বাবা মুক্তিযোদ্ধা না হলেও ডিবি হারুনের চাকরি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় by আশরাফুল ইসলাম

ডিএমপি’র সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের বাবা আবুল হাশেম হাসিদ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা সনদ ভাগিয়ে নেন তিনি। ভুয়া এই সনদ ব্যবহার করে হারুন ২০তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশে চাকরি নেন। কেবল হারুন নয় তার অপর ছোট তিন ভাইও মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা নিয়েছেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় জিয়াউর রহমান মাদকদ্রব্যে ও তৃতীয় জিল্লুর রহমান পুলিশে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেন। এ ছাড়া সবার ছোট এবিএম শাহরিয়ার মুক্তিযোদ্ধা কোটায় মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। বর্তমানে জিয়াউর রহমান মাদকদ্রব্যের এসআই ও জিল্লুর রহমান পুলিশের ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এ ছাড়া ডা. এবিএম শাহরিয়ার বড় ভাই হারুনের প্রতিষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রাজধানীর মিরপুরে হারুনের টাকায় একটি হাসপাতালের অংশীদার হিসেবে সেটি পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদের তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার মো. আবদুল হামিদের প্রভাবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় জায়গা পান হারুনের বাবা আবুল হাশেম হাসিদ। কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তৎকালীন কমান্ডার ফজলুল হক চাপে পড়ে আবুল হাশেম হাসিদকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রত্যয়ন দেন। তখন তৎকালীন মিঠামইন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড থেকে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি জামুকাতে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু সে প্রতিবাদ ও অভিযোগ আমলে নেয়া হয়নি।

মিঠামইন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার কোরবান আলী বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হারুন অর রশীদের বাবা আবুল হাশেম হাসিদ ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা। মুক্তিযুদ্ধের সময় পক্ষে বা বিপক্ষে তিনি কোনো ভূমিকা রাখেননি। সে সময় গ্রামের খুব সাধারণ একজন মানুষ ছিলেন আবুল হাশেম হাসিদ। তার গোষ্ঠীর লোকজন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় ভূমিকা রেখেছিলেন। এগুলো এলাকার সবাই জানে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ডেপুটি স্পিকার থাকার সময়ে আবুল হাশেম হাসিদকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন। ঘাগড়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তৎকালীন কমান্ডার ফজলুল হক চাপে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আবুল হাশেম হাসিদকে প্রত্যয়ন দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা এর বিরোধিতা করেছিলাম। তৎকালীন মিঠামইন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এডভোকেট রফিকুল আলম রতন এবং আমি জামুকাতে লিখিতভাবে অভিযোগও করেছিলাম। কিন্তু ক্ষমতার প্রভাবের কারণে আমাদের সেই অভিযোগের ফাইলই খুঁজে পাইনি। তবে আমরা যেটি সত্য, সেটি সব সময় বলে এসেছি। আবুল হাশেম হাসিদ মারা যাওয়ার পর তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় যখন দাফন করা হয়, তখন আমরা অনেকেই সে সময় যাইনি। অনেকে আবার চাপে পড়ে গিয়েছেন। জানা গেছে, গাজীপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকার সময় হারুন অর রশীদের বাবা আবুল হাশেম হাসিদ ২০১৬ সালের ৭ই এপ্রিল মারা যান। পরদিন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন কিশোরগঞ্জের আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সূর্যসেন হলে থাকতেন তিনি। ১৯৯৬ সালের ১২ই জুনের নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার মো. আবদুল হামিদ এডভোকেটের স্নেহভাজন হওয়ার কারণে তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০০০ সালে হারুন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশে চাকরি নেন। তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার মো. আবদুল হামিদ এডভোকেটের সুপারিশে তিনি ভাইভাতে শতভাগ নাম্বার পান। এ নিয়ে সে সময় পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়।


No comments

Powered by Blogger.