চাকরি জাতীয়করণের দাবি: অবরুদ্ধ সচিবালয়, আটকা উপদেষ্টা-সচিবরা
রাত সোয়া ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তারা সচিবালয় অবরুদ্ধ করে রাখেন। এতে সচিবালয়ের ভেতরে কয়েকজন উপদেষ্টা ও সচিবসহ বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী আটকা পড়েন।
সচিবালয়ে কর্মরত দুই মন্ত্রণালয়ের দুজন জনসংযোগ কর্মকর্তা কালবেলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত আনসাররা রাজপথ ছাড়বে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে শাহবাগ ও প্রেস ক্লাবের সামনে ত্রাণের গাড়ি আটকে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি ফেসবুকে স্টাটাস দিয়ে বলেন, ‘এই সংকটের সুযোগ নিয়ে সরকারকে চেপে ধরে যারা দাবি আদায়ের জন্য আজকে রাস্তায় ত্রাণের গাড়ি আটকে আন্দোলন করছেন, তারা জাতির শত্রু।
কর্মকর্তারা জানান, ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিলের সিদ্ধান্ত মানছেন না আনসাররা। এক দফা দাবি বা চাকরি জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন ও রাজপথ ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
আনসারদের তিন বছর চাকরি করার পর ছয় মাস বিশ্রামে থাকার ‘রেস্ট প্রথা’ রয়েছে। এ পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা তারা মানছেন না। অন্যান্য দাবি-দাওয়া নিয়ে একটি কমিটি গঠনের কথাও জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
আনসারদের দাবি, তারা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার। তাদের আশ্বাস দেওয়ার পরও চাকরি জাতীয়করণ করা হয়নি। দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত সচিবালয় থেকে কাউকে বের হতে দেবেন না এবং কাউকে প্রবেশ করতে দেবেন না। এমন পরিস্থিতিতে সচিবালয়ের সব গেট বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনেক দর্শনার্থীকে বের হতে না পেরে সচিবালয়ের ভেতর গেটগুলোর সামনে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
একজন আনসার সদস্য বলেন, আমাদের প্রতিনিধিদের মিটিং-এ উপদেষ্টারা রেস্ট প্রথা বাতিলের কথা জানালেও আমরা এটা মানি না। আমরা চাই জাতীয়করণ। আমাদের এক দফা। এ দাবি মানতেই হবে। দাবি না মানলে আমরা রাজপথ ছাড়ব না।
এদিকে সচিবালয়ে আটকে পড়া কর্মকর্তারা গতকাল রাত সোয়া ৮টায় জানান, আনসারদের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে ফের অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে সচিবালয়। গতকাল রোববার দুপুর ১২টার পর তারা সচিবালয়ের সামনে এবং অন্যান্য গেটগুলোতে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে তাদের একাংশ সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন।
জানা গেছে, দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে আন্দোলনরত আনসাররা সচিবালয়ের তিন নম্বর গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকেন। এতে করে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর আগে দুপুর ১২টার পর চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। এরপর অর্ধশতাধিক আনসার ঢুকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গেটটি দ্রুত বন্ধ করে দেয়। ভেতরে ঢুকে তারা চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
গত দুদিন ধরে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছেন আনসাররা। তাদের দাবি, তারা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। আশ্বাস দিয়েও চাকরি জাতীয়করণ করা হয়নি বলে দাবি তাদের।
‘রেস্ট প্রথা’ বাতিলের আশ্বাস : স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আমরা তিন উপদেষ্টা এবং অন্যান্য সহকর্মী সবার সাথে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, এখন থেকে আনসারে কোনো ‘রেস্ট প্রথা’ থাকবে না। তিনি বলেন, একই সঙ্গে অন্যান্য দাবি-দাওয়াগুলো নিয়ে একটি কমিটি করা হবে। এই কমিটি সবকিছু পর্যালোচনা করে আমাদের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবে। সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা একটি সিদ্ধান্ত নেব।
আনসারে ‘রেস্ট প্রথা’ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতি তিন বছর চাকরির পর আনসার সদস্যদের ছয় মাস রেস্টে থাকা লাগে। এই ছয় মাস পর তারা আবার জয়েন করেন। এই ছয় মাস তাদের খুব মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। নিয়োগ বিধিমালা থেকে এই প্রথা বাতিল করে কীভাবে তাদের চাকরিতে রেগুলার করা যায়, সে প্রক্রিয়ায় কাজ করা হচ্ছে। সাধারণ আনসারদের মধ্যে চারজন প্রতিনিধি নিয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে তারা একটি সুপারিশ দেবেন।
এ সময় তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, যেহেতু একটি কমিটি হয়েছে, সেহেতু বিচার-বিশ্লেষণ করে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমাদের একটি জাতীয় সংকট চলছে। আমাদের অনেকদিকে কাজ করা লাগছে। এই দুর্যোগকালীন সময়েও এই সুপারিশ কমিটি সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবে। আনসার ভাইদের যে সমস্যা, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করে একটি যৌক্তিক সমাধানে আমরা পৌঁছাব। তবে, প্রাথমিকভাবে তাদের ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন দাবি নিয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসা আনসার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেন, আমরা উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি খুব আন্তরিক ছিলেন। আমরা দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করছি। কিন্তু আনসার সদস্যদের অন্য একটি অংশ প্রতিনিধি দলের সদস্যদের ঘোষণা অমান্য করে এখনো সচিবালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছেন।
No comments