যুদ্ধাপরাধের তদন্ত নিয়ে নতুন করে চাপের মুখে শ্রীলঙ্কা

যুদ্ধাপরাধের একটি নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য নতুন করে চাপের মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার। গত বছর তামিল বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ের সময় সেনাসদস্যরা তামিল বন্দীদের হত্যা করছে, এমন একটি ভিডিওচিত্রকে জাতিসংঘ সত্য বলে নিশ্চিত করায় এই চাপের মুখে পড়ল কলম্বো। পশ্চিমা দেশ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো ২০০৯ সালের শুরুর দিকে তামিল বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী যে যুদ্ধাপরাধ করেছে, তার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে আসছে। খবর এএফপির।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিনিধি ফিলিপ অ্যালস্টন গত বৃহস্পতিবার জানান, শ্রীলঙ্কান বাহিনী নিরস্ত্র তামিল বিদ্রোহীদের হত্যা করছে এমন দৃশ্যসংবলিত যে ভিডিও চিত্র আগে প্রচারিত হয়েছে তা সত্য। যুদ্ধাপরাধের তদন্তের বিষয়টি মেনে নেওয়ার জন্য তিনি কলম্বোর প্রতি আহ্বান জানান।
গত আগস্টে ব্রিটেনের চ্যানেল ফোর টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিও চিত্রে দেখানো হয়েছিল, সেনাসদস্যরা লিবারেশন টাইগারস অব তামিল ইলমের (এলটিটিই) নিরস্ত্র সদস্যদের গুলি করে হত্যা করছে। চ্যানেল ফোর জানিয়েছিল তারা শ্রীলঙ্কার ‘জার্নালিস্ট ফর শ্রীলঙ্কা’ নামের একটি গ্রুপের কাছ থেকে ভিডিওটি পেয়েছে। তবে এটির সত্যাসত্য পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
অ্যালস্টন জানান, তিনজন নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞের পরীক্ষায় ভিডিও চিত্রটি সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। অবশ্য এর আগে শ্রীলঙ্কার চার বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে ভিডিও চিত্রটি ভুয়া বলে জানিয়েছিলেন।
অ্যালস্টন বলেন, ‘ভিডিও চিত্রটি যে সঠিক তা প্রমাণিত হওয়ায় যুদ্ধাপরাধ ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করার জন্য আমি শ্রীলঙ্কা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য শ্রীলঙ্কার উচিত জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানানো।’ তবে শ্রীলঙ্কার মানবাধিকার মন্ত্রী মাহিন্দ সামারাসিঙ্গে গতকাল শুক্রবার আবারও দাবি করেছেন, ওই ভিডিও চিত্রটি ভুয়া। আর অ্যালস্টন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সামারাসিঙ্গে বলেন, ‘ফিলিফ অ্যালস্টন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধের তদন্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি যে পথে এগোচ্ছেন তা নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে। তাঁর উচিত এ সংক্রান্ত তথ্য প্রথমেই আমাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করা।’
২০০৯ সালের শুরুর দিকে দেশের উত্তরাঞ্চলে তামিল বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু করে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী। ওই বছরের মে মাসে এসে বিদ্রোহীদের পরাজয় হয়। এর মাধ্যমে দেশটিতে দীর্ঘ সংঘাতের অবসান ঘটে।
তবে চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরুর প্রথম থেকেই পশ্চিমা দেশ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ তোলে, সেখানে বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। জাতিসংঘের হিসাবমতে, চূড়ান্ত যুদ্ধের প্রথম চার মাসে নিহত হয় প্রায় সাত হাজার বেসামরিক নাগরিক। যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তোলে জাতিসংঘ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। তবে যুদ্ধাপরাধ তদন্তের দাবি বরাবর প্রত্যাখ্যান করে আসছে শ্রীলঙ্কা সরকার। তারা বলছে, যুদ্ধের সময় কোনো বেসামরিক ও বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি।

No comments

Powered by Blogger.