তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান করতে হবে -পিটিআইকে প্রধান উপদেষ্টা

তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে মতপার্থক্য দূর করতে সরকার কাজ করবে উল্লেখ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের মতপার্থক্য দূর করতে তার সরকার কাজ করবে। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকায় কোনো দেশেরই লাভ হচ্ছে না।

ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। ঢাকায় নিজ সরকারি বাসভবনে এই সাক্ষাৎকার দেন ড. ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টনের সমস্যা অবশ্যই আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী সমাধান করা উচিত। বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোর এ ব্যাপারে অধিকার রয়েছে। আমাদের আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’

পানিবণ্টন ইস্যুটি ঝুলিয়ে রেখে কোনো উদ্দেশ্য সাধন হচ্ছে না উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ভাটির দেশগুলোর কিছু অধিকার আছে এবং আমরা সেই অধিকার চাই। এই ইস্যুটি (পানিবণ্টন) ঝুলিয়ে রেখে কোনো উদ্দেশ্য সাধন হচ্ছে না। আমি যদি জানি, আমি কতটুকু পানি পাব, সেটা ভালো হতো। এমনকি পানির পরিমাণ নিয়ে যদি আমি খুশি নাও হই, তাতেও কোনো সমস্যা নেই। এই বিষয়টি সমাধান হতেই হবে।'

দ্রুত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির জন্য ভারতকে অন্তর্বর্তী সরকার চাপ দেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘চাপ একটি বড় শব্দ। আমি এটা বলছি না। তবে আমাদের একসঙ্গে বসে সমাধান করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এটা নতুন কোনো সমস্যা নয়, অনেক পুরনো সমস্যা। এ বিষয়ে আমরা একাধিকবার কথা বলেছি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় পাকিস্তান আমলে। আমরা সবাই চেয়েছিলাম এই চুক্তি হোক, এমনকি ভারত সরকারও এর জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এর জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমাদের এটি সমাধান করতে হবে।’

সম্প্রতি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভয়াবহ বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করে ঢাকার গণমাধ্যমের খবরের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের সংকটে আমরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে একসঙ্গে কাজ করে এর সমাধান করতে পারি।’

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বগ্রহণ করার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা সাক্ষাৎ করেন। বিষয়টি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভারতের হাইকমিশনার  যখন আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন, আমি বলেছি যে কীভাবে বন্যা মোকাবিলা করা যায় সে ব্যাপারে আমরা আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারি। দুই দেশের মধ্যে এ ধরনের সমন্বয়ের জন্য কোনো চুক্তিরও প্রয়োজন নেই। মানবিক দিক বিবেচনা করেই এই সমস্যা সমাধানে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি। কেননা, এটি গণমানুষের দুর্দশা লাঘব করবে। এ ধরনের মানবিক পদক্ষেপ সত্যিকার অর্থেই সহায়তা করবে।’

সীমান্ত হত্যার নিন্দা জানিয়ে  ড. ইউনূস বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড কোনো সমাধান নয়। কাউকে হত্যা করা কোনো সমাধান নয় কারণ এটি মোকাবিলার আইনি উপায় রয়েছে।’

সীমান্ত হত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা একতরফা ব্যাপার। আপনার দেশ দখলের জন্য কেউ সীমান্ত অতিক্রম করছে না। এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।’

No comments

Powered by Blogger.