তিন লাখ কোটি টাকার নতুন মাইলফলক অতিক্রম করেছে।
গতকাল বুধবার স্টক এক্সচেঞ্জটিতে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ সিকিউরিটিজের দাম বাড়ায় বাজার মূলধনের পরিমাণ আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
বাজার মূলধনের নতুন এ পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৪৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বছর দেড়েক আগেও যা মাত্র ১৮ শতাংশ ছিল। অর্থাৎ, দুই বছরেরও কম সময়ে ডিএসইর বাজার মূলধন দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে বাজারমূল্যে দেশের জিডিপির পরিমাণ গণনা করা হয়েছে ছয় লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।
তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের (বিএসই) বাজার মূলধন জিডিপির ১১১ দশমিক ৩৬ শতাংশের মতো। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন সে দেশের জিডিপির মাত্র ৩২ শতাংশ।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের মন্দার কারণে ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকেছে। ফলে বাজারে নগদ অর্থ বা তারল্য প্রবাহ অনেক বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী শেয়ারের সরবরাহ না বাড়ায় তালিকাভুক্ত বিদ্যমান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। মূলত এরই প্রভাবে বেড়েছে বাজার মূলধন।
তাঁরা এও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে বেশ কয়েকটি বড় মূলধনের কোম্পানি তালিকাভুক্তিও বাজার মূলধন বাড়াতে কিছুটা ভূমিকা রেখেছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে পারেনি। তাই বলা যায়, শেয়ারের সরবরাহ বৃদ্ধিজনিত কারণে নয়, বরং দাম বাড়ার কারণেই বাজার মূলধন বাড়ছে।
তাঁদের মতে, দাম বাড়ার প্রভাবে বাজার মূলধন বাড়তে থাকলে তা বাজারের ঝুঁকিই বাড়াবে।
বাজার পরিস্থিতি: সপ্তাহের শুরুতে বাজারে কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা ছিল। কিন্তু গত দুই-তিন দিনে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই সূচক ও লেনদেনে আবারও চাঙাভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ৮৬ পয়েন্ট বেড়ে ছয় হাজার ৭১৯ পয়েন্ট অতিক্রম করেছে। স্টক এক্সচেঞ্জটির ইতিহাসে এটাই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সূচকের নজির।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচকও ২৯৩ পয়েন্ট বেড়ে ১৯ হাজার ৯৮৮ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে।
দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই গতকাল তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, এভাবে দাম বাড়ার কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গড় পিই বা শেয়ারের আয় অনুপাতে দাম প্রায় ২৫ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর বাজারের চেয়ে যা অনেক বেশি। এ অবস্থায় বাজারের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে নতুন শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
বিশ্লেষকেরা আরও বলেন, বাজারের অতি মূল্যায়িত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) একজন বিনিয়োগকারীকে ১০ কোটি টাকার ওপরে ঋণ-সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফলে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো তাদের কোনো গ্রাহককে এর বেশি ঋণ দিচ্ছে না। এতে বিনিয়োগকারী স্বল্প মূলধনের কোম্পানিগুলোর দিকে বেশি করে ঝুঁকে পড়েছে।
কারণ, স্বল্প মূলধনের কোম্পানির শেয়ারে অপেক্ষাকৃত কম টাকা নিয়ে কারসাজির মাধ্যমে সহজেই দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ফলে অনেক মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির পিই কম হওয়ার পরও কেবল বড় মূলধনের কারণে বিনিয়োগকারীদের সেদিকে আগ্রহ কম।

No comments

Powered by Blogger.