আনসারদের অবস্থানে দিনভর অবরুদ্ধ সচিবালয় রাতে উত্তেজনা

দাবি আদায়ে সচিবালয় ঘিরে আনসার সদস্যদের অবস্থান করায় গতকাল দিনভর অবরুদ্ধ ছিল সচিবালয়। দাবি আদায়ের আশ্বাস দেয়ার পরও তারা অবস্থান চালিয়ে যাওয়ায় এক অমানবিক পরিস্থিতি তৈরি হয় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রে। রাত সাড়ে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন কয়েকজন উপদেষ্টাসহ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ থাকায় খাবার-পানি সংকটে পড়েন তারা। আনসাররা অবস্থান না ছাড়ায় রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের শিক্ষার্থীরা টিএসসিতে জড়ো হয়ে সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এতে উত্তেজনা তৈরি হয়। একই সময়ে সচিবালয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার তথ্য পাওয়া যায়। রাত ১০টায় শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় আনসার সদস্যরা সচিবালয় এলাকা ছেড়ে যায়।

ওদিকে বিকালে আনসার সদস্যদের প্রতিনিধি নিয়ে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এখন থেকে আনসারে কোনো ‘রেস্ট প্রথা’ থাকবে না। তিনি বলেন, আমরা ৩ উপদেষ্টা এবং অন্যান্য সহকর্মী সবার সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, একইসঙ্গে অন্যান্য দাবি-দাওয়াগুলো নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সবকিছু পর্যালোচনা করে আমাদের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবে। সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা একটি সিদ্ধান্ত নেবো। আনসারে ‘রেস্ট প্রথা’ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতি ৩ বছর চাকরির পর আনসার সদস্যদের ৬ মাস রেস্টে থাকা লাগে। এই ৬ মাস পর তারা আবার জয়েন করেন। এই ৬ মাস তাদের খুব মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। নিয়োগ বিধিমালা থেকে এই প্রথা বাতিল করে কীভাবে তাদের চাকরিতে রেগুলার করা যায়, সে প্রক্রিয়ায় কাজ করা হচ্ছে। সাধারণ আনসারদের মধ্যে ৪ জন প্রতিনিধি নিয়ে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তারা একটি সুপারিশ দেবেন। এ সময় তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, যেহেতু একটি কমিটি হয়েছে, সেহেতু বিচার-বিশ্লেষণ করে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমাদের একটি জাতীয় সংকট চলছে। আমাদের অনেকদিকে কাজ করা লাগছে। এই দুর্যোগকালীন সময়েও এই সুপারিশ কমিটি সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবে। আনসার ভাইদের যে সমস্যা সেগুলো নিয়ে আলোচনা করে একটি যৌক্তিক সমাধানে আমরা পৌঁছবো। তবে প্রাথমিকভাবে তাদের ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে, বিভিন্ন দাবি নিয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসা আনসার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেন, আমরা উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি খুব আন্তরিক ছিলেন।

আমরা দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করছি। এদিকে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অধীন সাধারণ আনসার সদস্যদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ করতে বলা হয়েছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আনসার শাখা-২ এর উপসচিব কে এম আল আমীন স্বাক্ষরিত আদেশে এ কমিটি গঠন করা হয়। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অধীন সাধারণ আনসার (পুরুষ/মহিলা), এসিস্ট্যান্ট প্লাটুন কমান্ডার (এপিসি) ও প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) কর্তৃক উত্থাপিত দাবি-দাওয়ার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে নির্দেশক্রমে কমিটি গঠন করা হলো। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদকে। কমিটির সদস্যরা হলেন-আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-মহাপরিচালক (প্রশাসন) কর্নেল তসলিম এহসান, ২৭ আনসার ব্যাটালিয়ন বান্দরবান সুয়ালকের পরিচালক রাসেল আহমেদ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সহকারী পরিচালক (রেকর্ড) মো. আবুল কালাম আজাদ, ১৩ আনসার ব্যাটালিয়ন রাঙ্গামাটি বাঘাইছড়ি মারিশ্যার কোম্পানি কমান্ডার মো. হুমায়ুন কবির শরীফ, সাধারণ অঙ্গীভূত আনসার সদস্য কর্তৃক গঠিত আহ্বায়ক কমিটি থেকে ৪ জন এবং সদস্য সচিব আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালক (প্রশাসন) জাহানারা আক্তার।

No comments

Powered by Blogger.