হাসিনার স্বৈরশাসন হটাতে তাদের অবদান অসামান্য

অবরুদ্ধ সময়। বন্দি গণতন্ত্র। শেখ হাসিনার একনায়কতন্ত্রে পিষ্ট দেশ। মত প্রকাশে বাধা। আইনি-বেআইনি হুমকি। খুন-গুম। মিডিয়ার বড় অংশ স্বৈরাচারের তোষণে ব্যস্ত। কেউ আবার লড়াই করেছেন অসীম সাহসিকতায়। তবুও অসহায় মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে একদল বাংলাদেশি সাংবাদিক অকুতোভয়ে লড়ে গেছেন নিজ দেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের মুুক্তির জন্য।

শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের অবসানে তাদের অবদান অবিস্মরণীয়। তারা প্রতিনিয়ত বিগত সরকারের দুঃশাসনের নানাচিত্র বিশ্ববাসীর সামনে হাজির করেছেন। দুনিয়ার নানা ফোরামে তুলে ধরেছেন নিপীড়িত বাংলাদেশিদের কথা। যেসব সাংবাদিক, ব্যক্তি বিদেশ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বড় অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- মুশফিকুল ফজল আনসারী, পিনাকী ভট্টাচার্য, তাসনীম খলিল, ড. কনক সারোয়ার, জুলকারনাইন সায়ের খান সামি, ফাহাম আব্দুস সালাম, ইলিয়াস হোসেন, মনির হায়দার, শাহেদ আলম, আব্দুর রব ভুট্টো, নাজমুস সাকিব, জাওয়াদ নির্ঝর, ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সহ অনেকে।

জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। গেল কয়েক বছরে অন্যতম আলোচিত মুখ সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। বাংলাদেশের পরিস্থিতি দিনের পর দিন উপস্থাপন করে গেছেন তিনি। জানতে চেয়েছেন জাতিসংঘ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। জবাবদিহির আওতায় আনতে চেয়েছেন ক্ষমতাবানদের। দৈনিক ইত্তেফাকের কূটনৈতিক রিপোর্টার ছিলেন মুশফিকুল ফজল আনসারী। ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিব। দায়িত্ব পালন করছেন জাস্ট নিউজের সম্পাদক হিসেবে। শুধু প্রশ্ন করেই নিজের কাজ শেষ করেননি আনসারী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবসময় সরব থেকেছেন। অনুপ্রাণিত করেছেন কোটি কোটি গণতন্ত্রকামী মানুষকে। একইসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নানা সেমিনার আয়োজনেও যুক্ত ছিলেন এই সাংবাদিক।

খ্যাতিমান সাংবাদিক তাসনীম খলিল। সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক। গত কয়েক বছরে একের পর এক অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করে সরকারের এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মুখোশ উন্মোচন করেছেন। কুখ্যাত আয়নাঘরের বিষয়টি নেত্র নিউজই প্রথম সামনে নিয়ে আসে। গুম, ক্রসফায়ার নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করে তোলপাড় তৈরি করে সারা দুনিয়ায়।

পেশায় চিকিৎসক, ফ্রান্সে থাকা মানবাধিকারকর্মী পিনাকী ভট্টাচার্য। তীক্ষ্ণ ও ক্ষুরধার বক্তব্যের কারণে সাধারণ জনগণের মধ্যে তিনি তুমুল জনপ্রিয়। তার লাখ লাখ অনুরাগী রয়েছেন। মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে একের পর এক ভিডিও বক্তব্য হাজির করেছেন জনগণের সামনে। সরকারের নানা অপকর্মের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

সাংবাদিক ড. কনক সারোয়ার ইউটিউব টকশোতে সরকারের মুখোশ উন্মোচন করে গেছেন। এজন্য তার পরিবারের ওপর অনেক নির্যাতন হয়েছে। কিন্তু তিনি পিছু হটেননি। সরকারের দুর্নীতি আর অনিয়মের ঘটনা বারবারই সামনে নিয়ে এসেছেন। আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রথম আলোচনায় আসেন জুলকারনাইন সায়ের খান সামি। শেখ হাসিনার সমর্থনে জেনারেল আজিজ আহমেদ পরিবার কীভাবে দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে তোলে তা আলোয় আসে ওই রিপোর্টে। এরপর একের পর এক নানা অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেছেন সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রকাশ করেছেন ভয়ঙ্কর সব তথ্য। প্রকাশ করেছেন বহু গোপন নথি-যা সরকারকে বিপাকে ফেলে।

সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিপুল জনপ্রিয়। অনুসন্ধানী এই সাংবাদিক শুরু থেকেই সরকারের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। দুর্নীতি আর অনিয়মের তথ্য প্রকাশ করেছেন সাহসিকতার সঙ্গে। সাংবাদিক মনির হায়দার ও শাহেদ আলম আমেরিকা থেকে নানা বিশ্লেষণাত্মক ভিডিও প্রকাশ করেছেন। সরকারের সমালোচনায় মুখর ছিলেন তারা। সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝরও পুরোটা সময় সরব ছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষের একাধিক দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। ইউটিউব চ্যানেল নাগরিক টিভির নাজমুস সাকিবও সরব ছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে। প্রকাশ করেছেন দুর্নীতির বিভিন্ন রিপোর্ট। সাংবাদিক আব্দুর রব ভুট্টো ভিডিওসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে সরকারের অপকর্ম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখেন। এ কারণে তার পরিবারকেও হয়রানির মুখে পড়তে হয়। বিজ্ঞানী ফাহাম আব্দুস সালামের ভিডিও বেশ সাড়া ফেলে। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে তার বক্তব্য বিপুল আবেদন তৈরি করে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.