নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা তরুণদের: রয়টার্সের প্রতিবেদন
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কথা বিবেচনা করছে। এক্ষেত্রে তারা বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দলের দ্রুত নির্বাচনের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান চার সমন্বয়কের সঙ্গে কথা বলে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়, গত ১৫ বছরে দেশে যেই কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল তা যেন পুনরায় ফিরে না আসে সেই লক্ষ্যে তারা সোচ্চার ভূমিকা পালনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, হাসিনা ১৭ কোটি জনতার ওপর কঠোর নীতি অবলম্বন করে দেশ শাসন করেছেন।
জুন মাসে কোটা সংস্কারের আন্দোলন শুরু করে দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যা জুলাই থেকে জোরালো হয়। কোটার নামে হাসিনা সরকার তার নিজ দলের লোকজনের জন্য সরকারি চাকরিতে সুযোগ তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ সমন্বয়কদের। এর মাধ্যমে সমাজে চরম বৈষম্য বেড়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। মূলত এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে সড়কে আন্দোলনে নামেন দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী। পরে এই আন্দোলন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রূপ নেয়।
আন্দোলন দমনে হাসিনা কঠোর নীতি অবলম্বন করেন। হাসিনার এই কঠিন নীতিই তার জন্য বুমেরাং হয়েছে। ছাত্রদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে দমন-পীড়নের ফলে দেশের মানুষের যে ক্ষোভ তৈরি হয় তাতে একপ্রকার ভেসে গেছে হাসিনার মসনদ। ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশে একক বৃহত্তম সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছে হাসিনা যেখানে তিন শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন মূলত তরুণদের প্রতিনিধিত্ব প্রমাণ করেছে। আন্দোলনটিকে ‘জেনারেল জেড’ (জেন জেড) বিপ্লব নামে অনেকেই প্রশংসা করেছে। হাসিনা তার আমলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বললেও কার্যত দেশে বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছিল। যার ফলে ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আন্দোলনে শরিক হয়েছে বলে সমন্বয়কেরা জানিয়েছেন।
জনরোষে দেশ থেকে হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে শান্তিতে নোবেল পাওয়া বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। অন্তর্বর্তী সরকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কও রয়েছেন। গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশকে শাসন করেছে হাসিনার আওয়ামী লীগ বা তার শক্ত প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এদের দুজনের বয়সই ৭০-এর উপরে। ছাত্রনেতারা এই পুরাতন প্রথার অবসান ঘটিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে আলোচনা করছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান মাহফুজ আলম বলেছেন, আগামী এক মাসের মধ্যে জাতির সামনে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এক্ষেত্রে সর্বস্তরের নাগরিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাবির ওই তরুণ ছাত্রনেতা। সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলনের ভবিষ্যতের জন্য ছাত্রদের পরিকল্পনার বিশদ বিবরণ আগে জানানো হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সামনে থেকে রয়টার্সকে ওই তরুণ জানিয়েছেন, দুই রাজনৈতিক দলের প্রতি মানুষ সত্যিই খুব ক্লান্ত। তরুণদের ওপর জনগণের আস্থা রয়েছে।
এই আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক তাহমিদ চৌধুরী বলেছেন, তাদের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা এখনো দলের কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছেন। এই রাজনৈতিক দল ধর্মনিরপেক্ষ এবং দেশের জনগণের বাকস্বাধীনতার ওপর ভিত্তি করে গঠিত হবে বলে জানিয়েছে ওই তরুণ। পুনরায় যেন দেশে আবার স্বৈরশাসনের আগমন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই দল গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ছাত্রনেতারা।
No comments