সীমান্তে স্বর্ণা দাশ হত্যা: কড়া প্রতিবাদ বাংলাদেশের
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নির্মমভাবে ১৩ বছর বয়সী কিশোরী স্বর্ণা দাশ হত্যার ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। শিক্ষার্থীসহ দেশের সর্বস্তরে নিন্দার ঝড় ওঠা ওই হত্যাকাণ্ডে উদ্বেগ জানিয়ে এমন জঘন্য কাজের পুনরাবৃত্তি রোধ এবং সীমান্ত হত্যার সব ঘটনা তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে দিল্লির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা। গতকাল সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে নোটভারবাল পাঠিয়ে স্বর্ণা দাস হত্যার কড়া প্রতিবাদ করা হয়েছে। ১লা সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে স্বর্ণা দাশ নিহত হন। ওদিন রাতে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের লালারচক সীমান্তে ঘটনাটি ঘটে। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে পাঠানো প্রতিবাদপত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সীমান্ত হত্যার এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। এটি কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের পদক্ষেপ দুই দেশের সীমান্ত কর্তৃপক্ষের জন্য ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নির্দেশিকা, ১৯৭৫ সালের বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের অঙ্গীকার রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা কখনোই অঙ্গীকার পূরণ হয়নি। বরং ব্লেমগেম চলছে। ১লা সেপ্টেম্বর নিহত স্বর্ণা দাস মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রামের বাসিন্দা পরেন্দ্র দাসের মেয়ে। স্থানীয় নিরোদ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া স্বর্ণা ভারতের ত্রিপুরায় থাকা তার ভাইকে দেখতে মায়ের সঙ্গে যাচ্ছিলেন। তাদের সঙ্গে আরও ছিলেন চট্টগ্রামের এক দম্পতি। রাত ৯টার দিকে তারা ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে গেলে বিএসএফ সদস্যরা গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই স্বর্ণা নিহত হয় এবং সঙ্গে থাকা দম্পতি আহত হয়। কিশোরী স্বর্ণা দাসকে হত্যার পর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাৎক্ষণিক নিন্দা ও প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে।
সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে দু’টি প্রটোকল রয়েছে। জয়েন্ট ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গাইডলাইন্স ফর বর্ডার অথরিটিজ অব দ্য টু কান্ট্রিজ, ১৯৭৫ ও দ্য ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ কো-অর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান, ২০১১। এক বিশ্লেষক বলেন, বাস্তবে দেখা যায়, বিএসএফ এই প্রটোকল না মেনে সন্দেহভাজনদের ওপর সরাসরি গুলি চালায়। আর বয়ান হাজির করে তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছে বলে। যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। তার মতে, কাঁটাতারে কাপড় আটকে যাওয়া এক নিরস্ত্র কিশোরী ফেলানী কিংবা মায়ের হাত ধরে সীমান্ত পাড়ি দিতে চাওয়া কিশোরী স্বর্ণা দাস কোনো অবস্থাতেই অস্ত্রধারী বিএসএফের জন্য হুমকি হতে পারে না।
No comments