অব্যাহত ধ্বংসযজ্ঞ ইসরাইলের নৃশংসতা

পশ্চিমতীর এবং গাজায় সাধারণ ফিলিস্তিনিদেরকে অকাতরে হত্যা করছে ইসরাইলি সেনারা। সারাবিশ্ব দেখছে। শান্তি আলোচনার নামে যা হচ্ছে, তা একরকম তামাশা। একদিকে আলোচনা, অন্যদিকে মানুষ হত্যা। এর মাধ্যমে সময়ক্ষেপণ করছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেই সময়ে তার সেনারা আগ্রাসী হয়ে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে ফিলিস্তিনিদের ওপর। প্রতিদিন সেখানে রক্ত ঝরছে। রোববার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় গাজা জুড়ে কমপক্ষে ৩১ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল একটি স্কুলে। সেখানেও হামলা চালিয়েছে নৃশংস ইসরাইলি বাহিনী। সেখানে নিহত হয়েছেন আটজন। ওদিকে হামাসের হাতে জিম্মিদের ফেরত আনার জন্য নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়ছেই। কমপক্ষে সাড়ে সাত লাখ মানুষ ইসরাইলের রাজপথে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভ প্রতিবাদে রাজপথ জ্বলছে। তবে এই বিক্ষোভে নেতানিয়াহুর সরকারের মনোভাবে কোনো পরিবর্তন আনবে বলে মনে হচ্ছে না। এ সপ্তাহে জনমত জরিপে দেখা গেছে নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা কমে যাচ্ছে। যদি এখন নির্বাচন হয় তাহলে তার দল লিকুদ পার্টি মাত্র ২২টি আসন পাবে। অন্যদিকে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্টজের দল পাবে ২৩ আসন। শনিবার লেবাননের দক্ষিণে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। সেখানে কমপক্ষে তিন প্যারামেডিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এরপর মানবিক মূল্যবোধ ইসরাইল নগ্নভাবে লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ করেছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি। গত বছর ৭ই অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ৪০,৯৩৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। এ যুদ্ধে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৯৪,৬১৬ জন ফিলিস্তিনি। ইসরাইলি সেনাবাহিনী যেভাবে নৃশংস হামলা চালাচ্ছে তেমনি ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা দখলীকৃত পশ্চিমতীরে নৈরাজ্য চালাচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের অলিভ বা জলপাই বাগান তারা নষ্ট করে দিয়েছে। দিয়ের ইসতিয়া গ্রামে এমন ধ্বংসলীলা চালিয়েছে তারা। ফিলিস্তিনি মুসলেহ ইউসেফ মানসুরের বাগানের গাছগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইলি ইয়াকির আউটপোস্টের কাছের বসতি স্থাপনকারীরা। হাজারো বছর ধরে ফিলিস্তিনিরা ওই এলাকায় অলিভ চাষ করে আসছেন। প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে ওইসব গাছ থেকে তারা অলিভ সংগ্রহ করেন। তারপর তা থেকে অলিভ অয়েল তৈরি করেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক এজেন্সি বলেছে, ইসরাইলিদের দেয়া ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং অলিভ বাগানে হামলার ফলে গত বছর ১২০০ টন অলিভ অয়েল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওদিকে গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবির থেকে সাংবাদিক আনাস আল শরিফ বলছেন, জাবালিয়া ক্যাম্পে মোরসি পরিবারের বাড়ি টার্গেট করে সহিংস হামলা করেছে ইসরাইলি বিমান বাহিনী। সেখানে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছিলেন মেডিকেল এবং সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। পাশাপাশি নিহতদের দেহ উদ্ধার করছিলেন। কামাল আদওয়ান হাসপাতালের কাছে আল আলামি এলাকাকে টার্গেট করে এই হামলা চালানো হয়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ইসরাইলি আর্মি রেডিও থেকে রিপোর্ট করা হচ্ছিল যে, দখলীকৃত পশ্চিমতীরের জেরিকো ঘেরাও করে রেখেছে সেনাবাহিনী। পশ্চিমতীর-জর্ডান ক্রসিংয়ে ভয়াবহ এক হামলার পর এই অভিযান চালাচ্ছে তারা। ওদিকে ইসরাইলের চলমান হামলার মধ্যেই গাজার দক্ষিণাঞ্চলে পোলিও টিকা দেয়া অব্যাহত রেখেছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত মাসে ২৫ বছরের মধ্যে গাজায় প্রথম পোলিও ধরা পড়ে। ধ্বংসযজ্ঞের ফলে অপরিষ্কার পরিবেশ এবং পয়ঃনিষ্কাশনের অভাবে এই রোগের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। 
mzamin

No comments

Powered by Blogger.