ভারতীয় মিডিয়ায় সীমান্তের গোলাগুলিতে নিহত ব্যক্তিকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে খবর প্রচার

ভারত-পাকিস্তান মধ্যকার সীমান্ত উত্তেজনার সময় গোলাগুলিতে প্রাণ হারানো ব্যক্তিকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে খবর প্রচার করেছে ভারতীয় মিডিয়া। যা নিয়ে বেশ চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ ইকবাল। যিনি ৭ মে প্রতিবেশী দুই দেশের সীমান্তে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন। তবে তার মৃত্যুকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছে ভারতীয় মিডিয়া। পড়নে দাড়ি-টুপি থাকায় তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার করা হয়েছে বলে দাবি মোহাম্মদ ইকবালের ভাই ফারুক আহমেদের। তিনি বলেছেন, তার ভাই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বাসিন্দা। ক্ষোভের সঙ্গে বিবিসিকে এ বিষয়টি জানিয়েছেন ফারুক। বলেছেন, দুই দশকের বেশি সময় ধরে জিয়া উল উলুম মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন মোহাম্মদ ইকবাল। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পরই কিছু সংবাদমাধ্যম ইকবালের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে তাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে খবর প্রচার করেছে। ফারুক বলেন, আমার ভাই একজন শিক্ষক ছিলেন। তবে তার দাঁড়ি, টুপি দেখে তাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া হয়েছে। প্রথমত ইকবালকে হারিয়ে আমাদের পরিবার শোকাহত। এরপর আবার গণমাধ্যমগুলোর মিথ্যা অভিযোগ। এ যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় সীমান্তে গোলাগুলিতে ইকবালসহ ১৬ জন ভারতীয় নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৪০ বেসামরিক নাগরিক নিহতের দাবি করেছে পাকিস্তান।

পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে কয়েক দশক ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ বিরাজ করছে। ১৯৪৭ সালে বৃটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর কাশ্মীর নিয়েই তিনটি যুদ্ধ করেছে এ দুই দেশ। ভারত-পাকিস্তান সামরিক দ্বন্দ্ব যখন তীব্র হয় তখন আরেক যুদ্ধ শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ করতে থাকে। এছাড়া ভারতীয় গণমাধ্যমেও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হয়। ইকবালকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়ার মতো আরও কয়েকটি বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের মূলধারার সংবাদমাধ্যম গুলোতে। এর মধ্যে একটি হলো, ভারত পাকিস্তানের করাচি বিমান বন্দর ধ্বংস করে দিয়েছে। এছাড়া এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করা হয়। যেখানে পাকিস্তান আমির্র এক জেনারেলকে বলতে শোনা যায়, ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে তার দেশ দুটি বিমান হারিয়েছে। ওই ভিডিও এতই নিখুঁতভাবে বানানো যে, এর সত্যতা নির্ণয় করা কঠিন।

এদিকে স্বাধীন সংবাদ প্ল্যাটফর্ম নিউজলন্ড্রির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মনীষা পাণ্ডে বলেন, মিডিয়া যে পরিমাণ ভুল তথ্য প্রচার করেছে তা মর্মান্তিক। এ বিষয়ে ইকবালের ভাই ফারুক বলেন, আমি জানিনা সংবাদমাধ্যমগুলো আমার ভাইয়ের বিষয়ে এসব তথ্য কোথা থেকে পেয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, তারা কার সঙ্গে কথা বলেছে? তাদের কাছে কী প্রমাণ আছে যে, আমার ভাই সন্ত্রাসী? ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও পরিবারটিকে এখনও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিদিনের মতো আমার ভাই ৭মে সকালে মাদ্রাসার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। তবে ফিরে আসেন লাশ হয়ে। দুপুর নাগাদ আমরা তাকে দাফন করি। কয়েক ঘণ্টা পরই এক আত্মীয় হোয়াটসঅ্যাপে আমাদেরকে একটি ভিডিও ফরওয়ার্ড করেন। যেখানে একটি পরিচিত সংবাদমাধ্যমে ইকবালকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে খবর প্রচার করা হয়। এতে আমরা হতবাক হয়ে পড়ি। এরপর আমাদের কাছে একের পর এক ফোনকল আসতে থাকে। জি নিউজ, এবিপি আনন্দ ও নিউজ এইটটিনের মতো পরিচিত সংবাদমাধ্যম গুলোতে ইকবালের নামে এসব প্রচার করা হয়। 

mzamin

No comments

Powered by Blogger.