তারা কোথায়? by মিজানুর রহমান
নিয়োগ বাতিলের আগেই মিশন ছেড়েছেন রাজনৈতিক বিবেচনায় কানাডাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে নিযুক্ত দুই কাউন্সেলর মোবাশ্বিরা ফারজানা মিথিলা ও অপর্ণা রানী পাল। ৩১শে আগস্টের মধ্যে তাদের অটোয়ায় দায়িত্ব ছেড়ে ঢাকায় ফেরার আদেশ জারি করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু তারা সে পর্যন্ত অপেক্ষা করেননি। ১৩ই আগস্ট প্রত্যাবর্তনের আদেশ হাতে পাওয়ার পরপরই গা-ঢাকা দিয়েছেন মিথিলা ও অপর্ণা। মিশন থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় গ্রহণ দূরে থাক, তারা এখন আর কারও সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছেন না। দুই কাউন্সেলরের অনুপস্থিতি এবং তাদের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগের চেষ্টায়ও হদিস না পাওয়ার বিষয়টি সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নোটিশে এনেছেন অটোয়ায় নবনিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাহিদা সোবহান। ২১শে আগস্ট পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বরাবর তিনি একটি নোট পাঠান। স্থানীয় সূত্র বলছে, সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী অপর্ণা পালের স্বামী অনেক আগেই কানাডায় সেটেল করেছেন। এখন তিনি দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়ার বন্দোবস্ত করার পথে রয়েছেন। এজন্য চটজলদি লাল পাসপোর্ট ছেড়েছেন। যেহেতু তিনি এখন পর্যন্ত সাধারণ পাসপোর্টের আবেদন করেননি, তাই স্থানীয়দের ধারণা তার কাছে আগে থেকেই সাধারণ পাসপোর্ট থাকতে পারে। সূত্র বলছে, ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং পলায়নের রাতেই অপর্ণা পাল নিজের এবং মিথিলা ফারজানা ব্যক্তিগত ও স্বামী-সন্তানের অনুকূলে থাকা কূটনৈতিক পাসপোর্ট সারেন্ডারের আবেদন করেন। দ্রুত পাসপোর্ট বাতিলের জন্য তারা তদবিরও করেন। রাষ্ট্র সরকারবিহীন থাকা অবস্থায় অর্থাৎ ৮ই আগস্ট তাদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিলের ফাইল উঠে এবং অবিশ্বাস্য দ্রুততায় (ওই দিনেই) তা নিষ্পত্তি হয়। নথিতে দেখা গেছে, পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব)-এর অনুমোদন সাপেক্ষে মহাপরিচালক প্রশাসন ডিএম সালাউদ্দিন আহমদ ফাইলটি উত্থাপন এবং নিষ্পত্তি করেন। ফাইলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে মহাপরিচালক কনস্যুলার ও কল্যাণকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। কনস্যুলার অনুবিভাগ সূত্র বলছে, পররাষ্ট্র সচিবের নির্দেশনা পেয়ে মিথিলা ফারজানার পরিবারের অনুকূলে থাকা ৩টি কূটনৈতিক পাসপোর্ট, মিথিলা (ডি ০০০১২১২৩), তার স্বামী জ্যোতি জাইন উদ্দীন পাসপোর্ট (ডি ০০০১২১২২) ও ছেলে অন্তর জিষ্ণুর পাসপোর্ট (ডি০০০১২১২১) এরইমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অপর্ণা রানী পালের অনুকূলে থাকা পাসপোর্টও (ডিসি ৭০০৮৯২১) বাতিল করা হয়। গত নভেম্বরে বেসরকারি একাত্তর টিভির সংবাদ পাঠিকা ও উপস্থাপক মোবাশ্বিরা ফারজানা মিথিলাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় তৎকালীন সরকার। আগামী দুই বছরের জন্য তাকে ওই অনুবিভাগে পরিচালক বা বিদেশ মিশনে কাউন্সেলর পদে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এদিকে ২০১০ সালের ১৪ই ডিসেম্বর রাজনৈতিক বিবেচনায় কানাডা মিশনে সেকেন্ড সেক্রেটারি হিসেবে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি অপর্ণা পাল। সেই থেকে ৫ দফা মেয়াদ বৃদ্ধি এবং দু’দফা পদোন্নতি পেয়ে (প্রথম সচিব এবং সর্বশেষ কাউন্সেলর) তিনি মিশনটিতে এক যুগের বেশি সময় ধরে ছিলেন।
No comments