মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য জটিল হয়ে উঠছে

ইসরায়েলের সঙ্গে বন্ধুত্ব অক্ষুণ্ন রেখে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করাটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য জটিল হয়ে উঠছে। ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মুসলিম বিশ্বের জন্য নতুন বার্তা ঘোষণা করেছিলেন। ২০০৯ সালের ৪ জুন ঐতিহাসিক কায়রো বক্তৃতায় মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে নতুন সম্পর্ক বিনির্মাণের ঘোষণা দেন তিনি। কায়রো বক্তৃতার এক বছর গড়ালেও ওয়াশিংটনের নীতিতে নাটকীয় কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। চলতি সপ্তাহে গাজা অভিমুখী ত্রাণবহরে ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে।
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, গাজায় ইহুদি বসতি স্থাপন নিয়ে ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক টানাহেঁচড়া চলছে। ত্রাণবহরে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের পরও ওবামা প্রশাসন ইসরায়েলের স্বার্থ থেকে পৃথক অবস্থান প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েলকে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অনিচ্ছুক না অক্ষম, এ নিয়ে এখন সংশয় সর্বত্র।
আহরাম সেন্টার ফর পলিটিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইমাদ গ্যাড বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের সম্পর্ক নিয়ে এখন দুটি মতই বিরাজমান। এক পক্ষের মতে, প্রেসিডেন্ট ওবামা চাইলেও ইসরায়েলের সঙ্গে অজনপ্রিয় সম্পর্কের নাটকীয় কোনো পরিবর্তন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। অন্য পক্ষের মতে, কায়রো বক্তৃতায় বারাক ওবামা মুসলিম বিশ্বের প্রতি সম্পর্কোন্নয়নের আন্তরিক ঘোষণাই দিয়েছিলেন। এ পক্ষটি এখনো বিশ্বাস করেন, রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও প্রেসিডেন্ট ওবামা সম্পর্কোন্নয়নের এই চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।
প্যারিসভিত্তিক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এন্টইন বেসবাউস বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা সত্ত্বেও বহির্বিশ্ব ওয়াশিংটনকে ইসরায়েলের ধর্মপিতা মনে করে।
গাজার জন্য ত্রাণবহরে ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ডের পর ফুঁসে ওঠা মুসলিম বিশ্বের ক্ষোভ প্রশমনে ওয়াশিংটনের উদ্যোগ লক্ষণীয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে এ-সংক্রান্ত বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। পুরো ঘটনার আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে গ্রহণযোগ্য তদন্তের জন্য ইসরায়েলকে চাপ দেওয়া হয়েছে। যদিও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি চুক্তির অপরিহার্য পূর্বশর্ত পালনের জন্য ইসরায়েলকে বাধ্য করানো যায়নি। ওবামা প্রশাসন ফিলিস্তিনে নতুন ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বন্ধ করতে পারেনি।
উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে আসছেন। বৈঠক করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি-প্রক্রিয়া নিয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ওবামা প্রশাসনের বরাত দিয়ে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, হোয়াইট হাউস থেকে ইসরায়েলকে ফরাসি প্রস্তাব অনুযায়ী নৌবহরে হামলার ঘটনা তদন্ত করার জন্য বলা হচ্ছে। ফরাসি প্রস্তাবে রেডক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির তত্ত্বাবধানে তদন্তের কথা বলা হয়েছে। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক আরব বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জটিল হয়ে উঠেছে। তুরস্ক এ পরিস্থিতির আর অবনতি দেখতে চায় না বলে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছে।
গাজায় সম্প্রতি ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ছিল সতর্ক এবং ভারসাম্যমূলক। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। যদিও এমন ঘটনার খবর আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের জানা ছিল। ওয়াশিংটন থেকে ইসরায়েলকে আক্রমণাত্মক না হওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছিল। তার পরও ইসরায়েলি তৎপরতার ওপর যুক্তরাষ্ট্র কোনো প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি।
মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কোন্নয়নে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কটি এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের বোঝা ঝেড়ে ফেলা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্য ক্রমশ দুরূহ হয়ে উঠেছে। ওয়াশিংটন পোস্ট গত শুক্রবারের প্রতিবেদনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে লিখেছে, ইসরায়েল তাদের পদক্ষেপে নিজেদের স্বার্থই দেখছে, উপেক্ষিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ। ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আরও দায়িত্বশীল এবং বিশ্বস্ত হওয়ার জন্য ওবামা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.