মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর তাগিদ

মালিক, শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যে যোগাযোগের ঘাটতি থাকায় তৈরি পোশাক খাতে প্রায়ই শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। কারখানার মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তারা শ্রমিকদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন। তাঁরা শ্রমিকদের বোঝাতে ব্যর্থ হন। আর এতে শ্রমিকেরা ভুল বোঝেন মালিকদের। তাই দাবি আদায়ে আন্দোলনের পথ বেছে নেন তাঁরা।
গতকাল বুধবার স্থানীয় একটি হোটেলে জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লিফট স্ট্যান্ডার্ড আয়োজিত ‘শ্রমিক অসন্তোষ রোধে মালিক-শ্রমিক যোগাযোগ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব অভিমত তুলে ধরা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান লুত্ফুল হাই এতে প্রধান অতিথি ছিলেন।
বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ইসরাফিল আলম, সাংসদ সারাহ বেগম কবরী, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উত্পাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক শহীদুল্লাহ আজিম, শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) সমন্বয়কারী ওয়াজেদ-উল-ইসলাম খান প্রমুখ। এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) ঢাকা ব্যুরো চিফ ফরিদ হোসেন এতে সঞ্চালক ছিলেন।
পোশাক খাতে অসন্তোষের জন্য মালিক-শ্রমিকদের উদ্দেশে একে অপরকে দোষারোপের খেলা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি বলেন, ‘অসন্তোষের জন্য শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, বাইরের ইন্ধনও রয়েছে। এতে শ্রমিক, মালিক এবং ক্রেতা—সব পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
শিল্প খাতে ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিকদের সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘পোশাক খাতের শ্রমিকদের এই অধিকার চর্চার ব্যাপারে মালিকদের সহযোগিতা করা উচিত।’
লুত্ফুল হাই বলেন, তৈরি পোশাক খাতে মাঝেমধ্যে যে শ্রমিক অসন্তোষ হয়, তার পেছনে অন্য শক্তিও কাজ করে। তবে এসব অসন্তোষ দূর হবে, শিল্প খাতে ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমও শুরু হবে। তা শুধু সময়ের ব্যাপার।
ইসরাফিল আলম বলেন, ‘শোষণ ও হয়রানি বজায় থাকলে শ্রমিক অসন্তোষ দূর হবে না।’ দর কষাকষি বা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান পোশাক মালিকেরাই অনেক সময় মানেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাংসদ সারাহ বেগম কবরী বলেন, ‘শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে যোগাযোগের ঘাটতি দূর করা, অসন্তোষ দূর করার অন্যতম উপায়।’ এ জন্য নিয়মিত ভিত্তিতে আলোচনার পরামর্শ দেন তিনি। শ্রমিকেরা যেন বুঝতে পারেন যে মালিকেরা তাঁদের সঙ্গেই রয়েছেন।
সারাহ বেগম আরও বলেন, ‘শ্রমিকদের চাকর বা দাস মনে করা উচিত নয়। মনে করতে হবে যে তাঁরা কারখানার অংশ।’
শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘কথিত শ্রমিক নেতারা অনেক সময় পরিস্থিতি জটিল করে তোলে। তারা সংকট নিরসন না করে উল্টো তা বাড়িয়ে দেয়।’

No comments

Powered by Blogger.