গাজার পর জ্বলছে লেবানন

গাজার পর এবার জ্বলছে লেবানন। সেখানে ইসরাইলি নৃশংসতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশু, বৃদ্ধ, নারী ও সাধারণ মানুষ। নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৫৮ জন। এর  মধ্যে কমপক্ষে ৩৫ জনই শিশু। তারপরও ইসরাইল থেমে নেই। তারা অকাতরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তার যুৎসই জবাবও দিচ্ছে যোদ্ধাগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। তারা মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কমপক্ষে একশ রকেট হামলা চালিয়েছে। দক্ষিণ লেবাননে হামলা অব্যাহত রাখে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। গাজা যুদ্ধে ইসরাইলকে বিশ্ব সম্প্রদায় যেমন কিছুই করতে পারেনি, হয়তো সেই সাহস নিয়ে তারা লেবাননে আগ্রাসী হামলা চালাচ্ছে। হামাসের বিরুদ্ধে  যে অভিযোগে তারা গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে, একই রকম অভিযোগ দাঁড় করেছে হিজবুল্লাহ’র বিরুদ্ধে।  লেবাননে ইসরাইলের আগ্রাসী হামলায় সোমবার ও মঙ্গলবার ৫৫৮ জন নিহত হওয়ার পর তেলআবিবমুখী ফ্লাইট বাতিল করেছে বৃটিশ এয়ারওয়েজ। যুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠার পর বৈরুতগামী কিছু ফ্লাইটও বাতিল করা হয়। কাতার এয়ারওয়েজ বলেছে, বুধবার পর্যন্ত তাদের বৈরুতগামী এবং  বৈরুত থেকে বহির্গামী ফ্লাইট অস্থায়ীভাবে স্থগিত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, আমাদের কাছে যাত্রীদের নিরাপত্তা সর্বাগ্রে। মঙ্গলবার সকালে বৈরুত-রফিক হারিরি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বোর্ডে দেখা যায়, বেশ কিছু ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে আছে ইস্তাম্বুল থেকে টার্কিশ এয়ারলাইন্স, প্যারিস থেকে এয়ার ফ্রান্স এবং আম্মান থেকে রয়েল জর্ডান। সাম্প্রতিক সময়ে বৈরুতে ফ্লাইট স্থগিত করেছে জার্মানির লুফথানসা, এয়ার ফ্রান্স এবং ডেল্টা এয়ার লাইন্স।

দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে নিউ ইয়র্কে চলমান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়ার কথা জানিয়েছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি। ইসরাইলের বরাবরের মতোই দাবি, তারা হিজবুল্লাহকে টার্গেট করে বিমান হামলা চালিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ইসরাইলের হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৬ শত মানুষ নিহত হয়েছেন। কয়েক দশকের মধ্যে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েনি লেবাননের বাসিন্দারা। দক্ষিণাঞ্চলে হামলার ফলে তারা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানের খোঁজে পালাচ্ছিলেন। তারা জানেন না কোথায় মিলবে নিরাপদ আশ্রয়। তবে উত্তরের দিকে ছুটছিলেন এসব মানুষ। এর ফলে উত্তরাঞ্চলে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও অনলাইন আল জাজিরা।

গত বছর অক্টোবরে হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের সংঘাত শুরু হলে ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় ইরান সমর্থিত গ্রুপ হিজবুল্লাহ। এরপর থেকেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সর্বশেষ লেবাননে পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের পর হিজবুল্লাহ-ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই হামলার আগে লেবাননের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে অনুরোধ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু লেবাননের জনগণের উদ্দেশ্যে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘ইসরাইলের যুদ্ধ আপনাদের সঙ্গে না, এটা হিজবুল্লাহ’র সঙ্গে। অনেক দিন ধরেই হিজবুল্লাহ আপনাদের  (লেবাননের জনগণ) ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।’

এই ঘোষণার পর দক্ষিণ লেবাননের শহরগুলো ছাড়তে শুরু করেছেন স্থানীয়রা। গাড়ি, ভ্যান, ট্রাক এবং বিভিন্ন যানবাহনে বোঝাই হয়ে শহর ছাড়তে দেখা যায় তাদের। কেউ কেউ একাই তার গাড়ি নিয়ে নিরাপদ স্থানের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। মায়েরা তাদের শিশুদের কোলে বা পিঠের সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে নিয়েছেন, যেন তারা হারিয়ে না যায়।
আবেদ আফু নামের এক ব্যক্তি রয়টার্সকে বলেছেন- আমরা ভীত। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের এক সড়কে তাকে তার গাড়ি নিয়ে পালাতে দেখা যায়। তিনি বলছিলেন, আমি শুধু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পালাচ্ছি। আমাদেরকে ইসরাইলের হামলা ঘিরে ফেলেছে। ওই হামলা ছিল ভয়াবহ। পালানোর সময় আবেদের সঙ্গে তার ৬ থেকে ১৩ বছর বয়সের তিন সন্তানও ছিল। আসলে তারা তখনো জানতেন না তাদের নিরাপদ আশ্রয় কোথায়?

mzamin

No comments

Powered by Blogger.