লক্ষ্য মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া



২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়া, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার আট শতাংশে উন্নীত করা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যমাত্রাকে প্রাধান্য দিয়ে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রথম অংশের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
উন্নয়নের বহুমাত্রিক কৌশল থাকবে এই ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১০-১৫)। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর আলোচনার জন্য তা পাঠানো হবে জাতীয় সংসদে।
গতকাল বুধবার পরিকল্পনা কমিশনে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রথম অংশের খসড়ার ওপর অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেছেন।
অর্থমন্ত্রী এও বলেছেন, ‘কোনো পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাই পূর্ণাঙ্গ দলিল নয়। এটি মূলত কৌশল ও লক্ষ্যমাত্রা। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাও তাই।’
পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার ও পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তবে মূল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের প্রধান ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, অর্থসচিব মোহাম্মদ তারেক, পরিকল্পনাসচিব হাবিবউল্লাহ মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান প্রমুখ।
অর্থমন্ত্রীর মতে, পরিকল্পনা কমিশন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। একাধিক সভার পর সম্প্রতি এর খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। আজ বুধবার এর ওপর সবাই মতামত দিয়েছেন। কিছুদিন পর তা মন্ত্রিসভায় যাবে। তারপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে জাতীয় সংসদে।
দ্বিতীয় অংশের খসড়া আরও কিছুদিন পর চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, নির্বাচনী ইশতেহার এবং ‘রূপকল্প ২০২১’-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা হয়েছে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া। তবে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের আগে একে আরও নতুন করে সাজানো হবে।
রূপকল্প-২০২১ দুটি পর্যায়ে বাস্তবানের কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পর আরও একটি পরিকল্পনা থাকবে। ষষ্ঠটির মেয়াদ থাকবে ২০১৫ সাল পর্যন্ত।
এ এম এ মুহিত বলেন, ‘অর্থনীতিতে আমরা একটা গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। পাশাপাশি চাই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে। সে জন্যই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অনেক ভালো দিক রয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে সাড়া জাগানো কিছু কাজও করেছে বাংলাদেশ। এটি আসলে এক অদ্ভুত দেশ।
উদাহরণ হিসেবে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রবৃদ্ধির নিম্ন হারের পাশাপাশি দেশটি ঠাসা দরিদ্র মানুষে। তার পরও অসাধারণ কিছু কাজ কিন্তু হয়েছে। বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ, স্যানিটেশন, শিক্ষায় সাফল্য উল্লেখ করার মতো।
২০ মাস পার হওয়ায় বর্তমান সরকারের মেয়াদ আছে আর তিন বছরের কিছু বেশি। সেখানে রূপকল্প ২০২১-এর পরিকল্পনা কীভাবে করা হয়—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পরিকল্পনা এমনভাবে করা হবে, জাতীয় দিক বিবেচনা করলে একে বদলানো মুশকিল হবে। যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনেক অজনপ্রিয় ছিল। লোকে অনেক গালাগালি করেছে। তারপরও তাদের কিছু বিষয় কিন্তু বাদ দেওয়া হয়নি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আসলে একটি উদাহরণ তৈরি করতে চাই। বলতে চাই, সরকার একটি চলমান সংস্থা, প্রক্রিয়া বা প্রচেষ্টা। ভবিষ্যতে যে সরকারই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাক না কেন, জাতির প্রয়োজনে নীতি ও দিকনির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
জানা গেছে, সামষ্টিক অর্থনীতি নীতিবিষয়ক অধ্যায়টি আটটি বিষয় নিয়ে সাজানোর জন্য একমত পোষণ করেছেন সদস্যরা। এগুলো হলো আগের অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি পর্যালোচনা করা; প্রবৃদ্ধির কৌশল ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ; সামষ্টিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও আয়বৈষম্য কমিয়ে আনার কৌশল গ্রহণ; প্রতিবছর সামষ্টিক অর্থনীতির পরিকল্পনা গ্রহণ; সামাজিক সম্পদ ও কৌশল গ্রহণ; দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সামাজিক নিরাপত্তা জোরদারকরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার বলেন, বাংলাদেশ অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার উদাহরণ তৈরি করেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, সিডর, আইলার মতো দুর্যোগও কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা দেখিয়েছে দেশটি। আর মুক্তিযুদ্ধ তো আছেই। অনেকে ভেবেছিল, দেশটি বুঝি আর দাঁড়াতে পারবে না। তাদের আশঙ্কা গুঁড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ ঠিকই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।
তবে এখনকার চ্যালেঞ্জ হলো মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়া। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ওই বিবেচনা থেকেই করা হচ্ছে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

No comments

Powered by Blogger.