‘গণহত্যার বিচার করতে হবে’ -জামায়াত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা বলেছি প্রতিশোধ নেবো না- এর মানে হচ্ছে আমরা নিজের হাতে আইন তুলে নেবো না। কিন্তু যিনি সুনির্দিষ্ট অপরাধ করেছেন- তার বিরুদ্ধে মামলা হবে এবং তাকে শাস্তি পেতে হবে। গণহত্যার বিচার করতে হবে এবং গত সাড়ে ১৫ বছরে যেসব অপরাধ করা হয়েছে তার বিচার করতে হবে। গতকাল রাজধানীর মগবাজারস্থ আল-ফালাহ্‌ মিলনায়তনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শফিকুর রহমান বলেন, বিগত সরকার ক্ষমতার লোভে জেদের বশবর্তী হয়ে সুস্পষ্ট গণহত্যা চালিয়েছে। সরকার শুধু স্থলভাগেই নয়, আকাশ থেকেও গুলি চালিয়ে নিজ দেশের নাগরিকদের হত্যা করেছে। স্বাধীন দেশে পরিচালিত এই গণহত্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাই খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দল হিসেবে সাড়ে ১৫ বছর পরে আমাদের সঙ্গে বৈরী আচরণ করা হয়েছে। আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হয়েছে।

শেষ মুহূর্তে সরকার দিশাহারা হয়ে আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছে। আর আমরা আমাদের সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি, ক্ষতিগ্রস্ত যারাই মামলা করবেন, আইনের আশ্রয় নিবেন- কোনো মানুষের ওপর যেন বেইনসাফি না হয় সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে যেন আসামি করা না হয়।
তিনি বলেন, দেশের কিছু চতুর ধনী মানুষ জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে ব্যাংকগুলো ফোকলা করে দেশের বাইরে অর্থ নিয়ে গেছেন। এ অর্থ আমাদের সবার। এ অর্থ ১৮ কোটি মানুষের। এ অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে এবং লুণ্ঠনকারীরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক তাদের ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এরা জাতির দুশমন ও লুটেরা। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। আজকে সময় এসেছে বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার। অন্যায়, অসত্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে। জাতির এই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনকে কেউ যাতে ব্যর্থ করে না দিতে পারে এজন্য সকলে মিলে আমরা পাহারাদারী করবো। স্বাধীনতার পক্ষে আমাদের আপসহীন অবস্থান নিতে হবে।

জামায়াত আমীর বলেন, হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে জামায়াতসহ বিরোধী দলের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে কারাগারে আটকে রেখে হয়রানি করা হয়েছে। অসংখ্য মানুষকে গুম করা হয়েছে, যার প্রকৃত সংখ্যা জাতির কাছে অজানা। ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়ে আমাদের কর্মীদেরকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের প্রত্যেকটা রাত প্রত্যেকটা দিন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নিমজ্জিত ছিল। আমাদের কেন্দ্রীয় অফিসসহ মহানগর, জেলা এমনকি তৃণমূলের সকল অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। অফিসের সবকিছু লুণ্ঠন করা হয়েছে। কোনো জায়গায় আমাদের সামান্য স্পেস দেয়া হয়নি। আমাদের ওপর নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে।  

তিনি বলেন, হিটলারের গ্যাস চেম্বারের মতো আমাদের দেশে আয়নাঘর তৈরি করা হয়েছে। শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, বিরোধী দল বিএনপি, উলামায়ে ক্বেরামসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের উপর একই ধরনের তাণ্ডব চালানো হয়েছে। জামায়াতের উপর ভিন্ন মাত্রায় তাণ্ডব চালানো হয়েছে। হাজার হাজার আলেমকে যেনতেন অযুহাতে গ্রেপ্তার করে বছরের পর বছর কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছিল। বয়স্ক আলেমদেরকেও হাতে-পায়ে বেড়ি পরিয়ে আদালতে তোলা হয়েছিল। বিগত সরকারের দুঃশাসনের সাড়ে ১৫ বছর আমাদের রাস্তায় নামতে দেয়া হয়নি। মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধ করায় সরকারের অকথ্য জুলুম-নির্যাতনের প্রতিবাদও আমরা করতে পারিনি। ফ্যাসিস্ট সরকার তিনটি অগ্রহণযোগ্য প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করেছে।

শফিকুর রহমান বলেন, গত জুলাই মাসে ছাত্ররা তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রী উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে ছাত্র আন্দোলন দমনের অপচেষ্টা করে। মা তার দেড় মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। শিশু থেকে শুরু করে নব্বই বছরের বয়স্ক মানুষও ছাত্রদের আন্দোলনে শামিল হন। হাজারো ছাত্র-জনতার প্রাণ বিসর্জনের মাধ্যমে দেশের ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী আমরা তাদের স্মরণ করছি, যাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা শান্তি-স্বস্তির পরিবেশে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার এই অধিবেশন করতে পেরেছি। তারা জাতিকে স্বস্তির নিঃশ্বাস এনে দিয়েছে। আল্লাহ্‌ তায়ালা তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে দুই জায়গায় মর্যাদা দান করুন। যারা আন্দোলনে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন আল্লাহ্‌ তাদেরকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন। আর যারা আহত হয়েছেন তাদের আল্লাহ্‌ তায়ালা সুস্থতার নিয়ামত দান করুন।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের পরিচালনায় এতে দলের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.