তাঁরাও দেখবেন ম্যাচটা

‘এই ম্যাচ দেখা খুবই কষ্টের হবে। তবু দেখতে যাব’—শহিদুল্লাহ টিটু।
‘এই ম্যাচ’ মানে আবাহনী-মোহামেডান লড়াই। হকি লিগে দুই প্রধানের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ দেখতে যাবেন আরেক বড় দল ঊষার খেলোয়াড়েরা, সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু এই দেখায় মিশে থাকবে তাঁদের কষ্ট, হতাশা, হাহাকার। গত তিনবারের চ্যাম্পিয়ন ঊষা যে এবারের হকি লিগে খেললই না!
ঊষার খেলোয়াড়দের চোখে-মুখে বিষণ্নতা। কথা বললেই যেন দীর্ঘশ্বাস বেরোচ্ছে। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দলটির জার্সি গায়ে এবার খেলার কথা ছিল জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক গোলরক্ষক রাসেল খান বাপ্পির। বললেন, ‘জীবন থেকে একটা বছর হারিয়ে গেল!’ একই দলের রাজীবের কথায়, ‘ম্যাচ দেখতে আসব, কিন্তু যা হলো হকির জন্য তা খুবই খারাপ।’
তা হোক, আজ আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে নির্ধারিত হবে দুই বছর পর মাঠে ফেরা প্রিমিয়ার হকি লিগের শিরোপা। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে বিকেল চারটায় শুরু ম্যাচে ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন ১২ ম্যাচে ৩৬ পয়েন্ট পাওয়া মোহামেডান। সমান ম্যাচে ৩৩ পয়েন্ট আবাহনীর। আকাশি-নীলেরা জিতলে প্লে-অফে।
এই শিরোপার জন্য মোহামেডানের অপেক্ষা ২০০২ সালের পর থেকে। ওই বছর টানা চারবার শিরোপা জিতে রেকর্ড গড়া সাদা-কালোরা সেই যে আবাহনী-ঊষার দাপটের কাছে মার খেতে শুরু করল, ৮ বছর থাকল শিরোপাহীন। আজ আবার লিগের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে ঘরে ফেরার উপলক্ষ তাদের সামনে।
আবাহনীকে অত পেছনে তাকাতে হচ্ছে না। মোহামেডান সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর গত চারটি লিগের দুটির শিরোপা জিতেছে দলটি। গত লিগের আগেরবার ঊষার সঙ্গে যৌথভাবে এসেছে শেষ শিরোপা। গতবার হ্যাটট্রিক শিরোপাজয়ী ঊষার সামনে মোহামেডানকে ছোঁয়ার সুযোগ ছিল এবার। কিন্তু সেই সুযোগ তারা নিজেরাই নিল না!
ঊষার কর্মকর্তাদের অদূরদর্শিতার ফল এটা। গত ক্লাব কাপের বিতর্কিত ফাইনালে ঊষার বিপক্ষে মোহামেডানের জয় বাতিল করার প্রতিশ্রুতি ফেডারেশন এড়িয়ে যাওয়ায় লিগের প্রথম ম্যাচে মাঠেই আসেনি ঊষা। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম বিভাগে নেমে যাওয়ার কথা তাদের। ঊষা অবশ্য নিজেদের যুক্তি নিয়ে আদালতে গিয়েছে। ওদিকে সমস্যার সমাধানে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হকি ফেডারেশন। তারই জেরে আগের চেয়েও লিগটা অনেক বেশি নিরুত্তাপ হলো এবার।
আবাহনীতে খেলতে আসা সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক গোলের মালিক পাকিস্তানি তারকা সোহেল আব্বাসের কাছে লিগটাকে খুব ম্যাড়মেড়ে মনে হয়েছে, ‘এই লিগে প্রতিদ্বন্দ্বিতার খুব অভাব। ঊষা থাকলে তাও আরেকটু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো।’ মোহামেডানের পাকিস্তানি খেলোয়াড় পাকিস্তান জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ সাকলায়েনের মুখেও একই কথা, ‘ঊষা না থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাই তো কমে গেছে এই লিগে।’
এই লিগে খেলে আনন্দ পেলেন না খেলোয়াড়েরা। আবাহনী অধিনায়ক ফারুক আহমেদ কাল ক্লাবের বারান্দায় বসে বললেন, ‘এমন লিগ আগে কখনো খেলিনি। ঊষার না থাকা সত্যিই বেদনাদায়ক। খেলে আনন্দ পেলাম না।’ মোহামেডান স্ট্রাইকার জিমিও কথা বললেন একই স্বরে, ‘ঊষা থাকলে লিগটা জমত আরও বেশি।’
ঊষা নেই, কিন্তু আবাহনী-মোহামেডান তো আছে! পুরোনো শত্রুকে হারানোর সেই প্রতিজ্ঞা, প্রতিশ্রুতির এতটুকু কমতি নেই। তারুণ্যনির্ভর আবাহনী ৫ জন পাকিস্তানিকে এনেছে অনেক আগেই। কাগজ-কলমে সেরা দল মোহামেডান তিন পাকিস্তানিকে এনেও যথেষ্ট মনে করল না। এই ম্যাচের জন্য কাল সাদা-কালোরা উড়িয়ে নিয়েছে মালয়েশিয়ার জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড সেই চুয়া বুনকে। ক্লাব কাপের ফাইনালে যাকে নিয়েই গন্ডগোলের সূত্রপাত।
প্রথম পর্বে আবাহনীকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল মোহামেডান। সেদিন আবাহনীর পেনাল্টি কর্নার বিশেষজ্ঞ সোহেল আব্বাসকে ঠেকিয়ে দিয়েছিল সাদা-কালোরা। আজও কি...?
ঊষার খেলোয়াড়দের মনটা বিষাদেই ভরে যাবে এসব দেখে!

No comments

Powered by Blogger.