শিক্ষকদের জবাবদিহি -নিশ্চিত করতে হবে ঢাবিতে সেশনজট

এক যাত্রায় দুই ফল হওয়ার কথা না থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সেটাই ভবিতব্য হয়েছে। রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা একই সঙ্গে ভর্তি হয়েছিলেন। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা পাস করে চাকরি করলেও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষাই শেষ হয়নি। এটি শুধু একটি বিভাগ বা অনুষদের সমস্যা নয়, সময়মতো কোর্স শেষ করার নজির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব কমই আছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমাজবিজ্ঞান ও কলা অনুষদে পিছিয়ে থাকা বিভাগগুলো হলো লোকপ্রশাসন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, বাংলা, পালি ও ইংরেজি। ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর পাস করার কথা ২০০৯ সালের জুনের মধ্যে। কিন্তু অনেক বিভাগের পরীক্ষার দিনক্ষণই ঠিক হয়নি। কয়েকটি বিভাগে দু-তিন মাসের মধ্যে পরীক্ষা হবে বলে জানানো হয়েছে। ফল প্রকাশ হতে বছর শেষ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে নতুন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরাও চলে আসবেন। ফলে বাড়বে সেশনজট। কেন এমনটি হচ্ছে? এ জন্য কি শিক্ষার্থীরা দায়ী? মোটেই নয়। বরং কয়েকটি বিভাগের যথাসময়ে পরীক্ষার ফল প্রকাশের দাবিতে তাঁরা বিক্ষোভও করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, তিন মাসের মধ্যে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করার কথা থাকলেও বেশির ভাগ শিক্ষক তা মানেন না। তাঁরা সময়মতো ক্লাস নেন না, পরীক্ষা নেন না, খাতা দেখেন না। তাহলে একাডেমিক দিনপঞ্জির বিষয়টি শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ? কোনো কোনো শিক্ষক নাকি খাতা দেখতে ১০ মাসও সময় লাগান। শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতার খেসারত দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। পাঁচ বছরের কোর্স শেষ করতে সাত-আট বছর লেগে যায়। সংশ্লিষ্ট কারও বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে এমন দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে। জবাবদিহি না থাকার কারণেই এমনটি হয়ছে।
আমরা আশা করব, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষকদের সময়মতো ক্লাস-পরীক্ষা নিতে ও ফল প্রকাশ করতে বাধ্য করবে। আর শিক্ষক মহোদয়দের সবিনয়ে বলব, তাঁরা আরেকটু দায়িত্বশীল ও কর্তব্য-সচেতন হোন। বাইরে তাঁরা যা-ই করুন না কেন, অন্তত শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না।

No comments

Powered by Blogger.