স্বপ্ন দেখেন ওঁরা

শামসুন নাহার (নূপুর) তখনো জানতেন না ‘শ্যুটিং’ খেলাটা কী? ভেবেছিলেন, ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হবে। কোচ বাবুল ইসলাম যখন জানালেন, শ্যুটিংয়ের বাছাইয়ের জন্য তাঁকে নির্বাচন করা হয়েছে, তখন তো কেঁদে-কেটে একশেষ। রাইফেল-বন্দুক আর গুলি নিয়ে এটি খেলতে হয় শুনে ভয়ে আরও অস্থির। শফিপুর আনসার একাডেমির বাছাই ক্যাম্পের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা কাল এভাবেই বলছিলেন বাংলাদেশ আনসারের এই তরুণী। সারা দেশ থেকে শামসুন নাহারের মতো প্রায় ৪০০ তরুণ-তরুণী এসেছেন ইস্টার্ন হাউজিং আন্তক্লাব শ্যুটিংয়ে অংশ নিতে।
সচরাচর ঢাকার বাইরে হয়ে থাকে আন্তক্লাব শ্যুটিং। তবে এবার তা হচ্ছে ঢাকাতেই, গুলশান শ্যুটিং কমপ্লেক্সে। দক্ষিণ এশীয় গেমস, কমনওয়েলথ শ্যুটিং ও ইন্দো-বাংলা গেমসের সাফল্যের পর এই প্রতিযোগিতায় ব্যাপক সাড়া মিলেছে বলে জানালেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ, ‘এত বেশি প্রতিযোগী এর আগে আমি কখনো দেখিনি। সবার মধ্যে দারুণ উৎসাহ।’ কুষ্টিয়া থেকে এসেছেন লুৎফর রহমান, আবু সালেহ নিসার উদ্দিন ও শফিকুল ইসলাম। ক্রিকেটের মতো জনপ্রিয় খেলাকে পাত্তা না দিয়ে এঁরা মেতে উঠেছেন রাইফেল-পিস্তল নিয়ে লক্ষ্যভেদের নেশায়। শফিকুলের স্বপ্ন আসিফের মতো বড় শ্যুটার হওয়ার। উৎসাহটা পাচ্ছেন কুষ্টিয়া রাইফেল ক্লাবের অতীত ইতিহাস থেকে। এই ক্লাবই তৈরি করেছে আসবাব আলী ফয়েজ, সাইফুল আলম চৌধুরীর (রিংকি), শোয়েবুজ্জামানদের মতো জাতীয় শ্যুটার। এদের পর কেন আর সেভাবে শ্যুটার উঠে আসছে না? ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক এস এম আনসার আলী জানালেন, ‘উঠে আসছে না, ঠিক এটা বলব না। তবে মাঝখানে কিছুদিন নানা সমস্যার কারণে আমরা শ্যুটার তৈরি করতে পারিনি। তবে এখন আসাদুজ্জামান বেশ ভালো করছে। ওর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।’
শ্যুটিংয়ে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে চান বগুড়া সেনা শ্যুটিং ক্লাবের পরিতোষ সরকার, আলী রেজা নূরানী ও আবদুল্লাহ আল মামুনরা। গুলশানের শ্যুটিং কমপ্লেক্সে গাদাগাদি করে থাকাটাও তাঁদের কাছে আনন্দের একটা ব্যাপার মনে হচ্ছে। তাঁদের চোখেমুখে খেলা করছিল অন্য রকম স্বপ্ন। পরিতোষ জানালেন, ‘আমি আসিফ ভাইয়ের মতো কমনওয়েলথে সোনা জিততে চাই।’ প্রথমবারের মতো আন্তক্লাবে অংশ নিতে আসা দিনাজপুরের খালেদা পারভিনেরও একই কথা, ‘ওরা পারলে আমরা কেন পারব না!’
তিন দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতা আজ শেষ হবে, তবে কথা শুনে মনে হলো, এই তরুণদের স্বপ্ন কেবল শুরু।

No comments

Powered by Blogger.