প্রচণ্ড চাপে বামফ্রন্ট সরকার নির্বাচন এগিয়ে আনার দাবি

একের পর এক নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে শোচনীয়ভাবে হেরে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার এখন প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে। ১৯৭৭ সালের জুন মাসে ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম বামফ্রন্টকে এই রাজ্যে বিরোধী আসনে বসার কথা ভাবতে হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো এই অবস্থায় বিধানসভা নির্বাচন এগিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছে। আগামী বছর মে মাসের মধ্যে এই নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
২০০৮ সালের পঞ্চায়েত (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচনে বামফ্রন্টের চেয়ে এগিয়ে যায় তৃণমূল। সংকেত পাওয়া যায় ৩২ বছরের বাম জমানার অবসানের। এরপর ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে গো-হারা হারে বামফ্রন্ট। এবার সদ্য সমাপ্ত পৌর নির্বাচনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে বামফ্রন্ট তাদের হারানো জমি পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। বরং তৃণমূল তার একক শক্তিতে অনেকটাই বলীয়ান।
পৌর নির্বাচনে নিজ দলের বিপুল বিজয়ের পর কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। জনগণ এই সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সুতরাং, এই সরকারের অবিলম্বে ক্ষমতা ছেড়ে নতুন করে জনগণের রায় নেওয়া উচিত। এই দাবিতে একইভাবে সোচ্চার হয়েছে কংগ্রেসও। তারাও মনে করে ৩৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্ট সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে।
রাজ্য কংগ্রেসের নেতারা ভাবতে পারেননি, মমতার দল এককভাবে এতটা সফল হবে। দলের নেতারা বুঝেছেন, তৃণমূলের সঙ্গে জোট ভেঙে কংগ্রেস ভুল করেছে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টকে হটাতে মমতার বিকল্প নেই। এই উপলব্ধি থেকেই কংগ্রেস ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, যে ২৮টি পৌরসভায় ঝুলন্ত অবস্থা তৈরি হয়েছে, সেখানে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস যৌথভাবে বোর্ড গঠন করবে।
এদিকে কংগ্রেসের নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় পৌরসভার নির্বাচনে দলের বিপর্যয়ের দায় স্বীকার করে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। ইস্তফাপত্র পৌঁছানো হয়েছে দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর কাছে। এ ব্যাপারে সোনিয়া অবশ্য এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।
অন্যদিকে বামফ্রন্টকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসতে যে কংগ্রেসের সাহায্যের প্রয়োজন, এ কথাটি আবার নতুন করে বুঝতে পেরেছেন মমতাও। তাই মমতাও এখন নতুন করে কংগ্রেসের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, আর এই দুই দলের মধ্যে তিক্ততা নয়। কাজ করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।
এদিকে বামফ্রন্টের অনেক মন্ত্রীও চাইছেন, এখন জনগণের রায় মেনে নিয়ে বিধানসভা ভেঙে আগাম নির্বাচন ঘোষণা করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.