জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ হবে বিইআরসিতে by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

আগামী অক্টোবর মাসে জ্বালানি তেলের দাম কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। চলতি মাসে জ্বালানির দাম আন্তর্জাতিক বাজারের  সঙ্গে মিল রেখে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হয়েছিল। তবে উড়োজাহাজের জ্বালানি তেল (জেট ফুয়েল) ও ফার্নেস অয়েলের দাম এখন থেকে নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত ১৮ই সেপ্টেম্বর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে।

বিইআরসি’র সূত্র বলছে, অক্টোবর মাসের জন্য জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের প্রস্তাব এখনো পায়নি। তবে তারা প্রস্তুত রয়েছেন। দাম নির্ধারণের প্রস্তাব আসা মাত্রই প্রক্রিয়া শুরু করবেন।
অক্টোবরে জ্বালানি তেলের দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারণ হবে কিনা জানতে চাইলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নুরুল আলম মানবজমিনকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উপদেষ্টা বাইরে আছেন। আসলে সিদ্ধান্ত হবে।

এতদিন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জেট ফুয়েল ও ফার্নেস অয়েল নির্ধারণ করে আসছিল। অক্টোবর মাস থেকে এটি কার্যকর হবে। জেট ফুয়েল ও ফার্নেস অয়েলের দাম এখন থেকে নির্ধারণ করবে বিইআরসি। তবে অন্য জ্বালানির বিষয়ে এখনো মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দেয়নি।

উল্লেখ্য, বিইআরসি আইনে সকল ধরনের জ্বালানির নির্ধারণের এখতিয়ার বিইআরসিকে দেয়া হয়েছে। তবে বিধিমালা অনুমোদন না হওয়ার অজুহাতে এতদিন জেট ফুয়েল ও ফার্নেস অয়েলের দাম নির্ধারণ করে আসছিল বিপিসি। ২০০৩ সালে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন পাসের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও আধা-বিচারিক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠিত হয়। গ্যাস ও বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা এবং ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত বিইআরসি মূলত ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করে। এ পর্যন্ত ১৩টি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আর ১২টি প্রবিধানমালা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে অনুমোদনের অপেক্ষায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আইনে সকল ধরনের জ্বালানির দাম নির্ধারণের এখতিয়ার দেয়া প্রবিধানমালা ঝুলে থাকায় শুধুমাত্র গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করে আসছিল বিইআরসি। ২০২৩ সালে হঠাৎ করেই আইন সংশোধন করে নির্বাহী আদেশে দাম সমন্বয় (কম/বেশি) করার বিধান যুক্ত করা হয়। তারপর থেকে নির্বাহী আদেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করায় কার্যত বেকার হয়ে পড়ে আধা-বিচারিক প্রতিষ্ঠানটি। বিইআরসি গণশুনানির মাধ্যমে দাম চূড়ান্ত করায় ইউটিলিটিগুলোর নানা রকম অসঙ্গতি সামনে আসতো।
গত ২৭শে আগস্ট নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের আইন বাতিল করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের একক ক্ষমতা ফিরে পায় বিইআরসি। গেজেটে বিইআরসি আইনে ৩৪ (ক) ধারা সংযোজন করে নির্বাহী আদেশে দাম নির্ধারণের ক্ষমতা দেয়া হয় নির্বাহী বিভাগকে। গেজেটে ৩৪ (ক) ধারা বিলুপ্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম  করপোরেশনের চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আমিন-উল আহসান মানবজমিনকে বলেন, ফার্নেস অয়েল ও জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)তে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। তবে মন্ত্রণালয় থেকে এখনো ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম নির্ধারণের নির্দেশনা আসেনি।

কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর  জ্বালানি উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মানবজমিনকে বলেন, আইন অনুযায়ী এখন থেকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সব জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করবে। আগামী মাস থেকে বিইআরসি’র মতামতের ভিত্তিতে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ না হলে আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, চলতি মাসের জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের ফলে জনগণ কোনো সুবিধা পায়নি। বাজারে কোনো প্রভাবও পড়েনি। এতে শুধু ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়েছে। আমরা অন্তত ৩ বছরের মধ্যে দেশে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি। বিগত সরকার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বিইআরসি’র আইনকে শুধু খর্ব করেছে বললে ভুল হবে, বিইআরসি’র ক্ষমতাকে খর্ব করা হয়েছে। তাই বিইআরসিকে তার প্রকৃত শক্তি ফিরিয়ে দিতে হবে।

ক্যাব বলছে, বিইআরসি আইনের সংশোধনী ৩৪ ক বাতিল হয়েছে। ২০১২ সালে বিইআরসি প্রস্তাবিত পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের (পেট্রোল, ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, কেরোসিন ইত্যাদি) মূল্যহার নির্ধারণ সংক্রান্ত তিনটি প্রবিধানমালা কার্যকর দেখতে চাই ক্যাব। ক্যাব’র পক্ষ থেকে দেশের জ্বালানি খাতের নিরাপত্তায় ১১ দফা দাবি জানানো হয়। অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় রোধ করে ঘাটতি সমন্বয় ও পণ্য মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধ এবং সংকট মোকাবিলা করার লক্ষ্যে ৩ বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানির মূল্যহার বৃদ্ধি না করার দাবি জানানো হয়। বিইআরসি’র আওতায় বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি ২০২৪-এর আলোকে জ্বালানি খাত সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়নের জন্য একটি ‘জ্বালানি খাত সংস্কার কমিশন’-এর কথা বলা হয়েছে। কস্ট প্লাস নয় কস্ট বেসিসে লুণ্ঠনমুক্ত মুনাফাবিহীন সরকারি জ্বালানি সেবা দাবি ক্যাব’র।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.