আদানি গ্রুপকে ভারতের ভিতরে বিদ্যুৎ বিক্রির অনুমতি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবর

বাংলাদেশে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ভারত মোট কমপক্ষে ১১০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। তার মধ্যে বিতর্কিত আদানি গ্রুপ সরবরাহ দিয়েছে সবচেয়ে বেশি টাকার বিদ্যুৎ। মোট রপ্তানির মধ্যে এর পরিমাণ শতকরা ৯.৩ ভাগ। যার মূল্য কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলার। ভারতের এই একটিমাত্র বিদ্যুৎ কোম্পানিকে তার পুরোটা বিদ্যুৎ বাংলাদেশের কাছে রপ্তানি করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন রেজুলেশন সংশোধন করার ফলে ভারতের ভিতরেও বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে আদানি গ্রুপ। উল্লেখ্য, দুই বছর আগের তুলনায় এ সময়ে বিদ্যুৎ বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৩ ভাগের কিছুটা ওপরে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালানোর পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু নয়া দিল্লি বিদ্যুৎ রপ্তানির রেজুলেশন সংশোধন করে একমাত্র এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে ঝুঁকিমুক্ত করেছে। বর্তমানে কোম্পানিটি ভারতের ঝাড়খন্ডে অবস্থিত তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের পুরোটা বাংলাদেশের কাছে রপ্তানি করতে চুক্তিবদ্ধ।

কলকাতাভিত্তিক ইস্টার্ন রিজিওনাল পাওয়ার কমিটির (ইআরপিসি) প্রাপ্ত রেকর্ড অনুযায়ী এজেপিএল’স গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে কমপক্ষে ৭৫০ কোটি ৮০ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ রপ্তানি করেছে।

এই পরিমাণ মোট রপ্তানি করা ১১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ইউনিটের শতকরা ৬৩ ভাগ। ছাত্রজনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে নয়া দিল্লি যাওয়ার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ১২ই আগস্টের এক স্বারকের মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুত আমদানি/রপ্তানি বিষয়ক ২০১৮ সালের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের একটি রেজুলেশন সংশোধন করার উদ্যোগ নেয় নয়া দিল্লি। সংশোধিত রেজুলেশনটি ‘একচেটিয়াভাবে প্রতিবেশী দেশে’ বিদ্যুত সরবরাহ করা বিদ্যুৎ বিষয়ক ইউটিলিটিগুলোর সার্থে সম্পর্কিত এবং এই পরিবর্তনটি মূলত ঝাড়খন্ডের গোড্ডা জেলায় আদানি ইউনিটের মতো প্লান্টগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করার লক্ষ্যে। এতে বলা হয়, ভারতে যদি পূর্ণাঙ্গ বা আংশিক সক্ষমতা থাকে তাহলে এমন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ভারতের ভিতরে বিদ্যুৎ বিক্রি করার জন্য ভারতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার জন্য অনুমতি দিতে পারে ভারত সরকার।  

তবে আদানি পাওয়ার বৃহস্পতিবার বলেছে যে, তারা বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সম্প্রতি ভারত সরকার বিদ্যুৎ রপ্তানির নিয়মে যে সংশোধন এনেছে তাতে বিদ্যমান চুক্তিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। বাংলাদেশে বর্তমানে ভারতীয় চারটি কোম্পানি বিদ্যুৎ রপ্তানি করছে। তারা হলো- দুটি বিদ্যুৎ বাণিজ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভাইপার নিগাম লিমিটেড (এনভিভিএন) ও পিটিসি ইন্ডিয়া লিমিটেড। দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট সেম্বকরপ এনার্জি ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং আদানি পাওয়ার। এসব বিদ্যুৎ রপ্তানির শতকরা কমপক্ষে ৯০ ভাগ আসে একটিমাত্র কেন্দ্র থেকে। তা হলো ঝাড়খন্ডের গোড্ডা জেলার মোতিয়া গ্রামে অবস্থিত কয়লাচালিত আদানি পাওয়ার (ঝাড়খন্ড) লিমিটেড (এজেপিএল)। এজেপিএলের গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুতের শতকরা ১০০ ভাগ কিনে নেয়ার চুক্তি আছে বাংলাদেশের। ২০১৯ সালের মার্চে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার স্পেশাল ইকোনমিক জোনের এক ঘোষণায় একথা বলেছে। সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য শতভাগ কয়লা আমদানি করা হয়।

ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের প্রাপ্ত বাণিজ্যিক ডাটা অনুযায়ী ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রতিবেশী বাংলাদেশে ১১৯৩৩.৮৩ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ রপ্তানি করেছে। এর মূল্য ১.০৩ বিলিয়ন ডলার। এই দেশে ভারতের মোট রপ্তানি হয়েছে ১১.০৬ বিলিয়ন ডলার। তার মধ্যে এই বিদ্যুৎ থেকেই এসেছে শতকরা ৯.৩ ভাগ। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানি থেকে দ্বিতীয় আয় এসেছে ডিজেল থেকে। এর পরিমাণ ৮২৯.৫৯ মিলিয়ন ডলার ( মোট রপ্তানির শতকরা ৭.৫ ভাগ)। অন্যদিকে কটন রপ্তানি হয়েছে ৫৯৫.৮১ মিলিয়ন ডলারের। মোট রপ্তানির শতকরা ৫.৩৮ ভাগ কটন রপ্তানি করে তা রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে।

২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে ভারত মোট ১২.২১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। তার মধ্যে বিদ্যুৎ রপ্তানির পরিমাণ ১.০৭৫ বিলিয়ন ডলার (মোট রপ্তানির শতকরা ৮.৮ ভাগ)। এ সময়ে কটন রপ্তানি হয়েছে ৪৯৫.৯৭ মিলিয়ন ডলারের (শতকরা ৪ ভাগ)। ডিজেল রপ্তানি হয়েছে ৪২৩.০৩ মিলিয়ন ডলারের (শতকরা ৩.৪৬ ভাগ)।

এর আগের অর্থ বছরের হিসাবে কটন রপ্তানি ছিল শীর্ষে। এ সময়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি কটন রপ্তানি হয়েছে। এর পরিমাণ ১.৫৮ বিলিয়ন ডলার। এ অর্থবছরে মোট রপ্তানি হয়েছে ১৬.১৫ বিলিয়ন ডলার। তার মধ্যে কটন রপ্তানি হয়েছে শতকরা ১০ ভাগ। এর পরে রয়েছে গম। তা রপ্তানি হয়েছে ১.১৮ বিলিয়ন ডলারের (শতকরা ৭.৩৬ ভাগ)। ৬ষ্ঠ অবস্থানে ছিল বিদ্যুৎ রপ্তানি। এ সময়ে বিদ্যুৎ রপ্তানি হয়েছে ৪৯৮.২৫ মিলিয়ন ডলারের।

আদানির গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র দুই বছর আগে তাদের অপারেশন শুরু করে। গত বছরের জুনে পূর্ণাঙ্গ অপারেশন শুরু করে। ১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে যেটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে তার সবটাই বাংলাদেশকে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহের মাসিক শেয়ার সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইআরপিসির ডাটা অনুযায়ী এ বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে  এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুতের শতকরা ৯০ ভাগের বেশি দেয়া হয়েছে বাংলাদেশকে। মার্চে এর পরিমাণ ছিল শতকরা ৭৫ ভাগ।

No comments

Powered by Blogger.