নিরাপত্তা-ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিলেন ওবামা

বিমানে সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্র আগে থেকে শনাক্ত করতে না পারার ব্যর্থতার দায় নিজের কাঁধে তুলে নিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমারই দায়িত্ব দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সে ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে চূড়ান্ত দায়ভারটা আমার ওপরই বর্তায়।’
বড়দিনের প্রাক্কালে মার্কিন বিমানে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে হোয়াইট হাউসে গত বৃহস্পতিবার দুটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশকালে প্রেসিডেন্ট ওবামা এসব কথা বলেন। ওবামা আরও বলেন, তদন্ত থেকে জানা যাচ্ছে, মার্কিন গোয়েন্দারা আগে থেকেই জানত যে অভিযুক্ত ওমর ফারুক আবদুল মোতালিব একজন সন্ত্রাসী। তারা এটাও জানতে পেরেছিল যে ইয়েমেনে আল-কায়েদা শাখা হামলার পরিকল্পনা করছে। তবে তারা এ দুটি ভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যকে এক সূত্রে গাঁথতে পারেনি।
গত ২৫ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডের আমস্টারডাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েটগামী নর্থওয়েস্ট এয়ারলাইনসের একটি বিমানে বিস্ফোরক নিয়ে ওঠেন ওমর। বিমানটি ডেট্রয়েট বিমানবন্দরে অবতরণের কিছুক্ষণ আগে শরীরে লুকিয়ে রাখা বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেটি উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দেশের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ওবামা বলেন, ‘আমি মোটেই অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাই না। বরং নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ভুল শুধরে নিতে আমি এ থেকে শিক্ষা নিতেই আগ্রহী।’
তবে ওবামা জানিয়েছেন, নিরাপত্তা-ব্যর্থতার দায় কোনো একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নয়; বরং এটি বিভিন্ন সংস্থার ‘পদ্ধতিগত’ ব্যর্থতা। এ ধরনের হুমকি মোকাবিলায় বিদ্যমান পদ্ধতিগুলো বদলে ফেলার জন্য তিনি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ওবামা জানান, এ ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং গোয়েন্দাদের কর্মকাণ্ড কয়েকটি দিক দিয়ে তখন ভেঙে পড়েছিল। এ কারণেই ওমর পোশাকের মধ্যে বিস্ফোরক লুকিয়ে বিমানে উঠতে পেরেছিলেন।
আরব উপদ্বীপ অঞ্চলে আল-কায়েদা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে কিছু করতে না পারা এবং গোয়েন্দা তথ্য সঠিকভাবে পর্যালোচনা না করতে পারার জন্য ওবামা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসীদের তালিকায় যেসব সন্ত্রাসীর নাম আছে, তাদের ঠিকমতো চিহ্নিত করতে না পারার কারণেই ওমর যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমানে উঠতে পেরেছিলেন বলে তিনি জানান।
এসব ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতা শুধরে নেওয়ার জন্য গোয়েন্দা তথ্য আরও সতর্কভাবে পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে ওই তথ্য ভাগাভাগির নির্দেশ দেন ওবামা।
এ ছাড়া আল-কায়েদা যাতে নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে না পারে, সে জন্য নতুন কৌশল গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ওবামা। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান আল-কায়েদাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে এটিও স্পস্ট যে সংগঠনটি তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, আফ্রিকা ও অন্যান্য স্থান থেকেও নতুন ব্যক্তিদের দলে টানতে চাইছে।’
বিমানবন্দরে বসছে ৩০০ স্ক্যানার
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সেক্রেটারি জেনেট নেপোলিতানো জানিয়েছেন, নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করতে নতুন নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিন জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় অন্য দেশগুলোকেও নিজেদের দেশে কার্যকর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নেপোলিতানো জানান, নিরাপত্তা জোরদার করতে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ৩০০ পূর্ণাঙ্গ দেহ তল্লাশি স্ক্যানার বসানোর ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাইজেরিয়ার প্রস্তাব
নাইজেরিয়া জানিয়েছে, হামলার পরিকল্পনাকারী অভিযুক্ত ওমরকে গত ২৪ ডিসেম্বর লাগোস বিমানবন্দরে তল্লাশি করেছিলেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। ওই তল্লাশির ভিডিও চিত্র মার্কিন গোয়েন্দাদের কাছে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে নাইজেরিয়া।
নাইজেরিয়ার বিচারমন্ত্রী মিখাইল আনদোয়াকা গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, ‘ভিভিও চিত্র থেকে প্রমাণিত হবে, আমাদের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাঁদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছিলেন।’

No comments

Powered by Blogger.