নায়ক রোনালদো, খলনায়কও রোনালদো

হায় ঈশ্বর, একি হলো! গোল মিস করার পর রোনালদো
নায়ক তিনি, তিনিই খলনায়ক। ‘ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড’। পরশু স্প্যানিশ লিগের রাতটা এভাবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোময় হয়ে থাকল রিয়াল মাদ্রিদের জন্য। যে রাতে রেলিগেশন অঞ্চলের দুই ধাপ ওপরে থাকা পুঁচকে আলমেরিয়ার বিপক্ষে নিজেদের মাঠে ৭৩ মিনিট পর্যন্ত পরাজয়ের শঙ্কায় কেঁপেছে রিয়াল। শেষ পর্যন্ত নায়ক রোনালদোয় উদ্ধার পেয়ে ৪-২ গোলের জয় নিয়ে ছেড়েছে মাঠ।
৩১ মিনিটে হেড থেকে করা সার্জিও রামোসের গোলের উত্স ছিলেন রোনালদোই। প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে মাঠছাড়া রিয়াল প্রথম ধাক্কাটা খায় ৫৮ মিনিটে, ফার্নান্দো সোরিয়ানো গোল শোধ করে দিলে। চার মিনিট পর নাইজেরিয়ান কালু উচের গোল এগিয়ে দেয় আলমেরিয়াকে। অনেকের মনেই হয়তো উঁকি দিচ্ছিল ২০০৭-০৮ মৌসুমের স্মৃতি। যেবার এই আলমেরিয়াই রিয়ালকে হারিয়ে দিয়েছিল ০-২ গোলে। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে পরের মৌসুমের প্রথম ম্যাচটাও জিততে পারেনি রিয়াল।
সেই ভয়ের স্মৃতি মুছে দিয়েছেন গঞ্জালো হিগুয়েইন, ৭৪ মিনিটে সমতা ফিরিয়ে। এর পর আবার দৃশ্যপটে রোনালদো। প্রথমে ৮২ মিনিটে পেনাল্টি আদায় করে নিয়ে নায়ক হয়ে গেলেন। সেই পেনাল্টিটাই মিস করে হয়ে গেলেন খলনায়ক। দৃশ্যটা আরও বড় করে চোখে বিঁধল, যখন গোলরক্ষকের কাছে বাধা পেয়ে ফিরে আসা বলে করিম বেনজেমা গোল করলেও সেই গোল-উদ্যাপনে যোগ দিলেন না। উল্টো হতাশায় ডুবে রইলেন পেনাল্টি মিস করার দুঃখে। এই রোনালদো যে স্বার্থপর!
কিন্তু রেকর্ড ৯৪ মিলিয়ন ইউরো খরচে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে রিয়ালে পাড়ি জমা রোনালদো খলনায়ক হয়ে থাকবেন? মোটেও না। সময় নিলেন মাত্র দুই মিনিট। হিগুয়েইনের বাড়িয়ে দেওয়া বল থেকে ৮৪ মিনিটে করলেন লিগে তাঁর ষষ্ঠ গোল। না, এখানেই শেষ নয় রোনালদো-উপাখ্যান। গোল করার পর জার্সি-টার্সি খুলে উন্মাতাল উদ্যাপনের কারণে দেখলেন হলুদ কার্ড। আলমেরিয়ার এক খেলোয়াড়কে লাথি মেরে ৮৯ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড লাল হয়ে যাওয়ায় ছেড়ে যেতে হলো মাঠ।
এই হলো জেকিল-হাইড বৃত্তান্ত। যার জন্য রোনালদো অনুতপ্ত। ম্যাচ শেষে এই পর্তুগিজ উইঙ্গার ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি দিয়েছেন বেনজেমার গোল-উদ্যাপনে যোগ না দেওয়ার ব্যাখ্যা, ‘আমিও একজন রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ। ভুল আমিও করতে পারি। আসলে সেটি ছিল সহজাত প্রতিক্রিয়া, যার জন্য সতীর্থদের কাছে এরই মধ্যে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। আসলে আমি খুব খুঁতখুঁতে। যা-ই হোক, করিম গোল করেছে, এটাই বড় ব্যাপার।’
ওদিকে একই দিন বার্সেনোলার কেন্দ্রীয় চরিত্রে আবার লিওনেল মেসি। না, ‘সুবোধ বালক’ মেসি অঘটনঘটনপটীয়সী নন। তিনি কেন্দ্রে থাকলেন দেপোর্তিভো লা করুনিয়ার বিপক্ষে ১-৩ গোলের জয়ে দুই গোল করে। ইউরোপ-সেরার পুরস্কার ব্যালন ডি’অর জেতার চার দিন পরই মেসির জোড়া গোল! লিগে নয় গোল নিয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন তিনি (১০ গোল করে শীর্ষে ভ্যালেন্সিয়ার ডেভিড ভিয়া)। দুইয়ে মেসির সঙ্গে থাকা সতীর্থ জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচও পরশু লিগে তাঁর নবম গোলটি করেছেন। ২০০৫ সালের পর এই প্রথম করুনিয়ার মাঠ থেকে জয় নিয়ে ফিরল শীর্ষে থাকা বার্সা। এই জয়ে রিয়ালের সঙ্গে ৫ পয়েন্টের দূরত্বও ধরে রাখল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।

No comments

Powered by Blogger.