স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সরকারি ঋণপত্র নিলামের সুপারিশ



দেশের সরকারি ঋণপত্রসমূহ অর্থাত্ ট্রেজারি বিল এবং ট্রেজারি বন্ডের নিলাম ও নিবন্ধনপ্রক্রিয়া পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় নিয়ে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে প্রচলিত সঞ্চয়পত্রগুলোর সুদের হার ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করার কথাও বলা হয়েছে।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের একটি দল বাংলাদেশের সরকারি সিকিউরিটিজসমূহের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে এই অভিমত দিয়েছে। দলটি সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছে। বিশ্বব্যাংকের এক তথ্যপত্রে এসব কথা জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে যে বিশ্বব্যাংক মনে করে, বাংলাদেশের সরকারি সিকিউরিটিজের প্রাথমিক বাজারের স্বচ্ছতা সম্প্রতি বছরগুলোয় অনেক বেড়েছে। নিলামের সময়সূচি আগাম প্রকাশ করা এবং নিলামের ফলাফল দ্রুত প্রকাশ করাই এর কারণ।
তবে ট্রেজারি বিল ও ট্রেজারি বন্ডের নিলাম পদ্ধতি এখনো সনাতন রয়ে গেছে, যা এই সিকিউরিটিজের প্রাথমিক বাজারের দক্ষতা বৃদ্ধির পথে অন্তরায়।
সাধারণত নিলামের তারিখে অংশগ্রহণকারীদের লিখিত দরপত্র বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করতে হয়। অতঃপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা যাচাই-বাছাই করে গ্রহণ বা বর্জন করে থাকে। সে অনুযায়ী বিল ও বন্ড নির্বাচিত দরদাতার কাছে বিক্রি হয়।
ট্রেজারি বিল ও বন্ড বিক্রি করে সরকার মূলত বিভিন্ন মেয়াদি ঋণ গ্রহণ করে থাকে।
বিশ্বব্যাংক আরও মনে করে যে সরকারি সিকিউরিটিজগুলোর চাহিদা এখনো অল্প কিছু উেসর ওপর নির্ভরশীল। আর তাই এসব সিকিউরিটিজের প্রাথমিক ও দ্বিতীয় স্তরের বাজার বিকাশের বড় সম্ভাবনা রয়েছে।
ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক যে পৃথকভাবে সরকারের ঋণব্যবস্থাপনা বিভাগ খুলেছে, তাকে ইতিবাচক বলে অভিহিত করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি মনে করে, একটি দক্ষ ও বড় ঋণবাজার বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি কর্মসূচি।
বিশ্বব্যাংক আরও মনে করে, বর্তমান বিশ্ব আর্থিক সংকট থেকেও এটা স্পষ্ট হয়েছে যে কোনো দেশের জন্য একটি দক্ষ ও শক্তিশালী ঋণবাজার প্রয়োজন। কেননা এই ঋণবাজার সরকারি ঋণব্যবস্থাপনা, ব্যাংকের তারল্য-ব্যবস্থাপনা ও মুদ্রানীতি পরিচালনার জন্য অত্যন্ত সহায়ক।
বিশ্বব্যাংক এও মনে করে যে ঋণবাজারের বিকাশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের উচ্চ হার অন্যতম অন্তরায়। তাই ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হারের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সংগতিপূর্ণ করা উচিত।
বর্তমানে দেশে তিন ধরনের সঞ্চয়পত্র প্রচলিত আছে। এগুলো হলো, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন বছর মেয়াদি (ত্রৈমাসিক সুদ দেয়) সঞ্চয়পত্র এবং পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার (ত্রৈমাসিক সুদ দেয়) সঞ্চয়পত্র। মেয়াদান্তে এগুলোর মুনাফার হার যথাক্রমে ১২ শতাংশ, সাড়ে ১১ শতাংশ ও সাড়ে ১২ শতাংশ।
অন্যদিকে বর্তমানে ৯১ দিন, ১৮২ দিন ও ৩৬৪ দিন মেয়াদি তিন ধরনের ট্রেজারি বিল চালু রয়েছে, যেগুলোর গড় সুদের হার যথাক্রমে দুই দশমিক ৩০ শতাংশ, সাড়ে তিন শতাংশ ও চার দশমিক ৬০ শতাংশ।
তবে সঞ্চয়পত্রের মতো এগুলোর সুদের হার পূর্বনির্ধারিত নয়। বরং নিয়মিত বাজারে লেনদেনের ভিত্তিতে এর সুদের হার ওঠানামা করে।
এ ছাড়া পাঁচ বছর, ১০ বছর, ১৫ বছর ও ২০ বছর মেয়াদি চার ধরনের ট্রেজারি বন্ড চালু আছে। বর্তমানে এগুলোর গড় সুদের হার যথাক্রমে সাত দশমিক ৮০ শতাংশ, আট দশমিক ৭৫ শতাংশ, আট দশমিক ৬৯ শতাংশ ও ৯ দশমিক ১০ শতাংশ।
ট্রেজারি বন্ডও নিলামের ভিত্তিতে লেনদেন হয় এবং সে অনুসারে সুদের হার ওঠানামা করে।

No comments

Powered by Blogger.