স্বাধীনতা কী? by ফাহাম আব্দুস সালাম

২২/২৩ বছর পর গতকাল জুম্মার নামাজ পড়লাম উত্তরার মাটির মসজিদে। নাইন্টিজে এখানেই নামাজ পড়তাম।  আমি যদি জওন এলিয়ার মতো কবিতা লিখতে পারতাম হয়তো আপনাকে জানাতে পারতাম স্মৃতির টান ঠিক কতোটা অসহায় করে মানুষকে।

জানি না ইমাম সাহেব কে কিন্তু তিনি তার বাংলা খুৎবার পার্টে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমাদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের প্রয়োজনয়ীতা তুলে ধরেন। কোন সমাজে তারা বাস করতেন - সেই বিভীষিকা বর্ণনা করলেন।

এখানে মসজিদের মধ্যেও ‘আমিত্ব’ ঢোকানো হয়েছিলো (আমাকে একজন জানালেন জানাজার নামাজের আগেও নাকি লোকাল আওয়ামীরা বক্তৃতা দিতো - বাংলাদেশে) তিনি এই অসুখ সারানোর কথা বললেন। সমাজের প্রতিটি জায়গায় একটা হাতা-কাটা কোট পরলে অযোগ্য মানুষদের সব ধরনের সুবিধা দেয়া হোতো। তিনি এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের আহবান জানালেন। কোনো রাজনীতিবিদ না - বরং একজন শিক্ষকের মতো করেই জানালেন যে বাংলাদেশের যেই অবস্থা ছিলো ২ সপ্তাহ আগে সেই পরিস্থিতিতে আপনি ঠিক কীভাবে অত্যাচারিত হয়েছেন।

আমি আশ্চর্য হয়েছি তার বাগ্মিতায়। সত্যিই একজন মনস্তাত্ত্বিকের মতো কথা বললেন তিনি। তার আগ্রহ ব্যক্তির কী সর্বনাশ হয়েছে একটা করাপ্ট সিস্টেমের কারণে। তার বক্তব্য এতোটাই জীবন ঘনিষ্ঠ ও সার্বজনীন যে এই খুৎবা যদি চার্চ কিংবা মন্দিরে দেয়া হোতো - একটা মানুষও  আপত্তি করতো না।

আমি সত্যিই ইম্প্রেসড। আমি আমার জীবনে সারা দুনিয়ায় এর চেয়ে সুন্দর খুৎবা খুব বেশী শুনি নাই।

এই যে পাবলিক প্লেসে এরকম অকপট সত্য বলা - বাংলাদেশে সেটা অসম্ভব ছিলো। একজন ড্রাইভার আমাকে বললেন -“ কী যে ভালো লাগতেছে ভাইয়া বলতে পারবো না। কথা বলতে পারতেছি”। প্রতিটা মানুষ আমাকে বলেছেন এই যে সে নির্ভয়ে কথা বলতে পারছে - এই আনন্দের কোনো তুলনা নাই। চিন্তা করেন যে একজন ড্রাইভার মনে করছিলো যে তাকে গুম করা হবে য়ুটিউবের  ভিডিয়ো শেয়ার করলে। তাকে হয়তো গুম করা হোতো না। কিন্তু ভয়টা কোন লেভেলে গিয়েছিলো একবার সেটা ভাবেন। এখনো কয়েকজনকে দেখলাম হাসিনার সমালোচনা করতে গিয়ে অভ্যাসবশত গলার স্বর নামিয়ে ফেললেন।

কিন্তু প্রত্যেকের মতে - আমার মনে হোলো যে এই কথা বলার স্বাধীনতা ফিরে পাওয়াটা জুলাই বিপ্লবের প্রধান অর্জন।

যেই লাউ সেই কদু যে বলে - সত্যিই মনে হয় যে কিছু মানুষ আসলে চটকানা ডিজার্ভ করে।

(লেখাটি লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেওয়া)

No comments

Powered by Blogger.