সিলেট নগরে শৃঙ্খলা ফেরাতে মাঠে পুলিশ by ওয়েছ খছরু

অভ্যুত্থানের পর থেকে কোনো শৃঙ্খলা নেই সিলেটে। পুলিশ মাঠে না থাকার সুবাদে অনিয়মই পরিণত হয়েছে নিয়মে। যে যার মতো চলাফেরা করছেন। এই অবস্থায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে নগরের শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে এ কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে সিলেট পুলিশ পুরোদমে কার্যক্রমে নামলো। এতে সাড়া মিলছে সাধারণ মানুষের। পুলিশের এই কার্যক্রমের সঙ্গে পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকরা সাধুবাদ জানিয়েছেন। এর আগে অবশ্য দফায় দফায় পুলিশের তরফ থেকে নগরে মাইকিং করা হয়। তারও আগে নবাগত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের নিয়ে তার কার্যালয়ে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে সুধী সমাজের কাছ থেকে নগরীর সাম্প্রতিক সমস্যাবলী ও প্রতিকার সম্পর্কিত পরামর্শ উঠে আসে। এসব বৈঠকে পুলিশ কমিশনার পরামর্শকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করে তার আলোকে কার্যক্রম শুরু করেছেন। ৫ই আগস্টের পর থেকে মাঠে পুলিশ ছিল না। ফলে ট্রাফিক কার্যক্রম সামলান ছাত্র-জনতা। সঙ্গে ছিলেন ব্যবসায়ীরাও। একই সঙ্গে নগরের এসপি সহ প্রায় সবক’টি থানা ও ফাঁড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতার নাম নিয়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। এ সময় করা হয়েছিল অগ্নিসংযোগ। এ কারণে থানা, ফাঁড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন পুলিশ সদস্যরা। এই সুযোগে নগরে  বের আসে কয়েক হাজার অবৈধ যানবাহন। পাশাপাশি মার্কেট ছেড়ে হকাররা চলে আসেন ফুটপাথে। আগের মতো জঞ্জালের নগরে পরিণত হয় সিলেট। ধীরে ধীরে পুলিশ ফেরায় নগরের ট্রাফিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়। এখন থানা ও ফাঁড়ির কার্যক্রম স্বল্প পরিসরে হলেও শুরু হয়েছে। পুলিশ থেকে সেবা পাচ্ছে মানুষ। এই অবস্থায় কয়েক সপ্তাহ আগে সিলেটে নতুন পুলিশ কমিশনার যোগ দিয়েই নতুন করে কার্যক্রম শুরু করার ঘোষণা দেন। তার এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে দৃশ্যমান কাজও শুরু হয়েছে।  মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া শাখা থেকে জানানো হয়েছে- নগরের শৃঙ্খলা ফেরাতে সুধীজনের সঙ্গে বৈঠকের পর ১৯শে সেপ্টেম্বর পুলিশ কমিশনার ট্রাফিক বিভাগকে ব্রিফিং দেন। আর এতে তিনি জানিয়েছেন- জনদুর্ভোগ লাঘব করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে পেশাদারিত্ব ও সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে অপেশাদার আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সতর্ক করেন। তিনি সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষা ও যানজট নিরসনে আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে অগ্রণী ভূমিকা রাখার জন্য পুলিশের সকলের প্রতি আহ্বান জানান। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- নগরে শৃঙ্খলা ফেরাতে রেজিস্ট্রেশনবিহীন ও অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটরিচালিত রিকশা-অটোরিকশাসহ অন্যান্য অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮ থেকে সিলেট নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান পরিচালনা শুরু করা হয়। এ সময় কাগজপত্রবিহীন মোটরযানের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ। সকাল থেকে নগরে কোতোয়ালি, শাহ্পরাণ সহ কয়েকটি থানায় এলাকার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে সিএনজি অটোরিকশা, লেগুনা ট্রাক প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। যাদের কাগজ-পত্র ঠিক রয়েছে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর যাদের যানবাহনের কাগজপত্র পাওয়া যায়নি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় চলাচলকারী যেসব সিএনজিচালিত অটোরিকশা সবুজ রঙের উপর হলুদ রঙের বর্ডার দিয়ে চিহ্নিত করা হয়নি সেগুলোতে রঙ ব্যবহার করার জন্য বলে দেয়া হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ জানায়- বিশেষ কারণ ছাড়া মেট্রো এলাকার বাইরের অটোরিকশাগুলো মেট্রো এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না ও নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানানো হয়। মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার এই তিনদিন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান ট্রাফিক বিভাগ। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা ও সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা হবে। এদিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা বিএম আশরাফউল্লাহ তাহের মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সিলেটে প্রথম দিনের কয়েক ঘণ্টার অভিযানে ২০০টি অবৈধ যানবাহন ও ২০০ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন থেকে নিয়মিত অভিযান চলবে বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.