মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ান হস্তক্ষেপ আগেই সতর্ক যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের মন পরিবর্তন করতে ভুয়া খবরের সাইটগুলোর প্রতিও লক্ষ্য রাখা হবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন নিউ ইয়র্ক টাইমস। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা, অভিযোগ গঠন এবং ওয়েব ডোমেইন জব্দ করা। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন নিয়ে প্রচার প্রচারণা এবং ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দিতে পারে ক্রেমলিন। বুধবার আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে গৃহীত সব কর্মপরিকল্পনা সবিস্তারে তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক বি. গারল্যান্ড। এর মধ্যে আছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম আরটি’র দু’জন রাশিয়ান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন। তারা কন্টেন্ট প্রচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসিতে একটি কোম্পানিকে ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়া ‘ডপলগ্যাঞ্জার’ নামে পরিচিত রাশিয়ার একটি ক্ষতিকর প্রচারণাকে অপসারণ করা।
গারল্যান্ড বলেন, যখন বিদেশি কোনো শক্তি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয় এবং জনগণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, তখন তা মার্কিন জনগণের জানার অধিকার আছে। উল্লেখ্য, ‘ডপলগ্যাঞ্জার’ নেটওয়ার্ককে পরিচালনায় সহায়তা করে রাশিয়ার একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এএনও ডায়ালগ। এই এএনও ডায়ালগের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে আরটি’র প্রধান সম্পাদক মারগারিতা এস. সিমোনিয়ান এবং তার ডেপুটির বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপ সম্পর্কে কোনো যথাযথ তথ্য দিলেই এক কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পরিষ্কার করে বলেছে যে, তারা রাশিয়ান অ্যাংগ্রি হ্যাকার্স ডিড ইট অথবা আরএএইচডিআইটি নামে পরিচিত গ্রুপের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য চাইছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা আরটি, রাপ্টলি এবং স্পুটনিকসহ রাশিয়ার রাষ্ট্র পরিচালিত ৫টি মিডিয়া আউটলেটকে বিদেশি সরকারি মিশন হিসেবে বিবেচনা করবে। যারা ক্রেমলিন সমর্থিত মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করেন তাদের বিষয়ে ভিসা ইস্যুর ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করবে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস আরও লিখেছে, নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ প্রচেষ্টা সম্পর্কে সতর্কতা বৃদ্ধি করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী কমালা হ্যারিসের পরিবর্তে ট্রাম্পের পক্ষ নেবে ক্রেমলিন এমন মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য হাতে এসেছে। ২০১৬ সালে ঠিক এমন ঘটনা ঘটেছিল। তখন ট্রাম্পের পক্ষ নিয়ে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছে রাশিয়া। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে পরবর্তী যেসব নির্বাচন হয়েছে তাতে রাশিয়া, চীন ও ইরানের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে অধিক আগ্রাসীভাবে তৎপর ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এ বছর নির্বাচনে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াই করা আরও কঠিন হবে। ট্রাম্পের সমর্থকরা সহ কিছু মার্কিনি অভিযোগ করছে যে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে হেয় করার জন্য রাশিয়া ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ওদিকে বুধবার মেরিক গারল্যান্ড এসব বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে বলেন, এখানেই তাদের কর্মকাণ্ড শেষ নয়। তদন্ত চলমান আছে। ক্রেমলিনের পক্ষে যায় এমন ভুয়া তথ্য জেনেশুনে বেশ কিছু সংখ্যক মার্কিনি ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে আইন মন্ত্রণালয় ও এফবিআই। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, এক্ষেত্রে তাদের উদ্দেশ্য হবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা যাতে খর্ব না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। ওই কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় যেসব তথ্য বা কাহিনী প্রকাশ হয়, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তদন্ত করবে না। তারা বলছেন, ইন্টারনেট ও অন্যান্য মিডিয়ার মাধ্যমে আরটি ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে কিনা শুধু সেদিকেই তারা লক্ষ্য রাখবেন না। একই সঙ্গে তারা নির্বাচনে ক্রেমলিন এবং তার গোয়েন্দা এজেন্সিগুলো কীভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে তা ঘনিষ্ঠভাবে লক্ষ্য রাখবে।
ওদিকে অভিযুক্ত করার খবর প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপ-প্রধান সম্পাদক আনা বেলকিনা তাদের ওয়েবসাইটে ব্যঙ্গাত্মক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জীবনে তিনটি ঘটনা নিশ্চিত আছে। তাহলো- মৃত্যু, ট্যাক্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে আরটি’র হস্তক্ষেপ। বুধবার আরটি’র রাশিয়ান দু’জন কর্মকর্তা কোস্টিয়ানতিন কালাশনিকভ এবং ইলেনা আফানাসায়েভা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফরেন এজেন্টস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ইউটিউব, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম এবং এক্সে প্রায় দুই হাজার ইংরেজি ভাষার ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তারা টেনেসির একটি অজ্ঞাত কোম্পানিকে এরই মধ্যে এক কোটি ডলার গোপনে দিয়েছেন। রাশিয়ার এই প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে যাচ্ছেন ভুয়া তথ্য বিরোধী বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ওইসব ভিডিও ইউটিউবে দেখেছেন কমপক্ষে এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ। ভিডিওগুলোতে রাশিয়ান সরকারের লক্ষ্যকে সমর্থন করা হয়েছে। মেরিক গারল্যান্ড বলেন, এসব ভিডিওতে রাশিয়ার স্বার্থকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রে বিভক্তি সৃষ্টি করে রাশিয়ার স্বার্থ হাসিল করতে চায়। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধে। তবে টেনেসির ওই কোম্পানি কখনোই রাশিয়া সরকারের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা প্রকাশ করেনি। মার্চে মস্কোতে একটি কনসার্ট ভেন্যুতে সন্ত্রাসী হামলার পর মিস আফানাসিয়েভা ওই কোম্পানিকে নির্দেশ দেন ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দিতে। তাতে ইউক্রেনকে এই হামলার জন্য দায়ী করতে বলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ওই প্রতিষ্ঠানটির নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে একটি অভিযোগে একই স্লোগান ব্যবহার করা হয়েছে যা ব্যবহার করে টেনেসির নিবন্ধিত কোম্পানি টেনেট মিডিয়া। ডনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করে এমন ভিডিও এবং অন্য কন্টেন্ট তারা প্রচার করে থাকে। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায় টেনেট মিডিয়া। অভিযোগে কথিত কোম্পানিটিকে অন্যায়ের জন্য সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়নি। তবে বলা হয়েছে, আরটি’র সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আছে। তাদের স্পন্সরকে রাশিয়ান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
No comments