শুধুই বার্সেলোনার রাত

প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ দুই হাত তুলে প্রার্থনা করছিল, বার্সেলোনা যাতে পা হড়কায়। রিয়ালের প্রার্থনায় কান দেয়নি স্প্যানিশ লিগের ভাগ্যদেবী। ভ্যালাদোলিদকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে স্প্যানিশ লিগের শিরোপা জিতে নিল গতবারের চ্যাম্পিয়নরা।
প্রায় পুরো মৌসুমেই চলেছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা, কিন্তু সেটি পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকে শেষের ৫ ম্যাচ আগে থেকে। শেষ পাঁচ রাউন্ডে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ প্রবেশ করে ১ পয়েন্টের ব্যবধান নিয়ে। রিয়ালের চেয়ে এক পয়েন্ট এগিয়ে থাকে বার্সা। এগিয়ে থাকে তারা দুটি এল ক্লাসিকোই জিতে মুখোমুখি লড়াইয়েও। এত কিছুর পরও শেষ রাউন্ডে শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা ছিল বার্সেলোনার।
পরশু বার্সেলোনা যদি ভ্যালাদোলিদের কাছে পয়েন্ট হারাত (ড্র কিংবা হার), আর রিয়াল মাদ্রিদ জিতত মালাগার বিপক্ষে, তাহলেই লিগটা হতো রিয়ালের। জিতেই সব হিসাব-নিকাশকে ছুড়ে ফেলেছে বার্সা। শেষে তো দেখা গেল বার্সা হারলেও শিরোপা থাকত তাদেরই হাতে। কারণ রিয়াল শেষ ম্যাচে মালাগার সঙ্গে করেছে ড্র (১-১)।
হায় রিয়াল মাদ্রিদ! এমন শূন্য হাত নিয়ে মৌসুম শেষ করতে হবে স্প্যানিশ পরাশক্তিদের, এটা কে জানত? গত বছর বার্সেলোনা ৬টি শিরোপা জিতেছে, এর মধ্যে ছিল স্প্যানিশ লিগ ও কাপ এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে ঐতিহাসিক ট্রেবল জয়ের রেকর্ড গড়াও। বার্সেলোনার এই সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়েছিল রিয়াল। বার্সার এই আধিপত্যে ইতি টানতে টাকার বস্তা নিয়ে তারা নেমেছিল খেলোয়াড় কেনাবেচার বাজারে।
খেলোয়াড় কিনতে ২৫০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে তারা। শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে এত কিছু করেও কোনো লাভ হলো কোথায়? নিজেদের মাঠে চ্যাম্পিয়নস লিগে দর্শক হয়ে থাকতে হচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদকে। আর স্প্যানিশ লিগটাও চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল বার্সেলোনার ঘরে!
রিয়ালের মাদ্রিদের ২৫০ মিলিয়ন ইউরোই জলে গেল। এর মধ্যে রিয়াল সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করেছিল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জন্য। রেকর্ড ৯৪ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে ম্যানইউ থেকে কিনেছিল রিয়াল। নিজের দামের যথার্থতা তিনি প্রমাণও করেছেন ২৬ গোল করে। তাঁকে ভালোই সঙ্গত করেছিলেন রিয়ালের পুরোনো ছেলে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার গঞ্জালো হিগুয়েইন (২৭ গোল)। ভালো খেলেছেন লিভারপুল থেকে রিয়ালে নাম লেখানো জাভি আলোনসোও।
তবে ৬৮.৮ মিলিয়ন ইউরোয় কেনা ব্রাজিলিয়ান প্লে-মেকার কাকা কি তাঁর মূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে কিছু দিতে পেরেছেন? শেষের দিকে চোটের কারণে মাসখানেক মাঠের বাইরে ছিলেন। এর আগে যত দিন মাঠে ছিলেন তখনো নিজের সেরা ফর্মে কখনোই আবির্ভূত হতে পারেননি এসি মিলানের সাবেক মিডফিল্ডার। নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন ফরাসি স্ট্রাইকার করিম বেনজেমাও।
এত টাকা ঢেলেও একটা মৌসুম শূন্য হাতেই ফিরতে হলো রিয়ালকে। রিয়ালের পুরোনো যোদ্ধা গুতি রাগটা আর ধরে রাখতে পারেননি। অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট—গুতি বলে দিলেন এমন কথাই, ‘আসলে ব্যক্তিকেন্দ্রিক একটি দল না হয়ে আমাদের সমষ্টিগত একটা দলে পরিণত হবে সবার আগে।’
বার্সেলোনার সাফল্যের মূলে কিন্তু এই সমষ্টিই। লিওনেল মেসির মতো একজন চ্যাম্পিয়ন দলে থাকার পরও বার্সা আসলে সমষ্টিগত একটা দল। মৌসুম শুরুর আগে ভাঙা-গড়া হয়েছিল বার্সেলোনাতেও। স্যামুয়েল ইতোর জায়গায় ইন্টার মিলান থেকে আদলবদল করে জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচকে আনে বার্সা। যুবদল থেকে মূল দলে সুযোগ দেওয়া হয়েছে দু-একজনকে। ভয় ছিল—সবাই মিলে একটা দলে পরিণত হতে পারবে তো? এই ভয় উড়িয়ে বার্সা মৌসুম শুরু করেছিল দুর্দান্তভাবে। প্রথম পাঁচ ম্যাচের পাঁচটি জিতে। নতুন আসা ইব্রাহিমোভিচ টানা পাঁচ ম্যাচেই করেছিলেন গোল।
মেসি ছিলেন তাঁর সেরা ফর্মে। বার্সার মূল দলে সুযোগ পাওয়া পেদ্রোও সময়মতো জ্বলে উঠেছেন। জাভি হার্নান্দেজ আর কার্লোস ইনিয়েস্তা আগলে রেখেছেন মাঝমাঠ। গোলপোস্টের নিচে ভিক্টর ভালদেজ অতন্দ্রপ্রহরী হয়ে ছিলেন। রক্ষণে জেরার্ড পিকে-কার্লোস পুয়োলরা ছিলেন অসাধারণ। আর সবাইকে এক সুতোয় বেঁধেছেন কোচ পেপ গার্দিওলা। বলতে পারেন আবারও রিয়ালের ঘাতক হয়ে উঠেছিলেন আসলে এই গার্দিওলাই।
গার্দিওলা বার্সেলোনার শিরোপা জয়ের কৃতিত্বটা অবশ্য ভাগ করে দিলেন সবার মধ্যে। সমর্থকদেরও বাদ দেননি, ‘আজ উৎসবের দিন। এই সাফল্যে অবদান রাখায় আমি সব খেলোয়াড় এবং সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাই।

No comments

Powered by Blogger.