সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান রিমান্ডে: নজরদারির হোতা গুম-খুনের বিস্তর অভিযোগ

গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বিস্তর অভিযোগে অভিযুক্ত  সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত মহাপরিচালক। গত বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করে  বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নিউমার্কেট এলাকায় হকার শাহজাহান হত্যার ঘটনায় নিউমার্কেট থানার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই মামলায় এর আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে। তারা ১০ দিনের রিমান্ডে আছেন।

জিয়াউল আহসানের কর্মজীবন: প্রায় ১৫ বছর ধরে আলোচিত-সমালোচিত জিয়াউল আহসান ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। তিনি সেনাবাহিনীর একজন প্রশিক্ষিত কমান্ডো ও প্যারাট্রুপার ছিলেন। এছাড়া দীর্ঘদিন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র‌্যাব) চাকরি করেছেন। ২০০৯ সালের ৫ই মার্চ তিনি উপ-অধিনায়ক হিসেবে র‌্যাবে যোগ দেন।

একই বছর ২৭শে আগস্ট লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক হন। ২০১৩ সালের ৭ই ডিসেম্বর থেকে তিনি র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকার সময় তাকে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সে (ডিজিএফআই) বদলি করা হয়। ২০১৬ সালের ২৮শে এপ্রিল তাকে সেখান থেকে এনএসআই’র পরিচালক হিসেবে সংযুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে এনটিএমসি’র পরিচালক হন। ২০২২ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক আদেশে এনটিএমসি’র মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরদিন ৬ই আগস্ট জিয়াউল আহসানকে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

গুম-খুনের অভিযোগ: সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অসংখ্য ব্যক্তিকে গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। মূলত ব্যাপক পরিসরে গুমের ঘটনা শুরু হয় তার হাত ধরে। সেটি শুরু হয়েছিল ১/১১-এর পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর। ওই সময় আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী, বিরোধী ঘরানার রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, সরকারবিরোধী সমালোচকসহ অসংখ্য ব্যক্তি গুমের শিকার হন। তখন দেশের গণমাধ্যমগুলোতে প্রায়ই বিভিন্ন ব্যক্তি গুম হয়েছেন বলে খবর ছাপা হতো। ভুক্তভোগীর পরিবারগুলো থানা থেকে শুরু করে ডিবি, র‌্যাব কার্যালয়ে ধরনা দিয়ে নিখোঁজ স্বজনের খোঁজ পেতো না। অভিযোগ রয়েছে এসবের নেপথ্যে ছিলেন জিয়াউল আহসান। সূত্রগুলো বলছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে যে কয়টি গুম খুনের ঘটনা ঘটেছে তার প্রত্যেকটির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জিয়াউল আহসানের সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী থেকে শুরু করে চৌধুরী আলম, সাজেদুল ইসলাম সুমন,  আদনান চৌধুরী, কাওসার আহমেদ, ইফতেখার আহমেদ দিনার, জুনায়েদসহ আরও অসংখ্য বিএনপিপন্থি ও সরকারবিরোধী আলোচনা-সমালোচনার সঙ্গে যুক্তদের গুম হতে হয়েছে। তাদের হদিস এখনো পাওয়া যায়নি।  তবে বছরের পর বছর ধরে এত অভিযোগের পরও বহাল তবিয়তে ছিলেন জিয়াউল আহসান। আওয়ামী লীগ সরকারের আশির্বাদপুষ্ট হওয়াতে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পেতেন না। আওয়ামী লীগ সরকার যেমন তার কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছে ঠিক তেমনি তিনিও দাপটের সঙ্গে চাকরি করছিলেন। তিনি এতটাই সরকারের আস্থাভাজন ছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে সরকারের  পোস্ট দিয়েছেন। তিনি তার পোস্টে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রেখে ঘরে ফেরার কথাও বলছিলেন। এরকম অনেক পোস্ট তিনি দিয়েছিলেন। যদিও সরকার পতনের পর সেগুলো তিনি ডিলিট করে দেন।

আয়না ঘরের জনক: কথিত আয়না ঘর (গোপন বন্দিশালা) তৈরি ভিন্ন মতালম্বীদের তুলে নিয়ে বছরের পর বছর আটকে রাখার অভিযোগ রয়েছে জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সরকার নিয়ে যারাই নেতিবাচক সমালোচনা ও সরকারের জন্য যেসব ব্যক্তির মন্তব্য এবং কর্মকাণ্ড হুমকিস্বরূপ ছিল তাদের তুলে নিয়ে আয়না ঘরে বন্দি করে রাখা হতো। অমানবিক নির্যাতন করা হতো। বছর দুয়েক ধরে একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে আয়না ঘরের বিষয়টি জানাজানি হয়। সেখান থেকে মুক্ত হওয়া এক ব্যক্তি বিদেশি গণমাধ্যমে তার বর্ণনা তুলে ধরেন। এরপর থেকে দেশে নিখোঁজ ও গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নজর ওই আয়না ঘর বা গোপন বন্দিশালার দিকে যায়। ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর অনেক স্বজনের আন্দোলনের মুখে তিনজন বন্দিকে মুক্ত করে দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা মাইকেল চাকমা। তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন ২০১৯ সালের ৯ই এপ্রিল। ৭ই আগস্ট তিনি ছাড়া পান। এর আগে মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (বরখাস্ত) আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহমাদ বিন কাসেম (আরমান)। ২০১৬ সালের ৯ই আগস্ট আহমদ বিন কাসেমকে মিরপুর ডিওএইচএস থেকে এবং এর কয়েক দিন পর ২৩শে আগস্ট আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে গুম করা হয়েছিল। আয়না ঘর থেকে তাদেরকে মুক্তি দেয়া হলেও গুম হওয়া অন্যান্য ব্যক্তিদের পরিবার এখনো পথ চেয়ে বসে আছেন। কবে নিখোঁজ ও গুম হওয়া স্বজনরা ফিরে আসবেন। আবার অনেকেই ফেরার আশা ছেড়ে দিয়ে এখন বিচারের অপেক্ষায় আছেন। তারা ধরেই নিয়েছেন গুম হওয়া স্বজনরা আর বেঁচে নাই। তাদেরকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

নিজেই আয়না ঘরে ছিলেন: গতকাল জিয়াউল আহসানকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। অন্যদিকে জিয়াউল আহসানের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত জিয়াউল আহসানকে ৮ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। শুনানিতে জিয়াউল আহসানের আইনজীবী নাজমুন নাহার আদালতকে বলেন, আমার মক্কেল কখনো ডিজিএফআইয়ে কর্মরত ছিলেন না। তিনি ‘আয়নাঘর’ (গোপন বন্দিশালা) বানাননি। ফেসবুকে তাকে নিয়ে মিডিয়া ট্রায়াল করা হচ্ছে। গত ৭ই আগস্ট বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় জিয়াউল আহসান আদালতকে বলেন, আমাকে ৭ই আগস্ট বাসা থেকে নিয়ে গেছে। আমি ৮ দিন আয়নাঘরে ছিলাম। আমি কোনো আয়নাঘর বানাইনি। আমার হার্টের ৭০ ভাগ ব্লক্‌ড। আমাকে স্বেচ্ছায় অবসর দেয়া হয়েছে। আমি কখনো ধানমণ্ডিতে যাইনি। এনটিএমসি কেবল ডিজিটালি গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেছে। আমার নামে আগে কখনো মামলা হয়নি। শুনানিতে বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ উল্লাহ খান আদালতকে বলেন, জিয়াউল আহসান গুম-খুনের নায়ক। তিনি ‘জেনোসাইড’-এর সঙ্গে যুক্ত। ‘আয়নাঘর’-এর জনকও তিনি। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার ক্রীড়নক হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত। সদ্য সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা ২০১২ সালের পর থেকে একযুগ ধরে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাবলম্বীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে অপহরণ ও গুমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

কমিশন গঠন করে বিচারের দাবি: ২০০৯ সাল থেকে শত শত পরিবারের সদস্যরা বলপূর্বক গুমের শিকার হন। পরে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা এককাতারে এসে তাদের প্রিয়জনের ভাগ্যের পরিণতি জানার জন্য ‘মায়ের ডাক’ নামে প্ল্যাটফর্ম চালু করেন। ‘মায়ের ডাক’ এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম জিয়াউল আহসান গ্রেপ্তারের পর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, দেশে ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময় গুম হওয়াদের সন্ধান ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে আমরা তাকে (জিয়াউল আহসান) গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছিলাম। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু গ্রেপ্তার নয়, বিচার-তদন্ত ছাড়া শত শত গুম-খুনে তার মতো জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার ও কমিশন গঠন করে বিচার করতে হবে। তবে শুধু গ্রেপ্তার করলেই হবে না, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতসহ প্রত্যেকটা গুম-খুনের গ্রহণযোগ্য তদন্ত করতে হবে। সানজিদা বলেন, গুমে জড়িত জিয়াউল আহসানসহ জড়িত সবার বিরুদ্ধে শিগগিরই মামলা করা হবে। আমরা অনেকবার গুম হওয়াদের সন্ধানের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছি। দ্বিতীয়বার দেশ স্বাধীনের পর গত কয়েকদিনে মাত্র তিনজন গুম হওয়া মানুষ বের হয়ে এসেছেন। কিন্তু আমরা বাকি ভাইদের ফেরত পাইনি। আমরা জানতে চাই আমাদের ভাইদের কি হয়েছে? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যারা উপদেষ্টা রয়েছেন তাদের কাছে দাবি, জিয়াউল আহসানের মতো যারা গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হোক। যারা আয়নাঘরের মতো বিভিন্ন জায়গায় এখনো বন্দি রয়েছেন তাদের মুক্ত করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক। প্রত্যেকটা গুমের ঘটনাকে আলাদা করে বিচার করা হোক। তিনি বলেন, আমাদের দাবি, জাতিসংঘের অধীনে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে মানবতাবিরোধী, বিচারহীনভাবে গুম-খুনে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা হোক। এটা নিশ্চিত করা হোক, আর নতুন করে কেউ যেন গুম খুনের শিকার না হন। এমন দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা হোক, যাতে নতুন করে কেউ যেন জিয়াউল আহসান হওয়ার সাহস না পায়।

ফোনে আড়ি পাততেন জিয়াউল: সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা ২০২২ সাল থেকে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এনটিএমসির দায়িত্বে থাকাকালীন একের পর এক কল রেকর্ড ফাঁস করেন তিনি। রাজনৈতিক ব্যক্তি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য হুমকি এমন সব ব্যক্তির স্পর্শকাতর কল রেকর্ড তার নির্দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে দেয়া হতো। তিনি এমটিএমসি’র দায়িত্বে থাকাকালীন সরকারের এই সংস্থাটির আড়িপাতার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। এই সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তার নির্দেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মোবাইল ফোনে আড়িপাতা হতো। এরপর ওইসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কল রেকর্ড সংগ্রহ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হতো। এসব কল রেকর্ডের উপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে অনেক সুশীল সমাজের লোকজনকে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হতো। গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, এনটিএমসি মোবাইল ফোনের ভয়েস ও এসএমএস, ল্যান্ডফোন ভয়েস এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আড়ি পাততে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে ফেসবুক, টুইটার, টেলিগ্রাম, ভাইবার, ইমো, স্কাইপি অ্যাপেও আড়ি পাততে পারে এনটিএমসি। অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে ওয়েবসাইট ব্লগ, ই-মেইলেও শতভাগ আড়িপাতার সক্ষমতা রয়েছে সংস্থাটির।  এসব সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দিনের পর দিন অন্যায়ভাবে মানুষের কল রেকর্ড ফাঁস করা হয়েছে।

আন্দোলনে ইন্টারনেট বন্ধের অভিযোগ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যতবার ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল সেটিও জিয়াউল আহসানের নির্দেশে হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। ১৭ই জুলাই থেকে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশনাগুলো মূলত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সংস্থা এনটিএমসি থেকেই আসতে থাকে। তার নির্দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলার সময় গত ১৭ই জুলাই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট ও ১৮ই জুলাই রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়। টানা পাঁচদিন সব ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল ১০ দিন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের মতো সেবা বন্ধ ছিল ১৩ দিন।

যে মামলায় গ্রেপ্তার হলেন জিয়াউল: গত ১৬ই জুলাই কোটা বিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় পাপোশের দোকানের কর্মচারী শাহজাহান আলীকে হত্যার অভিযোগে তার মা আয়শা বেগম (৪৫) একটি মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাতনামাদের। এ মামলার অভিযোগে আয়শা বেগম বলেন, আমার ছেলে শাহজাহান আলী নিউমার্কেট থানার মিরপুর রোডের বলাকা সিনেমা হলের গলির মুখে পাপোশের দোকানে কাজ করতো। প্রতিদিনের মতো ১৬ই জুলাই সকাল ৯টার দিকে দোকানে কাজ করার জন্য যায়। ওইদিন সন্ধ্যায় অজ্ঞাত পরিচয় একজন ব্যক্তি ছেলের মোবাইল ফোন নম্বর থেকে আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করে জানায়, শাহজাহান গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ধানমণ্ডি পপুলার হাসপাতালে ভর্তি। আমি সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক পপুলার হাসপাতালে যাই এবং জানতে পারি, আমার ছেলেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমি তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই এবং মর্গে গিয়ে ছেলের মরদেহ শনাক্ত করি। তখন বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে জানতে পারি, গত ১৬ই জুলাই আমার ছেলে অজ্ঞাত পরিচয় কোটা বিরোধীদের কর্তৃক গুরুতর রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হয়ে নিউমার্কেট থানাধীন মিরপুর রোডের টিটি কলেজের বিপরীত পাশে কাদের আর্কেড মার্কেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর পড়ে ছিল। মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, অজ্ঞাত পরিচয় আসামিরা আমার ছেলের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে; ফলে আমার ছেলে রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। উপস্থিত পথচারীরা তাকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত ধানমণ্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ছেলের অবস্থা খারাপ দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার ছেলেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গত ১৬ই জুলাই সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা ৫ মিনিটের দিকে মৃত ঘোষণা করেন।

No comments

Powered by Blogger.