ইউনূস-মোদি বৈঠক প্রশ্নে মন্তব্য নয়: রাজনাথের বক্তব্যে অবাক হয়েছি- পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক সংক্রান্ত ‘স্পেকুলেন’ নিয়ে কোনো মন্তব্যই করলেন না পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তবে তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আর ইসরাইল-হামাস সংঘাতের সঙ্গে বাংলাদেশ পরিস্থিতির তুলনা সংক্রান্ত ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে গভীর উষ্মা প্রকাশ করেছেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা খোলাসা করেই বলেন, প্রতিবেশী দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সাম্প্রতিক বক্তৃতায় যতটা না উদ্বিগ্ন, তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি। রোববার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মিস্টার হোসেন বলেন, এ ধরনের কথা তিনি (রাজনাথ) কেন বললেন, এর কোনো কারণ আমি খুঁজে পাচ্ছি না। উপদেষ্টা বলেন, আমি কোনো অবস্থাতেই মনে করি না যে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যুদ্ধবিগ্রহের আশঙ্কা আছে। ভারতকে শান্তিপ্রিয় দেশ উল্লেখ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে ভবিষ্যৎ যুদ্ধ মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকতে বলেছেন। গত বৃহস্পতিবার উত্তর প্রদেশের লক্ষেèৗতে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডারদের প্রথম যৌথ সম্মেলনে তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ইসরাইল-হামাস সংঘাতের পাশাপাশি বাংলাদেশের পরিস্থিতির উল্লেখ করে এ কথা বলেন। তিনি সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের এসব ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণেরও পরামর্শ দেন। রাজনাথের ওই বক্তব্য প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, তিনি (রাজনাথ) তার নিজের দেশের কনজাম্পশনের জন্য বলেছেন কিনা, সেটা আমাদের বুঝতে হবে। আর তিনি যেভাবে বলেছেন, তা অনেকটা বিটিং অ্যারাউন্ড দ্য বুশের (কথা এড়ানো) মতো।


ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য তো ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতির কোনো কারণ দেখি না। আর হামাসের যে সমস্যা, তাতে এখানে কী সম্পর্ক, আর এর সঙ্গে ইউক্রেন আর হামাসের সঙ্গে বাংলাদেশ কীভাবে তুলনীয়, তা আমার বোধগম্য নয়। আমরা দেখবো কথাটা তিনি কেন বললেন? ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য বাংলাদেশের জন্য হুমকি কিনা? এমন প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি এখনো মনে করি, তিনি (রাজনাথ) সেটা তার দেশের অভ্যন্তরীণ কনজাম্পশনের জন্য বলেছেন। কাজেই এ নিয়ে আমি কোনো আগাম ধারণা বা অনুমান করতে চাই না। আমরা অবশ্যই দেখবো, এটা কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে। ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাচ্ছেন কিনা?  এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, স্বাভাবিকভাবে যেকোনো দেশ যে কাউকেই রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে কিনা তা আমরা দেখবো।

নিউ ইয়র্কে ইউনূস-মোদি বৈঠক, পদ্ধতি অনুযায়ী এগোবে বাংলাদেশ: নিউ ইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের গুঞ্জন বিষয়ক এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, সাধারণত নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে শীর্ষ নেতাদের বৈঠক আয়োজনের একটি পদ্ধতি রয়েছে। সেই অনুযায়ী বাংলাদেশ এগোবে। ইউনূস-মোদি বৈঠক নিয়ে শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে দাবি করা হয়, চলতি মাসের শেষের দিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা। তবে নয়াদিল্লি এখনো এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, এমন ব্যক্তিদের বরাতে হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, চলতি সপ্তাহের শুরুতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেসব মন্তব্য করেছেন, তার ছায়া পড়তে পারে ওই বৈঠকের আয়োজনে। এমনকি  প্রস্তাবিত বৈঠকটি না-ও হতে পারে। কারণ সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেসব মন্তব্য করেছেন তা ভালোভাবে নেয়নি নয়াদিল্লি। সেই রিপোর্টের বিষয়ে উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রোববার তিনি বলেন, আমি এখনই কিছু বলতে চাই না যে হচ্ছে বা হচ্ছে না (সৌজন্য সাক্ষাৎ)। বস্তুত মোদি যাচ্ছেন এটার ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। এ ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া আছে, সেই অনুযায়ী আমরা এগোবো। এটা এমন নয় যে, এক মাস আগে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী আগাবে। তারা যদি চায় যে, দেখা করবে না, আমাদের তো জোর করে দেখা করার কিছু নেই। নিউ ইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীর সংখ্যার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সাতজনের তালিকা যেটা প্রকাশিত হয়েছে, সেটি সঠিক। এর বাইরেও আরও তালিকা আছে, এতে আমিও আছি। তবে প্রতিনিধিদলের সদস্য ১০-১২ জনের বেশি হবে না বলে আশা করেন উপদেষ্টা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২২শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন। ২৯শে সেপ্টেম্বর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
রোহিঙ্গা এবং...
এদিকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মি. হোসেন বলেন, আমরা খুব স্পষ্টভাবে বলেছি, আর একজন রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় দিতে পারবো না। কিন্তু কিছু ঢুকে যাচ্ছে, এটা আমরা জানি। সেটাকে যতটুকু পারা যায় ঠেকানোর চেষ্টা করছে। বিজিবি প্রতিদিনই পুশব্যাক করছে। একটা বড়সড় এলাকা নিয়ে তারা বিভিন্ন জায়গা দিয়ে ঢুকছে।
তিনি বলেন, ইউএনএইচসিআর চায় আমরা আশ্রয় দেই। আমরা ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি, যতটুকু ভূমিকা পালন করার তার চেয়ে বেশি করেছি। আমাদের পক্ষে আর সম্ভব নয়। যারা আমাদের উপদেশ দিতে চায় বা আসে তারা বরং তাদেরকে নিয়ে যাক, আমাদের এতে কোনো আপত্তি নেই। স্মরণ করা যায়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে থাকার সুযোগ নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে অন্তত আট হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.