বৈষম্যের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিলেন নতুন পররাষ্ট্র সচিব by মিজানুর রহমান
রোববার দিনের শুরুতে তিনি তার দায়িত্ব বুঝে নেন। দুপুর ১২টায় তিনি মন্ত্রণালয়ে সব কর্মকর্তাদের সঙ্গে টাউন হল মিটিং। তারপর ডিজিদের কাছ থেকে উইংওয়ারি ইনপুট নেন রাত ৮টা পর্যন্ত। মধ্যখানে তিনি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে অত্যাসন্ন জাতিসংঘ অধিবেশন নিয়ে কিছু ইনপুটও দেন। পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে নিয়োগের আগে চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন জসীম উদ্দিন। সমদূরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে তিনি মঙ্গোলিয়ারও দায়িত্বে ছিলেন। ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কাতারে এবং ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গ্রিসে রাষ্ট্রদূত হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন জসীম উদ্দিন। ২০১২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ডেপুটি হাইকমিশনার ছিলেন তিনি। তার আগে ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ছিলেন ওয়াশিংটন ডিসিতে। বাংলাদেশ দূতাবাসে মিনিস্টার ও ডেপুটি চিফ অব মিশনের দায়িত্ব সামলেছেন। ২০০৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসে কাউন্সেলর হিসেবে এবং ২০০০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রথম সচিব ও কাউন্সেলর ছিলেন। এরমধ্যে তিনি দেশেও বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত হেডকোয়ার্টারে তিনি দক্ষিণ এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অনুবিভাগের প্রধান ছিলেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর দুটোই করেছেন। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মডার্ন ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ঢাকার ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে বছরব্যাপী কোর্সে অংশ নেন। সদ্যবিদায়ী পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ এ বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গত ১লা সেপ্টেম্বর তাকে বিদায় জানানো হয়। জসীম উদ্দিন পররাষ্ট্র সচিবের শূন্য পদেই নিয়োগ পেলেন। স্মরণ করা যায়, ২০১৯ সাল থেকে পররাষ্ট্র সচিবের চেয়ারে থাকা মাসুদ বিন মোমেনের চাকরির মেয়াদ ২০২২ সালের ৫ই ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাকে আরও ২ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করে রেখে দেয় শেখ হাসিনা সরকার।
খারাপ পোস্টিং বা ভালো পোস্টিং বলে কোনোকিছু রাখতে চাই না: যোগদানের প্রথম দিনেই পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দীন নিয়োগ ও পদায়ন নিয়ে সেগুনবাগিচায় চলমান অন্যরকম অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে নিজের পরিকল্পনার কথা জানান। সহকারী সচিব থেকে ঊর্ধ্বতন সব কর্মকর্তার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি বলেন, খারাপ পোস্টিং বা ভালো পোস্টিং বলে যে কথাটি চালু হয়েছে এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা এটা রাখবো না। এখানে যোগ্যতা এবং কর্ম বিবেচনায় সব কিছু হবে। যথা সম্ভব ন্যয্য আচরণের চেষ্টা করবো আমি। গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত বিপ্লবের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পলায়নের পর থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বঞ্চিত কর্মকর্তারা ঘুরে দাঁড়ান। তারা নানাভাবে তাদের বঞ্চনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ফরেন সার্ভিস এসোসিয়েশনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এ নিয়ে রীতিমতো ঝড় ওঠে। দাবি উঠে ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের সুবিধাভোগীদের কবল থেকে ফরেন সার্ভিসকে মুক্ত করার। বিশেষত ছাত্র-জনতার সর্বাত্মক আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে ‘জামায়াত-বিএনপির যড়যন্ত্র’ বলে ট্যাগ দেয়া, গণহত্যার পক্ষে সাফাই এবং হেলিকপ্টার থেকে গুলির বিষয়টি অস্বীকার করে যারা মানবতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নগ্নভাবে বিদায়ী সরকারকে রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন সেইসব অতি উৎসাহীদের এখনই বিদায় এবং আইনের আওতায় আনার দাবিতে সোচ্চার হন পেশাদাররা। তারা ট্রান্সফার-পোস্টিং নিয়েও কথা বলেন। পেশাদারিত্বের বদলে চাটুকারিতা, পদস্থ ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের পদলেহন, প্রভাবশালী দুষ্টুচক্রের অন্যায়-অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা এবং রাজনৈতিক আনুগত্য বিবেচনায় যেসব পোস্টিং হয়েছে তা বাতিলের দাবি জানান। তাদের দাবির প্রেক্ষিতেই আগের পররাষ্ট্র সচিবের বিদায় এবং নতুন পররাষ্ট্র সচিবের নিয়োগ হয়।
No comments