সীমান্তে সামরিক মহড়া শুরু দ. কোরিয়ার

দুই কোরিয়ার মধ্যকার উত্তেজনাপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় গতকাল সোমবার সামরিক মহড়া শুরু করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। পাশাপাশি গত মার্চে সে দেশের একটি রণতরীডুবির ঘটনায় উত্তর কোরিয়া দায়ী—এ ব্যাপারে দেশের ও দেশের বাইরের সন্দেহ দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে সিউল।
দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ মিয়ু-হওয়ান বলেন, ‘আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা রণতরী চেওনানের ডুবে যাওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ ও সন্দেহ ছড়ানোর চেষ্টা করছেন।’
গত ২০ মে একটি বহুজাতিক তদন্ত দল তাদের প্রতিবেদনে জানায়, তদন্তে তারা অকাট্য প্রমাণ পেয়েছে, উত্তর কোরিয়ার ডুবোজাহাজ থেকে ছোড়া টর্পেডোর আঘাতে যুদ্ধজাহাজ চেওনান ডুবে যায়। এতে ৪৬ জন নিহত হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিতসহ বেশ কিছু দমনমূলক পদক্ষেপ নেয় দক্ষিণ কোরিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সমর্থনে তারা জাতিসংঘে পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের প্রস্তাব তোলার কথা ঘোষণা করে। এর জবাবে ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে উত্তর কোরিয়া যুদ্ধ শুরু করার হুমকি দেয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, উত্তর কোরিয়ার দক্ষিণ সীমান্তঘেঁষা একটি নদীর কাছে কয়েক হাজার সেনা সদস্য ওই সামরিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছেন।
মহড়ায় কয়েক ডজন সামরিক হেলিকপ্টার, ৫০টি ট্যাংক ও অন্যান্য সাঁজোয়া যানও অংশ নিচ্ছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনহাপ বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, রণতরীডুবির জেরে উত্তর কোরিয়াবিরোধী প্রচারণা চালানোর জন্য বেলুনে করে প্রচারপত্র বিলির কর্মসূচি বাতিল করেছে সিউল। তবে সামরিক বাহিনী এ খবর নিশ্চিত করেনি।
রণতরীডুবির ঘটনায় উত্তর কোরিয়াকে সরাসরি দোষারোপ করা থেকে বিরত রয়েছে চীন। উত্তর কোরিয়াকে তিরস্কার করার জন্য গতকাল টোকিওতে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাওকে আবার অনুরোধ জানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউকিও হাতোইয়ামা। চীন বলেছে, তারা তদন্ত প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করছে। অন্যদিকে রাশিয়া এই ঘটনা যাচাই করে দেখতে দক্ষিণ কোরিয়ায় তাদের একটি নৌবিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছে। মস্কো বলেছে, জাহাজডুবির ঘটনায় উত্তর কোরিয়ার জড়িত থাকার শত ভাগ প্রমাণ দরকার তাদের। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘে ব্যবস্থা নিতে চীন ও রাশিয়ার সমর্থন দরকার সিউলের।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের একটি অংশও রণতরীডুবির ঘটনায় পিয়ংইয়ংয়ের জড়িত থাকার বিষয়ে সংশয় জানিয়েছে। স্থানীয় পত্রিকা হ্যানকক ইলবো পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২৪ শতাংশই ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ব্যাপারে অনাস্থা জানিয়েছেন। তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাও তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের সন্দেহ দূর করতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সামাজিক নেটওয়ার্ক ওয়েবসাইট টুইটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে ২০ জন, প্রতিরক্ষাবিষয়ক ব্লগারদের মধ্যে ১০ জন ও কলেজপড়ুয়া ৩০ জন সংবাদকর্মীকে নির্বাচিত করে রণতরী চিওনানের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে নিয়ে যাবে। একটি নৌঘাঁটিতে ওই ধ্বংসাবশেষ রাখা আছে

No comments

Powered by Blogger.