শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা

শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেয়া হয়েছে জানিয়ে তাদেরকে কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, এরপর কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে সরকার তা বরদাশত করবে না। গতকাল সচিবালয়ে সরকার, বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের উপস্থিতিতে তিনি এসব কথা বলেন। আসিফ মাহমুদ বলেন, আপনাদের ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নেয়া হয়েছে। আর যেই দাবিগুলো শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মেনে নেয়া যায়, সেই দাবিগুলো মেনে নেবো খুব দ্রুতই। আপনাদের প্রতি আহ্বান থাকবে, দেশের শিল্পকে বাঁচানোর জন্য দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য যে নতুন বাংলাদেশ আমরা অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছি, তাকে সমুন্নত রাখা এবং সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনারা স্ব স্ব কর্মস্থলে ফিরে যাবেন।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, মালিক পক্ষ, শ্রমিক পক্ষ এবং সরকার পক্ষের মধ্যে বারবার আলোচনা হচ্ছে, দীর্ঘ এক মাস ধরে আলোচনা, দাবি-দাওয়ার ভিত্তিতে যে মূল দাবি ১৮টা, আমরা আইডেন্টিফাই করেছি। সেই ১৮ দাবির বিষয়ে মালিক পক্ষ এবং শ্রমিক পক্ষ মিলে একটা সমাধানে পৌঁছানো গেছে। এই দাবিগুলো সমাধানের দিকে আমরা আগাবো। যেগুলো সমাধান সম্ভব, সেগুলো আজকে ইমিডিয়েটলি সমাধান করে দিয়েছি এবং যেগুলো দুই পক্ষের বৈঠকের মধ্যে সমাধান হবে, সেগুলো শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে হবে। শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা চলমান থাকবে।

বুধবার থেকে সব কারখানা চালু রাখার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের শিল্পকারখানা যাতে বাঁচে, শিল্প যাতে হাতছাড়া না হয়, সেজন্য শ্রমিক, মালিক, সরকার- সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো। শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান থাকবে, আপনারা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন। যদি শিল্প না বাঁচে তাহলে শ্রমিকও বাঁচবে না, সরকারেরও প্রয়োজন হবে না এবং মালিকও বাঁচবে না। আমাদের শিল্পকে বাঁচাতে হবে, আমাদের শিল্প যাতে হাতে থাকে-সেটা নিশ্চিত করতে হবে। মালিকদের প্রতি আহ্বান থাকবে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন খুব দ্রুত পরিশোধ করার ব্যবস্থা নেবেন।

আসিফ মাহমুদ সতর্ক করে বলেন, আগামীকাল (বুধবার) থেকে এই দাবিগুলো মেনে নেয়ার প্রেক্ষিতে যদি কোনো পক্ষ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে, সেটা যদি কোনো মালিক পক্ষ বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে অনাগ্রহ প্রকাশ করে এবং সদিচ্ছার অভাব থাকে এবং শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যদি বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেটার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং যেহেতু সবগুলো দাবির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, সব পক্ষকে আমরা বসাতে পেরেছি। সরকার কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা আর বরদাশত করবে না। সেটার ব্যাপারে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ একটা আলোচনার পর আমরা একটা সমঝোতায় পৌঁছেছি। এখন এই সমঝোতা স্মারকে আমার মালিকপক্ষ স্বাক্ষর করেছে, আমার শ্রমিক ভাই-বোন স্বাক্ষর করেছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো অবস্থাতেই নিজেদের হাতে নিবেন না। আগামীকাল (বুধবার) থেকে আশা করবো, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা যেন শিল্প এলাকায় না হয়। যদি আগামীকাল থেকে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, এর জন্য আপনারা যারা স্বাক্ষর করেছেন-আপনারাই এই বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী হবেন। সেই সময় আপনারা পিছপা হতে পারবেন না।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আপনাদের মনে করতে হবে-এই শিল্প আমাদের সব কিছু দিয়ে যাচ্ছে। শুধু আপনাদের না, দেশবাসীকেও দিয়ে যাচ্ছে-এটাও আমাদের মনে করতে হবে। শুধু দেড় কোটি মানুষ নয়, পুরো বাংলাদেশ এর উপর নির্ভরশীল। সুতরাং এটা খেয়াল রাখতে হবে। আপনাদের আজকের অঙ্গীকার রাখতে হবে; তাহলে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না। এর পরেও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে সেই জন্য আমাদের অন্যান্য ব্যবস্থা নিতে হবে, যা কারও জন্যই কাম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.