আদ্রিয়ানো এবার রোমার সম্রাট

ইতালি তাঁর জীবন, আবার ইতালিই তাঁর মরণ! বছর দেড়েক আগে আদ্রিয়ানো নিজেই বলেছিলেন, ইতালি তাঁর কাছে বিষের মতো লাগছে। কিছুতেই মন বসছে না। ইন্টার মিলান ছেড়ে স্বদেশ-যাত্রা করলেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার। আবার ফিরে এলেন ইতালিতে। ইন্টার মিলানে নয়, ফিরলেন এএস রোমার হয়ে।
বিশ্বকাপের মাঝে অনেকটা নীরবে-নিভৃতেই গত মাসে চুক্তি সই করেছেন রোমার সঙ্গে। আদ্রিয়ানো ইতালিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই পড়ে যায় হইচই। প্রায় আট বছর ইতালিতে ছিলেন, ইন্টার মিলানের সমর্থকেরা একসময় ভালোবেসে তাঁকে সম্রাট ডাকত। সম্রাটের প্রত্যাবর্তনে হইচই পড়তেই পারে। তবে আদ্রিয়ানোকে নিয়ে হইচই এবার অন্য কারণে। এ কোন আদ্রিয়ানো ফিরে এলেন? চারদিকে উড়ছে এই প্রশ্নটাই। ১০০ কেজির ওপরে ওজন, যেন মোটা এক ঢোল। যে ওজন থাকার কথা তার চেয়ে প্রায় ২৫ কেজি বেশি যেটা। এই আদ্রিয়ানো আসলে কী করতে পারবেন?
পারবেন, আদ্রিয়ানো বললেন, তিনি পারবেন। রোমা অধিনায়ক ফ্রান্সেসকো টট্টি আর স্ট্রাইকার মির্কো ভুচিনিচ মিলে দারুণ এক ত্রয়ী গড়ে তুলতে পারবেন বলেই তাঁর বিশ্বাস। রোমার প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতিতে অংশ নেওয়া আদ্রিয়ানো সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘ত্রয়ী ধারণাটা আমার পছন্দ। আমাদের কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। আমাদের একসঙ্গে খেলাটা খুবই সম্ভব। টট্টি মাঝখানে এবং আমি আর মির্কো (ভুচিনিচ) দুই পাশে। সময়ের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়াটা ভালো হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে কথা উঠেছে আদ্রিয়ানোর ওজন নিয়ে। এই ওজন তিনি কী করে কমাবেন, বা ওজনটা কত কেজি কমাতে হবে বলে মনে করেন? ব্রাজিলের হয়ে ৪৯ ম্যাচে ২৭ গোল করা আদ্রিয়ানো অবশ্য বাড়তি ওজন নিয়ে তেমন কিছু বলতে চাইলেন না, ‘ওজনের ব্যাপারে কত কেজি-টেজির ব্যাপারটা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। তবে এটা বলতে পারি, এক মাসের মধ্যে আমি শারীরিকভাবে পুরো ফিট হয়ে উঠব।’
বছর দেড়েক আগে ইতালি থেকে যে কারণে আদ্রিয়ানো চলে গেলেন, কথা হলো তা নিয়েও। ব্রাজিলের ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গোর যুবদল দিয়েই তাঁর ফুটবল-যাত্রা শুরু। ২০০০ থেকে ২০০১—এক বছর ফ্ল্যামেঙ্গোর মূল দলে খেলেই নজর কাড়েন ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর। ২০০১ সালে ইন্টার মিলান নিয়ে নেয় তাঁকে। ২০০৯ পর্যন্ত ইন্টার মিলানে ছিলেন। এর মাঝে ধারে খেলেছেন ফিওরেন্টিনা, পার্মা আর সাও পাওলোতে।
সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই চলছিল। তবে ২০০৮-এ আদ্রিয়ানোর বাবা মারা যান। এর পর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় বান্ধবী মাচেদার সঙ্গে। পরপর দুটি ধাক্কা সহ্য করতে পারেননি আদ্রিয়ানো। শোক সামলে উঠতে নাকি অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়েন। তীব্র হতাশাও ঘিরে ধরে তাঁকে। পরে আদ্রিয়ানো নিজেই সিদ্ধান্ত নেন দেশে ফিরে যাওয়ার। গত বছর যোগ দেন নিজের পুরোনো ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গোতে। গত মৌসুমটা সেখানে ভালো কাটানোর পরই ডাক পান রোমা থেকে।
ওই সময়টায় নিজের চারদিকে একটি ধোঁয়াশাই তৈরি করে রেখেছিলেন আদ্রিয়ানো। আসলে কী ঘটেছিল, সেটা অনেকের পক্ষেই জানা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্নেরও উত্তর দিতে হয়েছে তাঁকে। আদ্রিয়ানো বললেন, ‘আসলে আমি অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়িনি। আমি হতাশায় ভুগছিলাম। নিজেকে খুবই বিষণ্ন এবং একা মনে হতো। এ কারণেই ব্রাজিলে চলে গিয়েছিলাম। আমার পরিবার আর বন্ধুরা সব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আমাকে সাহায্য করেছে। এখন ভালো আছি।’

No comments

Powered by Blogger.