‘চাইলেই যেকোনো বিজ্ঞাপন করতে পারবেন না ক্রিকেটাররা’ by ইশতিয়াক পারভেজ

অনলাইনে জুয়ার ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপনের মডেল হয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। গেল বছরের শুরুর দিকে গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে মন্ট্রিয়াল টাইগার্সের হয়ে খেলেছিলেন সাকিব। ওই দলের অফিসিয়াল পার্টনার ছিল ‘বাবু৮৮’ নামের সাইট। এর আগে ২০২২, অনলাইন জুয়ার সাইট বেটউইনারের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বেটউইনার নিউজের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন সাবেক টাইগার অধিনায়ক। বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাব্বির রহমান এবং মডেল নায়লা নাঈমের করা একটি কোমল পানীয়ের টেলিভিশন বিজ্ঞাপন ক্রিকেট বোর্ডের আপত্তির মুখে প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। শুধু বিতর্কিত বিজ্ঞাপনই নয়, খেলার মাঝে বিজ্ঞাপন করার ঘটনা সাকিবের কম নয়। বিজ্ঞাপন করতে খেলার মাঝে চলে আসার ঘটনা তার ক্যারিয়ারে অহরহ। অন্যদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের প্রভাবও পড়ে ক্রিকেটারদের মাঝে। সেই সুযোগে ক্রিকেটাররা হয়ে ওঠেন স্বেচ্ছারি।  অধিনায়ক থাকা অবস্থাতেই মাশরাফি বিন মুর্তজা রাজনৈতিক দলে যোগ দেন।

বনে যান সরকারি দলের এমপি। তার দেখাদেখি সাকিবও একই পথ ধরেন। দলের মধ্যে ধীরে ধীরে বিভেদ তৈরি হয়। ক্রিকেটারা নানা দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক কথায় ক্রিকেটাররা হয়ে ওঠে উশৃঙ্খল। তবে দেশের সরকার পরিবর্তনের পর বিসিবিতেও আসছে বড় ধরনের পরিবর্তন। ক্রিকেটারদের আর এমন ঘটনা ঘটাতে দেয়া হবে না বলে দৈনিক মানবজমিনকে জানিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটারদের জন্য গাইডলাইন আছে আমি জানি। এরপরও কেউ কেউ রাজনীতি করেন, আবার কেউ বিতর্কিত বিজ্ঞাপন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এমন সুস্পষ্ট অভিযোগ আছে আমাদের কাছে। সেখানেও সংস্কার আমরা করবো।’ এরই মধ্যে বিসিবিতে নয়া সভাপতি ক্রীড়া উপদেষ্টার নির্দেশে পরিবর্তনের কাজ শুরু করেছে। সবার আগে তাদের লক্ষ্য গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনা। নাজমুল হাসান পাপনের বোর্ড নিজেদের স্বার্থে বিসিবির গঠনতন্ত্রে করেছে নানা রকম কাটা ছেড়া। তাই সেখানে পরিবর্তন এনে অনিয়ম বন্ধের প্রক্রিয়াগুলো শুরু করবে বিসিবি। কিভাবে ক্রিকেটারদের নিয়ন্ত্রন করা হবে সেটি নিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘ক্রিকেটারদের প্রফেশনালিজম থাকতে হবে। কারণ ক্রিকেট একটি প্রফেশনালদের খেলা। বিসিবির যে গাইড লাইন থাকবে  এটা সবাইকে মেইনটেন করতে হবে। কিভাবে কী করা যায় বিসিবি এ নিয়ে সিদ্ধান্ত  দেবে। আর আমরাও বিসিবি’কে সেই আলোকে সাজেশন দেবো। কোন ভাবেই ক্রিকেটাররা গাইড লাইনের বাইরে যেতে পারবে না। আমরা এমন কোনো গঠনতন্ত্র বা নিয়ম রাখবো না যেখানে একক কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছাচারি হয়ে উঠতে পারে।’

রক্ষা করা হবে স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য্য
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে স্টেডিয়ামের  সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ হতে হয়। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও ভারত তো বটেই, শ্রীলঙ্কার মাঠগুলো দেখলেও চোখ জুড়িয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে এমন স্টেডিয়াম কটি আছে? একমাত্র সিলেট ছাড়া দর্শকদের খেলার পাশাপাশি  সৌন্দর্য্য দিয়ে আকর্ষণ করার মতো আর কোন স্টেডিয়াম আছে কি বাংলাদেশে! হতে পারতো সাগর পাড়ের কক্সবাজার স্টেডিয়ামটি দেশের আরো একটি নয়নাভিরাম মাঠ। কিন্ত সীমাহীন দুর্নীতিতে সেটিও শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। মিরপুর শেরেবাংলা, চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে নিয়মিত খেলা হলেও ভিতরের অবকাঠামোর অবস্থা ভয়াবহ। ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী  ও খুলনার শেখ আবু নাসের মাঠের অবস্থা তো ভাঙা দূর্গে রূপ নিয়েছে। কেন এমন বেহাল দশা?

না এখানে বিসিবিকে দায় দিলে হবে না। কারণ স্টেডিয়ামগুলোর নিয়ন্ত্রণ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) হাতে। এখানে একটি টাইলস তুলতেও তাদের অনুমোদন লাগে। দরপত্র ডেকে এরপরই  মেরামত। যেখানে সবচেয়ে বড় জালিয়াতি ও অর্থনৈতিক দুর্নীতিতে জড়িত এনএসসির প্রকৌশলীরা। তবে এমন অব্যবস্থাপনা থেকে মুক্তি মিলবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন অন্তবর্তী সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘স্টেডিয়ামের এই অবস্থা ম্যানেজমেন্টের কারণে হয়। আমি তো বলছি এখান থেকে বের হতে হলো পুরো ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। প্রতিটি বিষয়ে গুরুত্ব সেট করে আমাকে এগিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে স্টেডিয়াম গুলোর ম্যানেজম্যান্ট অনেক বড় একটা বিষয়। আমি নিজেও দেখছি যে আমাদের একটা প্রকল্প চলছে উপজেলাতে স্টেডিয়াম নির্মাণ করা। এখন করে যদি সেটি সেই ভাবেই ফেলে রাখি তাহলে তো আর হলো না। সেটি এক সময় আড্ডাখানাতে পরিণত হবে। এই মাঠগুলোর ম্যানেজমেন্ট কিভাবে ঠিক করা যায় তা নিয়ে কথা বলেছি সংষ্কারের কাজ শুরু হবে দ্রুতই।’

No comments

Powered by Blogger.